দেওয়ালে ফোঁটা দিচ্ছেন বোন বিপাশা। ডানদিকে, প্রসেনজিৎ। নিজস্ব চিত্
সাত সকালেই ফোঁটা পড়ে গিয়েছে।
দরজার সবুজ ফ্রেমে গোলা চন্দনের হলদেটে ফোঁটা এঁকে ওড়নার খুঁটে চোখ মুছছে মেয়েটি। বলছে, ‘‘এ বারও দাদা এল না দেখলি!’’
বছর তিনেক আগে বিএসএফে যোগ দেওয়ার পরে জল-জঙ্গল-মরুভুমি ছুঁয়ে শেষতক পোস্টিংটা হয়েছিল কুপওয়ারা, কাশ্মীর।
মাস তিনেক আগে লম্বাটে ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে বাহাদুরপুরে ফিরেই শুনিয়ে দিয়েছিলেন, ‘‘ভাবিস না, এই এলাম ফের কালীপুজোর সময়ে আসছি, ভাইফোঁটায় মাস্ট!’’
আর সেই দাদাই কিনা কুপওয়ারার পাইন বন ছেড়ে গ্রামে ফিরে উধাও হয়ে গেলেন হাতের তেলোর মতো চেনা বাহাদুরপুর থেকে!
মঙ্গলবার, ভাইফোঁটার সকালে, অন্য দুই জেঠতুতো ভাইকে ফোঁটা দেওয়ার সময়ে দুই বোনের চোখ ছলছল।
ভাইঁফোঁটার দেওয়ার জন্য মঙ্গলবার সকালে নবদ্বীপের ইদ্রাকপুর থেকে বাপের বাড়ি বাহাদুরপুরে এসেছেন ইন্দ্রজিতের ঘোষের বোন বিপাশা। মামারবাড়ি মায়াকোল থেকেও এসে পৌঁচেছে প্রিয়াঙ্কা।
বিপাশা, তার জেঠুর ছেলে সুরজিৎ আর প্রশান্তকে ফোঁটা দিয়ে সরু লিকলিককে একটা দুব্বো চন্দনের সঙ্গে লেপ্টে দেয় দরজায়। বিপাশা ঠোঁট কামড়ে অন্য ভাইদের বলছেন, ‘‘দাদার জন্য দুয়ারে ফোঁটা দিতে ভাল লাগে বলুন!’’
ধুবুলিয়ার বাহাদুরপুরের বিএসএফ জওয়ান প্রসেনজিৎ নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পরে প্রশাসন থেকে পুলিশ— কম দৌড়ঝাঁপ করেননি বাড়ির লোক।
তারই শেষ দেখতে সোমবার, সটান মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি গিয়ে দরখাস্তও জমা দিয়ে এসেছেন প্রসেনজিতের বাবা জগন্নাথ ঘোষ। বলছেন, ‘‘১৭ অগস্ট ছেলে, আসছি বলে সেই যে বেরলো আর ফিরল না।’’
ধুবুলিয়া থানায় নিখোঁজ ডায়েরি হয়, অপহরণের। পুলিশ দু’জনকে গ্রেফতার করে মামলাও শুরু করে। তবে, ওই পর্যন্ত। তিনি বলছেন, ‘‘একটা তরতাজা ছেলে দেশের সীমান্ত বাঁচিয়ে এল তিন বছর ধরে। অথচ দেখুন তাঁকে খুঁজতে পুলিশের তৎপরতা, প্রায় শূন্য!’’
জগন্নাথ বলছেন, ‘‘কেউ হাঁক পাড়লেই মন হয়, এই বুঝি প্রসেনজিতের খবর নিয়ে এসেছে কেউ। তিন-তিনটে মাস ধরে এ ভাবেই ছটফট করছি, আর পেরে উঠছি না জানেন!’’
পুলিশ, তারাও কি পেরে উঠছে না? নদিয়ার পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়া বলছেন, “তা কেন, ওই বিএসএফ কর্মীর নিখোঁজ হওয়ার তদন্তে নেমে পুলিশ তো দু’জনকে গ্রেফতার করেছে। তদন্ত চলছে।”
তা চলছে, আর নিশ্চুপে পেরিয়ে গিয়েছে, ভাইছাড়া আরও একটা ভাইফোঁটা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy