দীর্ঘদিনের দাবি মেনে তৈরি কাঠের সেতুটি। ওই সেতুই ডোমকল শহরের দুই প্রান্তকে এক সুতোয় গেঁথেছিল। ফলে এলাকার মানুষের ভাষায় তা হল ‘মিলন সেতু’।
ডোমকল মিনি বাজার থেকে রসুলপুর এলাকার দূরত্বটাও কমেছিল অনেকটা। সেতুর গুরুত্বও ছিল অপরিসীম। কারণ, ডোমকল শহরের বিকল্প ব্রিজ হিসেবে সেটিই ছিল এক মাত্র পারাপারের পথ। ফলে শুরুতে এই কাঠের তৈরি ব্রিজ নিয়ে আবেগের সীমা ছিল না। প্রথমে মোটরবাইক, সাইকেল এবং হাঁটাপথে মানুষ ওই সেতু পার হতেন। পরে একটা সময় ভেঙে পড়ে সেতুটি। কোনওক্রমে সংস্কার হয়। তারপর থেকে মোটরবাইক চলাচল বন্ধ।
কিন্তু এখন ওই শীর্ণ সেতু দিয়ে লোকজন হেঁটেও পার হতে পারে না। ভগ্নপ্রায় ওই সেতুটি মেরামতির জন্য এলাকার লোকজন অনেকদিন ধরে প্রশাসনের দোরে দোরে ঘুরছেন। সব জায়গা থেকেই মিলছে ভুরি ভুরি প্রতিশ্রুতি। কিন্তু সেতুর স্বাস্থ্য ফেরাতে কেউই উদ্যোগী হচ্ছেন না। ফলে ডোমকল শহরের দু’প্রান্তের মানুষ দুর্দশা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে।
সাধারণ মানুষের দাবি, ডোমকলে রাজ্য সড়কের উপরে যে ব্রিজটি আছে সেটিও খুব দুর্বল। তাছাড়া দিনের প্রায় বেশিরভাগ সময়ে ভিড় জমে সেই ব্রিজে। সংস্কারের জন্য ব্রিজটি কিছুদিন বন্ধ ছিল। ওই সময় লোকজনকে কষ্ট সহ্য করতে হয়। কিন্তু তখন ‘মিলন সেতু’ সবল থাকলে শহরের দু’পারের মানুষের যাতায়াতে কোনও সমস্যা হত না। প্রশাসনের দাবি, পুরসভা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ওই ‘মিলন সেতু’কে সারিয়ে তুলবে। কবে তা বাস্তবায়িত হবে? এ প্রশ্নের কোনও জবাব নেই প্রশাসনের কর্তাদের কারও কাছে।
বাম আমলে বিধায়ক স্থানীয় সিপিএমের আনিসুর রহমানের উদ্যোগে তৈরি হয়েছিল ব্রিজটি। তাঁর কথায়, ‘‘ওই ব্রিজ সংলগ্ন এলাকার বাজার তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছিল সেই সময়ে। আমাদের ইচ্ছে ছিল, ওই ব্রিজটিকে কংক্রিটের করা হবে। কারণ, ডোমকল শহরকে ভাগ করেছে শেয়ালমারি নদী। এই নদীর এক পাড়ে মূল বাজার থেকে মহকুমাশাসকের করণ। আর অন্যপাড়ে বিডিও অফিস থেকে মহকুমা হাসপাতাল।
আর এর মাঝে রাজ্য সড়কে একটি মাত্র ব্রিজ। ফলে এই ব্রিজটির গুরুত্ব অনেক।’’ ব্রিজ লাগোয়া এলাকায় তৈরি করা হয়েছিল মার্কেটিং কমপ্লেক্স। জমি লিজ নিয়ে উঁচু করে মাটি ফেলে বাজার তৈরিরও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল পঞ্চায়েত সমিতির তরফে। কথা ছিল মাছ থেকে সব্জি বাজার বসবে সেখানেই।
কিন্তু সেই স্বপ্ন আর বাস্তবায়িত হয়নি। পঞ্চায়েত সমিতি, গ্রাম পঞ্চায়েত বামেদের হাতছাড়া হতেই থমকে যায় সব কাজ। বিরোধীদের দাবি, তারপর সিপিএম পঞ্চায়েতে বিরোধী দলে বসে উন্নয়নের বিরোধীতা করতে থাকে। ফলে গোটা বিষয়টি থমকে যায়। ডোমকলের পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি প্রদীপ চাকি বলেন, ‘‘কেবল রাজনীতির জাঁতাকলে পড়ে আজও ওই ব্রিজের হাল ফিরল না। ব্রিজটি তৈরি হলে ডোমকলের উন্নয়ন অন্য খাতে বইত। এখন ওই ব্রিজটি পুর এলাকার অর্ন্তভুক্ত। পুরসভার উচিৎ প্রথমেই ওই কাজে হাত দেওয়া।’’
ব্রিজটি তৈরি হলে ডোমকল মধ্য বাজারের যানজটের সমস্যা মিটত। রাস্তার দু’পারে ওই বাজার বসে। সব্জি বিক্রেতাদের ক্রমেই রাস্তা দখল করে কারবার চালাচ্ছেন। ব্যবসায়ী মিলন মণ্ডলের কথায়, ‘‘ব্রিজটি তৈরি হওয়ার ফলে আমরা স্বস্তি পেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম এবার হয়ত আমাদের দুরবস্থা দূর হবে। এখন ওই ব্রিজের হাল দেখে কান্না পায়।’’
জিতপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান রাফিজুল ইসলামের কথায়, ‘‘বছর সাতেক আগে পঞ্চায়েতের তরফে ব্রিজটি সংস্কার করেছিলাম। কিন্তু তারপরে আর কেউ ওই ব্রিজের সংস্কারের ব্যাপারে উদ্যোগী হয়নি।’’ ডোমকলের মহকুমাশাসক তাহিরুজ্জামান বলেন, ‘‘বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। খুব দ্রুত ওই সেতুর সংস্কার করা হবে।’’