চাঁদার জুলুমের কাছে মাথা নুইয়েও মাথা ফাটল ট্রাক চালকের। এবং অভিযোগের আঙুল শাসক দলের শ্রমিক সংগঠনের সমর্থকদে দিকে।
বিশ্বকর্মা পুজোর জন্য গত বছর তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের চাঁদা আদায়কারীদের বাধা দিতে গিয়ে প্রহৃত হয়েছিলেন বহরমপুর থানার এক সাব-ইন্সপেক্টর-সহ বেশ কয়েক জন পুলিশকর্মী। শাসক দলের এক জন সমর্থককে গ্রেফতারের সাহস দেখায়নি পুলিশ। এ বার দাবি মতো চাঁদা না পাওয়ায় ট্রাক চালকের মাথা ফাটল তারা। বিরোধীদের দাবি, গ্রেফতারের মুরোদ এ বারও দেখাতে পারবে না পুলিশ।
শনিবার দুপুরে ঝাড়খণ্ড থেকে পাথর বোঝাই একটি ট্রাক বহরমপুর শহরে ঢুকতেই ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে মধুপুর কালীবাড়ির কাছে তাকে আটকায় জনা কয়েক চাঁদা আদায়কারী। লাঠি-বাঁশ হাতে কয়েক জন যুবক চাঁদা আদায়ের জুলুম শুরু করে। চালক ইতস্তত করতেই শুরু হয় গালমন্দ। অভিযোগ সেই সময়ে চাঁদা দিলেও তা মনঃপুত হয়নি ওই সংগঠনের মাতব্বরদের। চালক হবিবুর শেখ জানান, ১০০ টাকা চাঁদা দিয়েও রেহাই মেলেনি। দাবি বাড়তে থাকে। এই সময়ে রসিদ দিতে দেরি গওয়ায় তাড়া দেন হবিবুর। শাস্তিস্বরূপ তাঁর মাথায় পড়ে লাঠি। মাথা ফেটে রক্ত পড়তে থাকে। এ বার ক্ষিপ্ত চালক ওই অবস্থায় জাতীয় সড়কের উপরে লরির থামিয়ে বসে পড়েন রাস্তার উপরে।
আগুনে ঘি পড়ে। রক্তাক্ত লরি চালককে দেখে পিছনে আসা অন্য চালকরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁরাও জাতীয় সড়কের উপরে লরি দাঁড় করিয়ে পথ অবরোধ শুরু করেন। আনোয়ার শেখ, বিজেন্দ্র সিংহ, কামরান আলি, মন্টু মণ্ডলের মতো লরি চালকদের ক্ষোভ মূলত পুলিশের উপরে। তাঁদের কথায়, ‘‘পুলিশের উর্দি পরে ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ করলেও চাঁদা আদায়কারীদের বিরুদ্ধে কিছু করতে পারে না।’’
এ দিকে রাস্তায় লরি দাঁড়িয়ে পড়ায় ব্যাপক যানজট হয়। যানজট পঞ্চাননতলা থেকে বানজেটিয়া ও ভাকুড়ির দিকে এবং উল্টো দিকে গির্জামোড় ছাড়িয়ে খাগড়া রেলগেটের পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। অনেক যাত্রীই বাস থেকে নেমে হাঁটতে শুরু করেন।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ। জিপ থেকে নেমে ওই পুলিশকর্মীরা শুরুতে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের কার্যালয়ের সামনে পাহারা দেওয়ার ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে থাকেন বলে অভিযোগ। বেগতিক বুঝে তার আগেই অবশ্য ওই কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ সিটু কার্যালয়ের কাছ থেকে দু’জনকে গ্রেফতার করে। তাঁদের মারতে মারতে জিপে তোলে। ওই খবর পৌঁছাতেই সিটুর নেতা-কর্মীরা পুলিশকে ঘিরে ধরে ক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। দু’পক্ষের মধ্যে তর্ক বেধে যায়। এমনকী যে লরি চালকের মাথা ফেটেছে, সেই হবিবুরও পুলিশকে জানান, ‘‘তৃণমূলের কাউকে গ্রেফতার না করে কেন নিরীহ ব্যক্তিদের গ্রেফতার করছেন?’’
পুলিশ ও প্রশাসনের উদাসীনতায় প্রতি বছর বিশ্বকর্মা পুজোর প্রায় মাস খানেক আগে থেকে চাঁদার জুলুমবাজিতে অতিষ্ঠ হন নাগরিকেরা। পঞ্চাননতলা রেলগেটের পূর্বপাড়ে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে পণ্যবাহী লরি আটকে জোর করে চাঁদা তোলার অভিযোগ যেমন মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূল ট্রাক ড্রাইভার অ্যান্ড হেল্পার ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের বিরুদ্ধে রয়েছে, তেমনই শাসক দলের পাশাপাশি সিটু এবং আইএনটিইউসি অনুমোদিত শ্রমিক সংগঠনও রাস্তায় চাঁদা তোলে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, তৃণমূলের হয়ে চাঁদা তোলার জন্য একশ্রেণির কর্মীদের দুপুরে মাংস-ভাত খাওয়ানো ছাড়াও চাঁদা তোলার টাকার অঙ্কের হিসেবের উপরেও দিনমজুরি বাবদ দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে বাড়তি রয়েছে সন্ধ্যায় মদের আসর। ফলে এক শ্রেণির কর্মী অতি-উৎসাহী হয়ে উঠছেন চাঁদা তুলতে। চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে বাঁশ-লাঠিও জুটছে চালক ও খালাসিদের কপালে। এমনকী লাঠির আঘাতে দিয়ে লরির কাঁচ ভেঙে দেওয়া নিত্য দিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জেলা পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, ‘‘চাঁদা আদায়কারীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে। রাস্তায় য়াতে চাঁদা তুলতে না পারে, সে জন্য পুলিশ মোতায়েন করা হবে।’’
তৃণমূল ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়ের জেলা সম্পাদক তাপস বিশ্বাস অবশ্য বলছেন, ‘‘চালক নিগ্রহের ঘটনায় কোনও ভাবে আমাদের সমর্থকেরা করেননি। আমি শুনেছি অন্য সংগঠনের লোকজন মদ্যপ অবস্থায় ওই ঘটনা ঘটিয়েছে।’’ আইএনটিইউসি অনুমোদিত মুর্শিদাবাদ জেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক আনন্দগোপাল রায় বলেন, ‘‘গত বছর পুলিশ পিটিয়েও তৃণমূলের কেউ গ্রেফতার হয়নি। পুলিশ মেরে যখন পার পেয়ে যায়, তখন সাধারণ নিরীহ লরি চালকের মেরে মাথা ফাটিয়ে দিলেও পুলিশ যে তাদের ছুঁতে পারবে না, তা বলাই বাহুল্য।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy