নদীতে পিকনিক। নিজস্ব চিত্র
পয়লা জানুয়ারির সকাল। খানাপিনা মজুত করে ঘাট থেকে নৌকা ছেড়েছিল। নদীর বুকে দিনভর পিকনিক। নৌকাতেই গানের তালে উদ্দাম নাচ। নাচতে নাচতেই বেসামাল হয়ে নৌকা থেকে নদীতে পড়ে যান সুশীল দাস। নবদ্বীপের চরব্রহ্মনগরের ওই যুবকের দেহ মেলে দু’দিন পরে। বছর কয়েক আগের ঘটনা। কিন্তু এখনও নদীতে পিকনিকের কথা উঠলে অনেকেই মনে করিয়ে দেন, ‘‘সুশীলের কী হয়েছিল মনে আছে নিশ্চয়।’’ শুধু নবদ্বীপ নয়, নদিয়া মুর্শিদাবাদের গঙ্গা, পদ্মা, জলঙ্গির বুকে পিকনিক মরসুমে অঘটনও বড় কম ঘটে না।
তবুও শীতের মরসুমে নদীর বুকে বেপরোয়া পিকনিক বন্ধ হয় না। পৌষ পড়লেই নৌকাভাড়া করে পিকনিকে যাওয়ার ধুম পড়ে যায়। পিকনিকে ঢালাও খানাপিনার সৌজন্যে টলোমলো হয় নৌকা। কুয়াশা ভেঙে সে নৌকা ঘরে না ফেরা পর্যন্ত উদ্বিগ্ন থাকেন বাড়ির লোকজন।
শীতের মিঠে রোদ গায়ে মেখে নদীর বুকে নৌকায় ভেসে পিকনিকে মজেছে মুর্শিদাবাদ ও নদিয়া। পর্যটকদের মধ্যেও নৌকা করে পিকনিকের রেওয়াজ ক্রমশ বাড়ছে। কিন্তু ভাগীরথীর বুকে নৌকা নিয়ে এ ভাবে পিকনিক করা কতটা নিরাপদ তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। শীতকাল হলেও নদীতে এখন যথেষ্ট জল। অন্যদিকে নৌকা ভাড়া নেওয়ার সময় যা সদস্য সংখ্যা বলা হয়, পরে দেখা যায় সদস্যের সংখ্যা অনেক বেড়ে গিয়েছে। শেষ মূহূর্তে নৌকায় পিকনিক দলের সদস্যদের না নিলে সমস্যা। সব মিলিয়ে পুরো ব্যাপারটাই চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। নদিয়ার নবদ্বীপ, স্বরূপগঞ্জ বা মায়াপুর থেকে নৌকা ভাড়া করে গঙ্গা ধরে পূর্বস্থলীর দিকে পাখিরালয়, শঙ্খপুরের চর, চুপির চর কিংবা জলঙ্গী ধরে কৃষ্ণনগর, কেউ আবার নবদ্বীপ থেকে গৌরাঙ্গ সেতুর তলা দিয়ে সমুদ্রগড়ের দিকে চলে যান। সতর্কতা হিসাবে ইদানিং পুলিশের পক্ষ থেকে প্রতি বছর স্থানীয় খেয়াঘাটগুলির কর্তৃপক্ষদের পিকনিকের জন্য নৌকা ভাড়া দিতে নিষেধ করা হয়।
কিন্তু দেশে কি নৌকার অভাব? হাজার দুয়েক টাকাতেই মিলছে সারাদিনের নৌকা। অনেকেই ব্যক্তিগত নৌকা ভাড়া দিয়ে পিকনিকের মরসুমে দু’পয়সা রোজগার করেন। সেখানে নিয়মও মানেন না কেউ। নবদ্বীপ জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতির এক কর্তা জানাচ্ছেন, পিকনিকের মরসুমে তাঁরা নৌকা ভাড়া দেন না। কিন্তু ব্যক্তিগত নৌকার ক্ষেত্রে নিরাপত্তার সমস্ত দিকগুলি ঠিক ভাবে মানা হচ্ছে কই? মুর্শিদাবাদের ‘গঙ্গা বোটম্যান রিভার ফেরি সার্ভিস’-এর অধীনে রয়েছে বহরমপুরের রাধারঘাট, রিফিউজি ঘাট, খাগড়াঘাট, নিয়াল্লিশপাড়া, ফরাসডাঙা ঘাট এবং লালবাগের সদরঘাট ও সাহানগর ঘাট। সংস্থার সম্পাদক বলরাম ঘোষের দাবি, প্রশাসন উদ্যোগী হওয়ায় নৌকায় লাইফ জ্যাকেট ও টিউব থাকছে। তবে তাঁদের সংস্থার অধীনে থাকা ফেরিঘাটের নৌকা ভাড়া নিলে লাইফ জ্যাকেটের পাশাপাশি টিউব থাকে। দু’জন দক্ষ মাঝিও রাখা হয়। বলরামবাবু বলছেন, ‘‘বড় নৌকায় ৫০ জনের বেশি যাত্রী তুলি না। ডিজে বাজানো যায় না। মদ্যপানেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।’’
লালবাগের হাজারদুয়ারি নৌকা সমবায় সমিতির এত কড়াকড়ি নেই। সেখানে লাইফ জ্যাকেট বা টিউব কিছুই নেই। সংস্থার সদস্য ভোলা হালদারের দাবি, নৌকায় বাড়তি যাত্রী তোলা হয় না। দুই জেলার পুলিশ কর্তাদের দাবি, পিকনিক মরসুমে নদীতে কড়া নজর রাখা হচ্ছে। যা শুনে নদীপাড়ের বাসিন্দারা বলছেন, ‘‘কই, আমাদের নজরে তো পুলিশ পড়ে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy