ফিরোজ দফাদারের পরিবারকে সান্ত্বনা বিমানবসুর।— নিজস্ব চিত্র।
বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুর দু’হাত জড়িয়ে অঝোরে কেঁদে চলেছে বছর তেরোর মেয়েটি। কোনওরকমে কান্না ভেজা গলায় শম্পা দফাদার বিমানবাবুকে আপন খেয়ালে বলে চলে, ‘‘বাবা চলে গেল। আমাদের মাথার উপর আর কেউ রইল না। বাবা চাইতেন পড়াশুনা করে আমরা বড় হই। কিন্তু কে আমাদের পড়াশুনার অর্থ জোগাবে?’’ তাঁর চোখের জলে মুহূর্তের জন্য স্তম্ভিত হয়ে যান বিমানবাবুর মত পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদও। শোকের আবহে পরিবেশটা রীতিমতো ভারি হয়ে ওঠে। মঙ্গলবার বিকেলে নদিয়ার নাকাশিপাড়ার ম্যাচপোতা গ্রামে গিয়ে বিমানবাবুকে এমনই শোকার্ত পরিবেশের মুখোমুখি হতে হল। নিজেকে সামলে নিয়ে প্রবীণ বাম নেতা বিমানবাবু শম্পার মাথায় হাত দিয়ে বললেন, ‘‘চিন্তা করিস না। আমরা তোকে পড়াব।’’
দিন চারেক আগে পড়শি গ্রাম ধনঞ্জয়পুরে একটি গ্রাম্য বিবাদ মিটিয়ে বাড়ি ফেরার পথে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হন ধনঞ্জয়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএমের প্রধান ম্যাচপোতার বাসিন্দা বছর আটত্রিশের ফিরোজ দফাদার। মঙ্গলবার বিকেলে রাজ্য ও জেলা বামফ্রন্টের এক ঝাঁক নেতা-নেত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ম্যাচপোতায় তাঁর বাড়িতে যান বিমান বসু। দফাদার বাড়ির এক চিলতে ঘরে ঢোকেন বাম নেতারা। সমবেদনা জানাতে। নেতাদের দেখে গ্রামেরই হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী শম্পা-সহ কেঁদে ওঠে তার দুই নাবালক ভাইও। সকলেরই এক রা, ‘‘বাবা চাইত আমরা পড়াশুনা করে অনেক বড় হই। কিন্তু অভিভাবকহীন অবস্থায় তা কীভাবে সম্ভব?’’ এর পরই বামফ্রন্টের তরফে মৃতের স্ত্রী সুনিফা বেওয়ার হাতে ২৫ হাজার টাকা তুলে দেন বাম নেতারা। তারপর তিনি বললেন, ‘‘ওঁদের পড়াশুনার দায়িত্ব আমরা নেব। গ্রামের মানুষও ওঁদের পাশে থাকবে। ফিরোজ মানুষের জন্য কাজ করতে গিয়েই প্রাণ হারিয়েছেন।’’ শোকের আবহের মধ্যেই ফুটে উঠল ক্ষোভও। লোকজন খুনোখুনির রাজনীতির বিরুদ্ধে বিমানবাবুর সামনেই ক্ষোভ উগরে দেন। ঘটনার পরপরই মৃতের ভাই ইস্রাফিল দফাদার খুনের মামলা দায়ের করেন। তারপরও পুলিশ অভিযুক্তদের ধরতে নিশ্চেষ্ট বলে অভিযোগ এলাকার লোকজনের। স্বামীহারানোর শোক কোনওরকমে চেপে রেখে সুনিফা বেওয়াও উগরে দেন ক্ষোভ। তিনি বলেন, ‘‘স্বামী খুনীদের পুলিশ ধরছে না।’’ এরপরই তিনি বলেন, ‘‘স্বামীর খুনীদের চরম শাস্তি চাই।’’
দফাদার বাড়ি ছেড়ে সভাস্থলে যান বিমানবাবু-সহ বাম নেতারা। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার মুখে উন্নয়নের কথা বলছে। পঞ্চায়েতের মাধ্যমে ফিরোজ উন্নয়ন করছিলেন। তৃণমূলের লোকজন তা সহ্য করতে না পেরে তাঁকে খুন করল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy