Advertisement
E-Paper

ভাঙা ট্যাপ, ফাটা পাইপ বান ডেকেছে লালগোলায়

বৃষ্টি হোক বা না হোক, লালগোলার স্টেশন রোড দেখে মনে হবে পদ্মার পাড় উজিয়ে আসা বানের জলেই বুঝি ভাসছে রাজপথ। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের (পিএইচই) পানীয় জলের পাইপ ফেটে এই দশা। সেই জল ভেঙেই ১৮ দিন ধরে হাঁটতে হচ্ছে পথচারীদের। লক্ষ লক্ষ গ্যালন জল অপচয় হচ্ছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৬ ০১:১৫
পাইপ ফেটে জল জমেছে রাস্তায়।— নিজস্ব চিত্র।

পাইপ ফেটে জল জমেছে রাস্তায়।— নিজস্ব চিত্র।

বৃষ্টি হোক বা না হোক, লালগোলার স্টেশন রোড দেখে মনে হবে পদ্মার পাড় উজিয়ে আসা বানের জলেই বুঝি ভাসছে রাজপথ। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের (পিএইচই) পানীয় জলের পাইপ ফেটে এই দশা। সেই জল ভেঙেই ১৮ দিন ধরে হাঁটতে হচ্ছে পথচারীদের। লক্ষ লক্ষ গ্যালন জল অপচয় হচ্ছে।

জলের তোড়ে ওই এলাকার প্রায় ৫০ ফুট দীর্ঘ সড়কপথের পিচ-পাথর উঠে গিয়ে বেহাল দশা। প্রতিকার চেয়ে ভুক্তভোগী স্থানীয় বাসিন্দারা বিডিওর কাছে লিখিত ভাবে দরবার করেছেন সপ্তাহ দুয়েক আগে। তবুও হেলদোল নেই প্রশাসনের। তাঁরা বরং ব্যস্ত লক্ষ-লক্ষ টাকা খরচ করে ‘জল ধরো, জল ভরো’ লেখা ছাপানো পোস্টার বিলি করতে।

কেবল স্টেশন রোড নয়, মাটির তলায় পাতা পানীয় জলের পাইপ ফেটে লালগোলার শ্রীমন্তপুর-সারস্বত কুঞ্জ ও ফকিরপাড়া কবরস্থান লাগোয়া এলাকারও একই দশা। ওই দু’টি জায়গাতেও পাইপ ফেটে জলের ফোয়ারা ছুটছে। চামাপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় লাগোয়া এলাকায়, ফকিরপাড়ায়, পুরনো লালগোলা বাসস্টপ-রাধাবাগ মোড়ে, নতুন বাস টার্মিনাসের কাছে এবং সিপিএমের লালগোলা জোনাল অফিসের পাশের জলকলগুলিতে ট্যাপ না থাকায় মাসের পর মাস অবাধে জল পড়ে যথেচ্ছ অপচয় ঘটছে। মেরামতির ব্যাপারে কোনও হেলদোল নেই।

লালগোলা স্টেশন রোড থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে প্রয়াত মন্ত্রী, কংগ্রেস নেতা আব্দুস সাত্তারের বাড়ি। তাঁর ছেলে আবু হেনা ২৫ বছর ধরে এলাকার বিধায়ক, জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ। প্রয়াত মন্ত্রীর নাতি মুর্তুজা হোসেন বকুল ও বর্তমানে জেলা পরিষদের সদস্য, মন্ত্রীর নাতনি তুহিন পারভিনের বাড়িও একই জায়গায়।

ওই তিন জনপ্রতিনিধির বাড়ি লাগোয়া তহবাজার, গোল্ডেন ক্লাব ও মিনিস্টার রোডে তিনটি জলকলে ট্যাপ না থাকায় মাসের পর মাস অবাধে জল পড়ে যথেচ্ছ অপচয় হচ্ছে। কিন্তু তিন জনের কারও এ হেন জনস্বার্থের বিষয়ে কোনও হেলদোল নেই। জল অপচয়ের পাশাপাশি চরম অব্যবস্থার কারণে চরম জলকষ্টে ভুগছেন লালগোলার অন্য এলাকার মানুষ। কৃষ্ণপুর নেতাজি মোড়ের বাসিন্দা রতন ঘোষ বলেন, ‘‘সি আর দাসের ডাক্তারখানা থেকে কৃষ্ণপুর কালীমন্দির পর্যন্ত এবং নেতাজি মোড় থেকে হাসপাতাল মোড় লাগোয়া টিকটিকিপাড়া পর্যন্ত মোট দু’টি রাস্তা মিলিয়ে প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকার পাইপ লাইন আবর্জনায় বন্ধ। ফলে কয়েক মাস ধরে ওই এলাকায় জল সরবরাহ বন্ধ। দীর্ঘদিন ধরে কৃষ্ণপুর হাসপাতাল মোড়, নেতাজি মোড়, কৃষ্ণপুর স্টেশন মোড়, পুরোনো বাসস্টপ এলাকায় জলের ট্যাপ ভাঙাচোরা হয়ে পড়ে রয়েছে। তার জেরে কয়েক হাজার মানুষ জলকষ্টে ভুগছেন।’’

জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ, প্রয়াত মন্ত্রীর নাতি মুর্তুজা হোসেন বকুলের বক্তব্য, ‘‘ওই জল প্রকল্পটি বহু আগে পঞ্চায়েত সমিতিকে হস্তান্তর করেছে পিএইচই। ফলে তার দেখভালের কথা পঞ্চায়েত সমিতির নির্বাহী আধিকারিক হিসাবে বিডিও-র। কিন্তু তিনি বিরোধী দলের জনপ্রতিনিধিদের কথা কানে নেন না বলেই লালগালায় জল নিয়ে চরম সঙ্কট।’’ কংগ্রেসের দখলে থাকা লালগোলা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান অজয় ঘোষ বলেন, ‘‘জলের পাইপ ফাটলে এক-দু’মাসের আগে সারানো হয় না। ফলে জলে ভেসে গিয়ে লালগোলা শহরের পিচ-পাথরের অধিকাংশ রাস্তা চলাচলের অযোগ্য হয়ে উঠেছে। এই বিষয়ে লালগোলার বিশিষ্টজনেরা বিডিও-কে বলেছেন। তবুও তাঁর হেলদোল নেই।’’

কংগ্রেসের দখলে থাকা লালগোলা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দীপশি‌খা হালদার বলেন, ‘‘নির্বাচনী বিধির জুজু দেখিয়ে এতদিন বিডিও পানীয় জলের মতো জরুরি পরিষেবা থেকে লালগোলার মানুষকে বঞ্চিত রেখেছেন। এ বার যে ভাবেই হোক সমস্যার সমাধান করা হবে।’’ ১৯৭৬ সালে প্রয়াত মন্ত্রী আব্দুস সাত্তারের আমলে প্রতিষ্ঠিত হয় ওই জল প্রকল্পটি। জলাধারে ১ লক্ষ ৬৮ হাজার গ্যালন জল ধরে। সেই জলাধারটি এক দশক ধরে পরিষ্কার করা হয়নি বলে জানিয়েছেন লালগোলার জল সরবরাহ করা পাইপ লাইন মেরামতির দায়িত্বপ্রাপ্ত মিস্ত্রি আজিজুল হক। অব্যবস্থার জন্য তিনিও বিডিও-কেই দায়ী করেছেন। আজিজুল বলেন, ‘‘পাইপ লাইন মেরামতি বাবদ গত নভেম্বর থেকে ৮০ হাজার টাকার বিল আটকে রেখেছেন বিডিও। ওই অবস্থায় নতুন করে মেরামতির কাজ করি কী করে!’’

লালগোলা জল প্রকল্পে তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার নুর নবি বলেন, ‘‘লালগোলা, সাগরদিঘি ও ভগবানগোলা মিলে ৩টি ব্লকের জল প্রকল্পের দায়িত্বে আমি। ফলে সব খুঁটিনাটি বিষয় একা আমার পক্ষে দেখভাল করার সময় কোথায়?’’ তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ পাশ কাটিয়ে গিয়ে বিডিও স্বপ্নজিৎ সাহা বলেন, ‘‘বহু প্রাচীন এই জলপ্রকল্প বর্তমানের প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম নয়। অনেক কিছুই খারাপ হয়ে গিয়েছে। সময়োপযোগী জলপ্রকল্প গড়ে তুলতে নতুন একটি প্রকল্পের প্রস্তাব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।’’

সেই প্রস্তাবের সঙ্গে ট্যাপহীন কল থেকে অবাধে জল অপচয় বন্ধের ও ফাটা পাইপ লাইনের সংস্কারের সম্পর্ক কোথায়? বিডিও বলেন, ‘‘দক্ষ কর্মী আর ইঞ্জিনিয়রের অভাব। দ্রুত সংস্কারের চেষ্টা চলছে।’’

পাচারে ধৃত। স্ত্রী ও দূর সর্ম্পকের শ্যালিকাকে বিক্রি করার অভিযোগে এক যুবককে গ্রেফতার করল বেলডাঙা থানার পুলিশ। ধৃত হাবিবুর রহমান ওরফে রাজুর বেলডাঙার কাপাসডাঙার বাসিন্দা। অভিযোগ, সে স্ত্রী ও নাবালিকা শ্যালিকাকে কোচবিহারের যৌনপল্লিতে বিক্রি করেছে। পুলিশ ওই দু’জনকেই কোচবিহার থেকে উদ্ধার করেছে। ধৃতকে বুধবার বহরমপুর আদালতে তোলা হয়। বিচারক তাকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।

Road lalgola Pipe
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy