Advertisement
১৮ মে ২০২৪
হোম থেকে পালিয়ে/২

হোমছুটরা আর ঘরে ফেরে না

‘হোম থেকে পালাল কিশোরী’— সংবাদমাধ্যমে চেনা শিরোনাম। কিন্তু কেন মাথার উপর ছাদ, চারটে দেওয়াল, দু’বেলা দু’মুঠো খাবার ফেলে তারা পালাচ্ছে? যে ‘স্বপ্ন’ সত্যি করতে জানলা গলে তারা বেরিয়ে পড়ছে, তা সত্যি হচ্ছে তো? নাকি ফের হারিয়ে যাচ্ছে আরও অন্ধকার আবর্তে? খোঁজ নিল আনন্দবাজার।পিছনে পড়ে রইল হোমের গুমোট ঘর, উঁচু পাঁচিল, টিমটিমে আলো। অন্ধকার ফুঁড়ে ওঁরা ছুটছেন। পাথরে পা ঠুকে রক্তারক্তি। হাঁফাতে হাঁফাতে গলা শুকিয়ে কাঠ।

সুস্মিত হালদার
শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:৪৮
Share: Save:

পিছনে পড়ে রইল হোমের গুমোট ঘর, উঁচু পাঁচিল, টিমটিমে আলো। অন্ধকার ফুঁড়ে ওঁরা ছুটছেন। পাথরে পা ঠুকে রক্তারক্তি। হাঁফাতে হাঁফাতে গলা শুকিয়ে কাঠ। তবুও কেউ থামছেন না। আর একটু পরেই সকাল। আর একটু দূরেই স্টেশন। তারপর ভোঁ দিয়ে ট্রেন ছাড়লেই তো মুক্তি, স্বপ্নপূরণ!

কিন্তু ট্রেনে ওঠার আগেই কেউ কেউ ধরা পড়ে যান। ফের তাঁদের ফিরিয়ে আনা হয় হোমে। আর বাকিরা? স্রেফ হারিয়ে যান। তাঁদের কেউ ফিরতে চান না। কেউ হাজার চেষ্টা করেও ফিরতে পারেন না। ফিরব বললেই কি আর ফেরা যায়!

এমন ভাবেই রাতের অন্ধকারে কৃষ্ণনগরের একটি হোম থেকে পালিয়েছিলেন বছর সতেরোর এক কিশোরী। ট্রেন ধরে সোজা শিয়ালদহ স্টেশন। স্টেশন চত্বরে উদ্দেশ্যহীন ভাবে তাঁকে ঘুরতে দেখে ফাঁদ বিছিয়ে দেয় নারী পাচার চক্রের লোকজন। তারপর নিরাপদ আশ্রয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সোজা সোনাগাছির যৌনপল্লি। পরে অবশ্য দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির সদস্যেরা ওই কিশোরীকে উদ্ধার করে।

কিন্তু সকলের অবস্থা যে এমন হয়, এমন ধরে নেওয়ারও কোনও কারণ নেই। যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করা ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ভারতী দে বলছেন, ‘‘সবাই তো আর আমাদের নজরে পড়ে না। ওত পেতে থাকা পাচারচক্রের লোকজনের সক্রিয়তায় তারা আমাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যায়।”

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা জানাচ্ছেন, অনেক নাবালিকাকে যৌনপল্লি থেকে উদ্ধার করে হোমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তাদের কেউ কেউ হোমের সেই বদ্ধ পরিবেশ মেনে নিতে না পেরে ফের পালিয়ে আসে যৌনপল্লিতেই। এমন নজিরও আছে।

সম্প্রতি হোম থেকে পালাতে গিয়ে ধরা পড়ে গিয়েছিলেন মুর্শিদাবাদ হোমের এক তরুণী। তিনি বলছেন, ‘‘কেন পালাব না বলুন তো? এরা খেতে দেয় না, শীতের পোশাক দেয় না। কিছু বললেই মারধর করে। এর থেকে আগের জীবনেই কষ্ট অনেক কম ছিল। দু’বেলা অন্তত পেট ভরে খেতে পেতাম।’’

নদিয়ার শিশু কল্যাণ কমিটির চেয়ারপার্সন রিনা মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘হোম থেকে পালানো বেশির ভাগ মেয়েরাই কিন্তু হারিয়ে যায় অন্ধকারে। চেষ্টা করেও তারা আর ফিরতে পারে না। স্বপ্নপূরণ তো হয়ই না। উল্টে ফাঁদকে আশ্রয় বলে ভুল করে বসেন তাঁদের অনেকেই।’’

মুর্শিদাবাদের সমাজকর্মী খদিজা বানু বলেন, ‘‘হোমের হতশ্রী চেহারা ও কর্মীদের আন্তরিকতার ঘাটতির কারণে আবাসিকদের মধ্যে পালিয়ে যাওয়ার প্রবণতা কাজ করে এবং সুযোগ পেলে পালিয়েও যায়। প্রশাসনের উচিত বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা।’’

কিন্তু হোমছুটদের মন বুঝতে প্রশাসনের আরও কত সময় লাগবে?

(চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Home Child
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE