Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Amphan Corruption

‘গৃহহীন’ তৃণমূলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতিও

সংশোধিত তালিকাতেও অনেক দালান কোঠার মালিকের নাম থেকে গিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুস্মিত হালদার
নদিয়া শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০২০ ০১:৪৭
Share: Save:

তিনি কল্যাণ ঢালি। টানা দু’বারের জেলা পরিষদের সদস্য। সেই সঙ্গে তৃণমূলের হাঁসখালি ব্লকের সভাপতিও ছিলেন কয়েক মাস আগেও। তার স্ত্রীও রত্না ঢালি টানা দু’বার বগুলা ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য এবং বর্তমানে প্রধানও। বাংলা আবাস যোজনার তালিকায় তাঁর নাম ‘দরিদ্র’, ‘গৃহহীন’ হিসেবে থাকায় দলের ভিতরেই যথেষ্ট সমালোচনা শুরু হয়েছে। অনেক নেতাকর্মীই মনে করছেন, এতে দলের ভাবমূর্তি আবার ধাক্কা খাবে। বিধানসভা ভোটের আগে যা মোটেই কাম্য নয়।

যদিও কল্যাণবাবুর দাবি, “আমি তো গৃহহীনই। আমি যে পৈতৃক বাড়িতে থাকি সেটা ভাগ বাঁটোয়ারার সময় মেজদার ভাগে চলে গিয়েছে। আমি সেই বাড়িতে আশ্রিত।” তার পরেই তিনি অবশ্য বলছেন, “যদিও ২০১৮ সালেই আমি বিষয়টা জানতে পারার পরই প্রশাসনকে লিখিত ভাবে জানিয়ে দিয়েছিলেম যে, এই ঘর আমরা নেব না। তার পরও কোনও কারণে তালিকা থেকে আমার নাম বাদ যায়নি। এ বার আবার একই কথা লিখিত ভাবে জানিয়ে দেব। কোন ভাবেই এই টাকা আমি নেব না।”

কল্যাণবাবুর এই মন্তব্যের পরেও কিন্তু শাসক দলের অনেক নেতার মত, মানুষ যা বোঝার বুঝছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে অভিযোগ আসছে। আমপান ক্ষতিপূরণ দুর্নীতির মতোই হতে চলেছে বিষয়টি। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১২ সালে ‘সোসিও ইকনমিক কাস্ট সেনসাস’ হয়। সেই সমীক্ষার ভিত্তিতে তৈরি হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা বা বাংলা আবাস যোজনার ‘পার্মানেন্ট ওয়েটিং লিস্ট’। তাতে প্রায় ২ লক্ষ ৬৬ হাজার পরিবারের নাম ওঠে। ২০১৪-১৫ বর্ষে সেই তালিকা প্রাকাশিত হওয়ার পর অভিযোগ ওঠে যে, ঘর পাওয়ার ক্ষেত্রে যোগ্য নয় এমন বহু পরিবারের নাম তালিকায় তুলে দেওয়া হয়েছে। তখন অযোগ্যদের নাম বাদ দিয়ে ১ লক্ষ ৭৫ হাজার পরিবারের নাম নথিভুক্ত হয়। কিন্তু সংশোধিত তালিকাতেও অনেক দালান কোঠার মালিকের নাম থেকে গিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সেই অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১৬-১৭ বর্ষে আবার নতুন করে ‘আবাস প্লাস’ তালিকা তৈরি হয়। পঞ্চায়েতের ‘মোটিভেটর’রা সেই তালিকা মেনে ঘরের ছবি প্রশাসনিক পোর্টালে আপলোড করে দেন। দ্বিতীয়বারের তালিকায় নাম আছে ২ লক্ষ ৯৮ হাজার ২ শো ৫৬ জনের। এত দিন সেই তালিকা প্রাকাশ্য আসেনি। সবটা সামনে এনে দেয় আধার কার্ড। ব্লক থেকে নামের তালিকা জানিয়ে দেওয়া হয় গ্রাম পঞ্চায়েতে। তাতেই মুখ পুড়তে শুরু করেছে শাসক দলের।

বিজেপির রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ জগন্নাথ সরকার বলছেন, “তৃণমূলের নেতা-জনপ্রতিনিধিরা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছেন যে, কোনও ভাবেই তাঁদের দল আর রাজ্যে ক্ষমতায় আসছে না। তাই হাতের সামনে যা পাচ্ছেন লুটে নিচ্ছেন। সেটা আমপানের ক্ষতিপুরণের টাকা হোক বা প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘরের টাকা।” যদিও নদিয়া জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র তথা প্রাক্তন জেলা পরিষদের সভাধিপতি বাণীকুমার রায় বলছেন, “আমার সময়েই এই তালিকা সংশোধনের কাজ শুরু হয়েছিল। নাম থাকলেও যাঁরা যোগ্য নন তাঁরা কোনও ভাবেই ঘরের টাকা পাবেন না। সে যেই হোন না কেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Amphan Corruption
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE