Advertisement
E-Paper

টাকা না পেয়ে পুড়িয়ে মারার অভিযোগ

জীবনের মূল্য সাকুল্যে ৫০ হাজার টাকা। বহরমপুর শহর লাগোয়া পশ্চিম শিয়ালমারা-বেলতলা হাজরা পাড়ায় ঘটল এমনই এক নৃশংস ঘটনা। দাবি মতো ৫০ হাজার টাকা না পাওয়ায়, তারজিনা বিবি (২৪) নামে এক মহিলাকে পুড়িয়ে মারার অভিযোগ উঠল পড়শি যুবকের বিরুদ্ধে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৬ ০০:৫২
তারজিনার দুই ছেলে। ইনসেটে, তারজিনা বিবি।— নিজস্ব চিত্র

তারজিনার দুই ছেলে। ইনসেটে, তারজিনা বিবি।— নিজস্ব চিত্র

জীবনের মূল্য সাকুল্যে ৫০ হাজার টাকা।

বহরমপুর শহর লাগোয়া পশ্চিম শিয়ালমারা-বেলতলা হাজরা পাড়ায় ঘটল এমনই এক নৃশংস ঘটনা। দাবি মতো ৫০ হাজার টাকা না পাওয়ায়, তারজিনা বিবি (২৪) নামে এক মহিলাকে পুড়িয়ে মারার অভিযোগ উঠল পড়শি যুবকের বিরুদ্ধে।

বুধবার রাতের ঘটনা। অভিযুক্ত যুবকের নাম শরিফ শেখ। মৃত্যুকালীন জবানবন্দিতে তারজিনা জানায়, তাঁর কাছে ৫০ হাজার টাকা চেয়েছিল শরিফ। না পাওয়ায় গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় সে।

তারজিনার স্বামী হাজারুল শেখের সঙ্গে বছর দেড়েক আগে আরব মুলুকে গিয়েছিলেন প্রতিবেশী যুবক শরিফ। বেশি উপার্জনের প্রত্যাশায় হাজারুল সেখানেই থেকে গেলেও মাস ছয়েক আগে বাড়ি ফিরে আসে শরিফ। বাড়়ির কাছেই মুদিখানার দোকান দিয়েছিল বছর তিরিশের যুবক। সেই দোকান থেকেই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতেন তারজিনা। চেনাশোনার সূত্রেই তাঁদের মধ্যে গড়ে উঠেছিল একটা ‘সম্পর্ক’ও। পড়শিদের এমনই অনুমান। তারজিনার বছর চারেকের ছেলে রাজকুল বলে, ‘‘শরিফ চাচা জোর করে মাকে বাথরুমের কাছে টেনে নিয়ে গিয়ে গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। আমার সামনে মাকে পুড়িয়ে মেরে ফেলে’’, ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে সে। বুধবার রাতে রাজকুলের কান্নার শব্দেই তারজিনার অগ্নিদগ্ধ হওয়ার কথা জানতে পারেন প্রতিবেশীরা। তাঁকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ভোর তিনটে নাগাদ সেখানেই মারা যান তিনি। তারজিনার মা কোহিনুর বিবি বলেন, ‘‘শরিফ আমার মেয়ের কাছে ৫০ হাজার টাকা চেয়েছিল। রাজি হয়নি তারজিনা। সেই টাকা না দেওয়ায় মেয়েকে পুড়িয়ে মেরেছে শরিফ।’’ হাসপাতালে মৃত্যুকালীন জবানিতে মেয়ে সে কখা চিকিৎসককে বলেছে।

বহরমপুর থানার আইসি শৈলেন বিশ্বাস বলেন, ‘‘ওই খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত শরিফ শেখ পলাতক। তার বাড়িতেও কেউ নেই।’’

বছর এগারো আগে বেলডাঙা পুরসভার চার নম্বর ওয়ার্ডের আশ্রম পাড়ার তারজিনার সঙ্গে শিয়ালমারার হাজারুল শেখের বিয়ে হয়। তাঁদের দুই সন্তান— বছর সাতেকের ফেরদৌস শেখ ও চার বছরের রাজাকুল।

বড় ছেলে বেলডাঙার দাদুর বাড়ি থেকে বেসরকারি স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। ছোটটি মায়ের কাছেই থাকে। বেশি আয়ের আশায় ইদে অন্যদের মতো তিনি বাড়ি ফেরেননি। বাড়ি না ফিরলেও স্ত্রীর নামে নিয়মিত টাকা পাঠাতেন। সে কথা জানত তারজিনার ঘনিষ্ঠ শরিফও।

তারজিনার বাবা তাজাই শেখ জানান, ইদের দু’দিন পর নাতিকে নিয়ে মেয়ে আমার বাড়ি এসেছিল। চারদিন আগে শিয়ালমারায় ফিরেছে। তিনি বলেন, ‘‘জামাই সদ্য ৫০ হাজার টাকা পাঠিয়েছে। সেই টাকায় সোনার গয়না কেনার জন্য আজ শুক্রবার আমার কাছে তার আসার কথা ছিল। এল তার লাশ।’’

প্রতিবেশীদের অনেকে জানান, স্বামী বছর দেড়েক ঘরে না থাকায় বিভিন্ন প্রয়োজনে অবিবাহিত শরিফের উপর অনেকটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলেন তারজিনা। ফলে ঘনিষ্ঠতা যে অনেকটাই গড়িয়েছিল, তা মানছেন তারজিনার মা নিজেও। তিনি বলেন, ‘‘ইদের পরে বেড়াতে এসে মেয়ে বলেছিল, তার কাছ থেকে ৫০ হাজার চেয়ে শরিফ চাপ দিচ্ছে।’’ হাজারুলের বাড়ির কাছেই তাঁর কাকা মুরসেলিম শেখের বাড়ি। মুরসেলিম বলেন, ‘‘শরিফ দুর্বত্ত প্রকৃতির লোক। তারজিনাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় সে জানায়, এটিএম কার্ড, লক্ষাধিক টাকা ও সোনাদানা ছিনিয়ে নেওয়ার পর শরিফ তাঁর গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’’

Murder Money Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy