Advertisement
০৫ ডিসেম্বর ২০২৩

স্মৃতি এলেন, স্মৃতি গেলেন, মন ভরল না

বিজেপির জেলা নেতারা শেষ শীতেও দরদর করে ঘামছেন। তখনও তাঁরা বুঝতে পারছেন না, স্মৃতি ইরানির কপ্টার নদিয়ার মাটিতে আদৌ নামতে পারবে কি না।

বিজেপির জনসভায় স্মৃতি ইরানি। বৃহস্পতিবার। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

বিজেপির জনসভায় স্মৃতি ইরানি। বৃহস্পতিবার। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

সুস্মিত হালদার
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:৫২
Share: Save:

বারবেলা তখনও পড়েনি। বিজেপির জেলা নেতারা শেষ শীতেও দরদর করে ঘামছেন। তখনও তাঁরা বুঝতে পারছেন না, স্মৃতি ইরানির কপ্টার নদিয়ার মাটিতে আদৌ নামতে পারবে কি না। তখনও জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে হেলিকপ্টার নামার অনুমোদন মেলেনি। তা যখন তাঁদের হাতে এল, তখন প্রায় পৌনে ১২টা। তড়িঘড়ি তাঁরা রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়ে দিলেন, ‘‘আর কোনও বাধা থাকল না।”

যাঁর আসা নিয়ে বৃহস্পতিবার এত টালবাহানা, এত উদ্বেগ, সেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি যখন এলেন তখন মাঠ ভরে গিয়েছে অনেকটাই। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটে না ঠিকই। তবু অমিত শাহের বদলে স্মৃতিকে দেখেও বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা অনেকেই উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন। কিন্তু তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। মিনিট দশেক বক্তৃতা করার পরেই তড়িঘড়ি মঞ্চ থেকে নেমে যান স্মৃতি। বিজেপি নেতাকর্মীদের তখন মুখ ভার।

স্মৃতি তাঁর বক্তৃতায় যা বললেন, তাতেও নতুন কিছু নেই। এর আগে ঝাড়গ্রামে তিনি যা বলে এসেছেন, কার্যত তারই পুনরাবৃত্তি। সেই বাম আমলে ‘দিদি’র চুল ধরে টানা, সেই কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর ব্রিগেডে এক মঞ্চে ওঠা, সেই মোদী সরকার কত দরাজ হস্তে রাজ্যকে টাকা দিচ্ছে, তার ফিরিস্তি আর বাংলার ‘হিন্দুবিরোধী সরকার’ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ।

সভাপর্ব মিটে যাওয়ার পরে এক বিজেপি নেতা তো বলেই ফেললেন, “যাঁকে আনার জন্য এত পরিশ্রম, প্রশাসনের সঙ্গে এত টানাপড়েন, তাঁকে তো মিনিট পনেরোর বেশি পাওয়াই গেল না! মোদী এলেন না, অমিত শাহ এলেন না। তার বদলে যিনি এলেন তিনিও বুড়ি ছোঁয়া দিয়ে চলে গেলেন।”

হতাশা মাঠে দাঁড়িয়ে থাকা সাধারণ কর্মীদের মধ্যেও। নাকাশিপাড়া থেকে আসা বছর পঞ্চাশের এক কর্মী বলেন, “সামনে কঠিন লড়াই। তৃণমূলের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে টক্কর দিতে হবে। ভাবলাম, দিল্লি থেকে এসে নেত্রী এমন কিছু বলবেন যাতে কর্মীরা আরও সাহসী হয়ে লড়াইয়ের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়বেন। কিছুই হল না!”

বেশ কয়েক দিন ধরেই এই সভা নিয়ে টানবাহানা চলছিল। প্রথমে মাঠ পাওয়া নিয়ে সমস্যা। কৃষ্ণনগর শহরে মাঠ না পেয়ে সভাস্থল যখন বিজেপি পরিচালিত পোড়াগাছা পঞ্চায়েতের সন্ধ্যামাঠপাড়ায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হল, তখন জানা গেল অমিত শাহ আসতে পারছেন না। তাঁর পরিবর্তে আসবেন স্মৃতি ইরানি। তার পরে হেলিকপ্টার নামার জায়গাও পাওয়া গেল না সভাস্থলের কাছাকাছি। শেষে মায়াপুরে ইসকনের হেলিপ্যাডে ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু জেলা প্রশাসন কপ্টার নামতে দেবে কি না, তা নিয়েও দুপুর পর্যন্ত চাপে ছিলেন নেতারা।

দুপুর ১২টা থেকেই কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিজেপি কর্মীরা এসে জড়ো হচ্ছিলেন সন্ধ্যামাঠপাড়ার সভাস্থলে। জেলার গোয়েন্দাদের দাবি, ১১- ১২ হাজার মানুষ সভায় ছিলেন। যদিও বিজেপির দাবি, সংখ্যাটা অন্তত ৫০ হাজার। আগেভাগে চলে এসেছিলেন মুকুল রায় ও রাহুল সিংহ। পরে স্মৃতি ইরানির সঙ্গে আসেন শমীক ভট্টাচার্য। এসেছিলেন মুর্শিদাবাদের হুমায়ুন কবীরও। তবে সময় সংক্ষিপ্ত হওয়ায় কেউই তেমন জমিয়ে বক্তৃতা করতে পারেননি। রাহুল যখন সবে সভা জমাচ্ছেন, তখনই চলে আসেন স্মৃতি। ফলে অল্প কিছু কথা বলে রাহুলকে ইতি টানতে হয়। শমীক ভট্টাচার্যের বক্তৃতাতেও তেমন ঝাঁঝ ছিল না। বিজেপি কর্মীরা যে উৎসাহ নিয়ে সভায় এসেছিলেন, ফেরার সময়ে তা অনেকটাই ম্রিয়মাণ।

বিজেপির নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি মহাদেব সরকারের দাবি, “হেলিকপ্টার নামার অনুমতি পেতে দেরি হওয়াতেই স্মৃতি ইরানির আসতে দেরি হল। আবার ফিরতে হবে বলে বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি।” তবে জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলেন, “ইসকন আগেই ‘নো অবজেকশন’ সার্টিফিকেট পাঠিয়ে দিলেও বিজেপির তরফে বেলা পৌনে ১০টা নাগাদ লিখিত আবেদন করা হয়। আমরা বরং তৎপর হয়ে দু’ঘণ্টার মধ্যে অনুমোদন দিয়ে দিয়েছি।”

প্রথমে রথযাত্রার প্রস্তুতি, মোদী আসছেন বলে নেতাদের আশ্বাস, তার পরে অমিত শাহের আসার প্রচার, শেষে স্মৃতি ইরানির বুড়ি-ছোঁয়া সফর। তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তের কটাক্ষ, ‘‘একেই বলে পর্বতের মূষিক প্রসব!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE