Advertisement
E-Paper

বোমাবাজিতে অতিষ্ঠ সুন্দরপুর, উদাসীন পুলিশ

রাস্তা আছে। বাজার আছে। বাসস্ট্যান্ড আছে। আছে বিদ্যুতের ব্যবস্থাও। তবুও সন্ধ্যা নামলেই সুনসান হয়ে যায় বড়ঞার সুন্দরপুর। সন্ধে নামতে না নামতেই বাড়িতে ঢুকে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা। দিনের পর দিন যে হারে বোমাবাজির ঘটনা ঘটছে তাতে সন্ধ্যার পরে বাড়ির বাইরে পা রাখতে ভরসা পাচ্ছেন না আট থেকে আশি কেউই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৫ ০১:৪৪

রাস্তা আছে। বাজার আছে। বাসস্ট্যান্ড আছে। আছে বিদ্যুতের ব্যবস্থাও। তবুও সন্ধ্যা নামলেই সুনসান হয়ে যায় বড়ঞার সুন্দরপুর। সন্ধে নামতে না নামতেই বাড়িতে ঢুকে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা। দিনের পর দিন যে হারে বোমাবাজির ঘটনা ঘটছে তাতে সন্ধ্যার পরে বাড়ির বাইরে পা রাখতে ভরসা পাচ্ছেন না আট থেকে আশি কেউই। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, তৃণমূল আশ্রিত সমাজবিরোধীদের দু’পক্ষের বোমার লড়াইয়ে সন্ধের পর বাড়ির বাইরে পা রাখাই দায়। প্রায় দিনই কোনও না কোনও কারণে বোমাবাজি ঘটছে। আর তাতেই চটেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, পুলিশকে বার বার জানিয়েও কোনও লাভ হয় না। যদিও জেলার পুলিশ সুপার সি সুধাকরের আশ্বাস, “প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” কিন্তু পুলিশ সুপারের ওই আশ্বাসে ভরসা রাখতে পারছেন না কেউই। আর গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূলের বড়ঞা ব্লক সভাপতি জালালউদ্দিন আফাজ বলেন, “বিরোধীদের শিখিয়ে দেওয়া বুলি আওড়াচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।” তাঁর দাবি, “শুধু বড়ঞা ব্লক কেন মুর্শিদাবাদ জেলা জুড়ে তৃণমূলের কোনও গোষ্ঠীকোন্দল নেই। এটা আমি জোর দিয়ে বলতে পারি।”

ঘটনার সূত্রপাত গত মঙ্গলবার। ওই দিন হলদিয়া-ফরাক্কা বাদশাহী সড়কের ধারে অবস্থিত সুন্দরপুরে দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে বোমাবাজির ঘটনা ঘটে। টানা তিন দিন ধরে তা চলছে। পুলিশ কোনও দুষ্কৃতীকে ধরতে না পারলেও ঘটনাস্থল থেকে বেশ কয়েকটি তাজা বোমা উদ্ধার করেছে। ওই দিন রাতে পুলিশি টহলদারি থাকায় রাতে কোনও বোমাবাজির ঘটনা না ঘটলেও পর দিন দুপুরে ফের বোমাবাজি শুরু হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও কাউকে ধরতে পারেনি। এ দিকে ওই ঘটনায় গোটা এলাকা জুড়ে নেমে এসেছে আতঙ্কের পরিবেশ। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক গ্রামবাসী বলেন, “দিনের পর দিন বোমাবজির ঘটনায় আমরা অতিষ্ঠ। তবুও কাউকে কিছু বলা যাবে না।” স্থানীয় এক শিক্ষকের কথায়, “এটা তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দলের কারণেই যে ঘটছে সেটা পুলিশ ভাল ভাবেই জানে। বাজারে তোলাবাজি করাকে কেন্দ্র করে গণ্ডগোল করে সুন্দরপুরের বাজারটাকেই শেষ করে দিচ্ছে ওরা। পুলিশকে কিছু বললে তাদের কিছু করার নেই বলে দায় সারে।” ওই এলাকায় একটি উচ্চ বিদ্যালয় আছে। দু’টি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। আগেকার থেকে এখন শিক্ষার হার অনেক বেড়েছে। এমন ঘটনা নিয়মিত ঘটতে থাকলে এলাকার ছাত্রছাত্রীদের বর্তমান যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলার পথে হোঁচট খেতে হবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন ওই শিক্ষক।

বড়ঞা ব্লকের কুলি, ডাকবাংলা, পাঁচথুপী বাজারের মতোই সুন্দরপুর বাজার দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আশেপাশের গ্রামের মানুষজন ওই বাজারেই ভিড় করেন। অথচ এলাকায় তোলাবাজদের অত্যাচারে ক্রেতা-বিক্রেতা সকলেই আতঙ্কে থাকেন। বছর তিনেক আগেও সন্ধ্যার সময় গমগম করত বাজার। এখন সন্ধে নামলেই সুনসান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, “আগে তৃণমূল আশ্রিত সমাজবিরোধীদের একটাই গোষ্ঠী ছিল। মাস ছয়েক আগে ওই গোষ্ঠীটি ভেঙে যায়। তারপর থেকে দুটি গোষ্ঠী একে অপরকে ক্ষমতা দেখাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।”

যদিও পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের নজরুল হকের দাবি, “ওই বোমাবাজির ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই। ও সব সমাজবিরোধীদের কাজ।” তবে এলাকায় নিয়মিত বোমাবাজির ঘটনায় এলাকার সাধারণ মানুষ যে আতঙ্কিত সে কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, “আমি পুলিশকে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলব।” কান্দি মহকুমা কংগ্রেসের সভাপতি দেবাশিস চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সুন্দরপুর সমাজবিরোধীদের আতুঁড়ঘর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তোলাবাজিকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের দু’গোষ্ঠীর মধ্যে নিয়মিত বোমাবাজির ঘটনা ঘটে। যেহেতু তৃণমূল ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাই পুলিশ হাত গুটিয়ে বসে আছে।” সিপিএমের বড়ঞা জোনাল কমিটির সম্পাদক আনন্দ ঘোষ বলেন, “দীর্ঘদিন ধরেই সুন্দরপুরে বোমাবাজির ঘটনা ঘটছে। কিন্তু পুলিশ কোনও ব্যক্তিকে গ্রেফতার করছে না।” যদিও পুলিশের ভূমিকায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বড়ঞা ব্লক তৃণমূলের সভাপতি জালালউদ্দিন আফাজ। তিনি বলেন, “সুন্দরপুরে পুলিশ যথেষ্ট সক্রিয়। তবে ওই ঘটনার সঙ্গে তৃণমূল জড়িত নয়। যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশকে বলেছি।”

মুর্শিদাবাদ জেলার পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, “পুলিশ কান্দি মহকুমা থেকেই সপ্তাহ খানেকের মধ্যে প্রায় ৪০টি তাজাবোমা উদ্ধার করেছে। কয়েক জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।” তিনি বলেন, “কোথায় থেকে বোমা আসছে সেটা আমরা তদন্ত করে দেখছি।”

sundarpur bombing kandi Murshidabad tmc trinamool primary school police haldia
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy