Advertisement
E-Paper

জমি জট কেটে গিয়ে এক হচ্ছে জলঙ্গির দুই পাড়

দীর্ঘদিন ধরে এক হতে চাইছিল দু’টি পাড়। কিন্তু বাদ সাধছিল জমি জট। আর সেই কারণেই থমকে ছিল সেতু তৈরির কাজ। সম্প্রতি জেলা পরিষদের উদ্যোগে সেই জমি জট কেটে যাওয়ায় ফের নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে নদিয়ার থানারপাড়া ও মুর্শিদাবাদের নওদা।

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:০৪
কাজ শুরুর অপেক্ষায়। — নিজস্ব চিত্র

কাজ শুরুর অপেক্ষায়। — নিজস্ব চিত্র

দীর্ঘদিন ধরে এক হতে চাইছিল দু’টি পাড়। কিন্তু বাদ সাধছিল জমি জট। আর সেই কারণেই থমকে ছিল সেতু তৈরির কাজ। সম্প্রতি জেলা পরিষদের উদ্যোগে সেই জমি জট কেটে যাওয়ায় ফের নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে নদিয়ার থানারপাড়া ও মুর্শিদাবাদের নওদা। জেলা প্রশাসনের দাবি, ওই সেতু তৈরি হওয়া এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। নদিয়ার জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলেন, “জমির সমস্যা আর নেই। অভাব নেই টাকারও। এ বার

আমরা যত দ্রুত সম্ভব সেতুটা তৈরি করে ফেলব।”

এক পাড়ে থানারপাড়ার ফাজিলনগর, অন্য পাড়ে মুর্শিদাবাদের আমতলা। মাঝখানে বয়ে গিয়েছে তিরতিরে জলঙ্গি। সেই নদীর উপর দিয়ে একটা সেতু হোক—দীর্ঘ দিন ধরে এমন দাবি জানিয়ে আসছিলেন দু’পাড়ের মানুষ। সেই মতো ২০০৭-০৮ সাল থেকে একটি সেতু তৈরির ব্যাপারে উদ্যোগী হয় নদিয়া জেলা প্রশাসন। ২০০৯ সালে টেন্ডার ডাকা হয়। কাজও শুরু হয় ২০১০ সালে। সেতুটির দৈর্ঘ্য ১৮৫.৫ মিটার ও চওড়া ১১.২ মিটার। মোট খরচ ধরা হয় প্রায় ১১ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা। সেই মতো কাজ শুরু করে পূর্ত দফতরের নদিয়া হাইওয়ে-১ ডিভিশন।

কিন্তু নদীর দু’পারেই সেতুর সংযোগকারী রাস্তা তৈরির জন্য জমি নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়। কারণ, তাঁদের দাবি মতো টাকা ও বিকল্প জমি না দেওয়া হলে কৃষকেরাও জমি দেবেন না বলে জানিয়ে দেন। থমকে যায় সেতু তৈরির কাজ। জমি জটিলতায় কাজ অনিশ্চিত হয়ে পডে। ২৫ শতাংশ কাজ হওয়ার পরে ২০১৪ সালে কাজ পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় নির্মাণ সংস্থা। যার জন্য খরচ হয়ে গিয়েছে প্রায় আড়াই কোটি টাকা।

এই পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসনের তরফে দফায় দফায় কৃষকদের সঙ্গে আলোচনার পরেও কোনও সমাধানের পথ বেরোয়নি। ফাজিলনগরের দিকে মোট ৩.৫৬ একর জমি প্রয়োজন। তার জন্য ৩৪ জন কৃষকের কাছ থেকে জমি নিতে হবে। যাঁদের অনেকের জমিই সরকারের কাছ থেকে পাট্টা নেওয়া। শেষ পর্যন্ত কৃষকদের দাবি মেনেই জেলা প্রশাসন শতক প্রতি ৫৩ হাজার একশো টাকা করে দাম দিতে রাজি হয়। এবং জলঙ্গির চরে জমিদাতাদের কেনা জমির তিন গুণ খাস জমি দিতে রাজি হয়। তারপরেই জমি জট কেটে যায়।

সম্প্রতি ফাজিলনগর এলাকায় জমিও কিনেছে জেলা পরিষদ। টাকা দিয়েছে পূর্ত দফতর। নদিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি বাণীকুমার রায় বলেন, “আমাদের দিকের জমি কেনা হয়ে গিয়েছে। সেই জমি দ্রুত পূর্ত দফতরকে হস্তান্তর করা হবে। আমরা মুর্শিদাবাদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছি।” আর মুর্শিদাবাদের জেলা পরিষদের সদস্য তৃণমূলের মোশারফ হোসেন বলেন, “আমরাও ১৮৪ শতক জমি চিহ্নিত করে ফেলেছি। টাকাও এসে গিয়েছে। দ্রুত জমি কিনে হস্তান্তর করে দেওয়া হবে।”

এতদিন কাজ আটকে থাকার ফলে সেতু তৈরির খরচও অনেকটা বেড়ে গিয়েছে বলে দাবি পূর্ত দফতরের। ১১ কোটি ২৫ লক্ষের কাজ এখন বেড়ে গিয়ে প্রায় সাড়ে ১৬ কোটি টাকা হবে বলে মনে করছেন ইঞ্জিনিয়ররা। এই সেতু হয়ে গেলে বহু সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করেন দুই পাড়ের লোকজন।

ফাজিলনগর, লালনগর-সহ নদিয়ার বেশ কিছু গ্রামের লোকজনের হাট-বাজার, হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ বলতে ভরসা নদীর ও পাড়ের আমতলা বা বেলডাঙা। প্রতিদিন তাই ঝুঁকি নিয়ে তাঁদের নদী পারাপার করতে হয়। সমস্যা বাড়ে অসুস্থদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও। ভরা বর্ষায় সেই বিপদ আরও বেড়ে যায়। সেতুটা হলে সেই সমস্যা আর থাকবে না বলেই মনে করছেন সকলে।

জমির মালিক মোসলেম মণ্ডল বলেন, “আমরা তো জমি দিতেই চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রথম দিকে কেউ তেমন ভাবে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেনি। এখন দাবি মতো দাম পাচ্ছি। জমি না দেওয়ার তো কোনও কারণ নেই।” নওদার ব্যবসায়ী সফিকুল মালিথ্যা বলেন, “সেতুটা হওয়া খুবই দরকার। সেটা হয়ে গেলে যাতায়াত যেমন সহজ হবে, তেমনই দু’পাড়ের ব্যবসায়ীরাও লাভবান হবেন।”

পূর্ত দফতরের নদিয়া হাইওয়ে-১ ডিভিশনের সহকারি বাস্তুকার শেখরপ্রিয় সরকার বলেন, “সেতু তৈরির জন্য আমরা সবরকম ভাবে তৈরি। জমি হাতে পেলেই নতুন করে টেন্ডার ডেকে কাজ শুরু করে দিতে পারব।”

সহ প্রতিবেদন— সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়।

Jalangi Bridge
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy