Advertisement
E-Paper

দুই জেলার সব আসনই স্পর্শকাতর

আজ, শনিবার উপনির্বাচন হতে চলেছে নদিয়া-মুর্শিদাবাদে ৬০টি আসনে। বিধানসভা ভোটের আগে এই উপনির্বাচনের বাড়তি তাৎপর্য রয়েছে। সকাল সাতটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ভোটের সময়সীমা নির্দিষ্ট করেছে নির্বাচন কমিশন।

নিজস্ব‌ প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৫ ০১:১১
ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আগে ব্যস্ততা কর্মীদের।  বহরমপুরে গৌতম প্রামাণিকের তোলা ছবি।

ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আগে ব্যস্ততা কর্মীদের। বহরমপুরে গৌতম প্রামাণিকের তোলা ছবি।

আজ, শনিবার উপনির্বাচন হতে চলেছে নদিয়া-মুর্শিদাবাদে ৬০টি আসনে। বিধানসভা ভোটের আগে এই উপনির্বাচনের বাড়তি তাৎপর্য রয়েছে।

সকাল সাতটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ভোটের সময়সীমা নির্দিষ্ট করেছে নির্বাচন কমিশন। দুই জেলায় এই ভোটের প্রেক্ষাপট হিসেবে রয়েছে, কান্দিতে দিনের আলোয় দিশি পিস্তল উঁচিয়ে নাচ থেকে শুরু করে কল্যাণীর সগুণা-গয়েশপুর থেকে সিআইডি-র অস্ত্র উদ্ধার। তৃণমূলের নানা গোষ্ঠীর কোন্দল থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা তো আছেই। সে পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে দুই জেলার প্রতিটি আসনকেই স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করেছে প্রশাসন।

ভোট অবাধ, সুষ্ঠু করতে দুই জেলার পুলিশ-প্রশাসনে তরফে একাধিক পদক্ষেপ করা হয়েছে। নদিয়ার পুলিশ সুপার ভরতলাল মিনা জানিয়েছেন, সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বুথপিছু দু’জন করে রাজ্য পুলিশের সশস্ত্র রক্ষী রাখা থাকবে।

নদিয়ার জেলাশাসক বিজয় ভারতী প্রত্যেক বুথে কড়া নজরদারি থাকবে বলে ভোটদাতাদের আশ্বস্ত করেছেন। বুথের ২০০ মিটার এলাকা জুড়ে ১৪৪ ধারা জারি থাকবে। মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও জানান, ভোটকর্মীদের ভোট কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া থেকে ভোটপর্বের গোটা প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ভাবে শেষ করতে যাবতীয় প্রস্তুতি সারা হয়েছে।

এ দিকে, নানা সমীকরণ স্মরণে রেখে শেষ মুহূর্তের আঁক কষতে ব্যস্ত রাজনৈতিক দলগুলিও। ‘গড়’ রক্ষায় বেশ কিছু দিন ধরেই মুর্শিদাবাদের নানা জায়গায় প্রচার কর্মসূচিতে দেখা গিয়েছে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীকে। বাড়ি বাড়ি ঘুরতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের সভাপতি মান্নান হোসেনের অবশ্য দাবি কোনও বিরোধী শক্তি নয়, জেলায় ভাল করবে শাসক দলই। মান্নানের দাবি, ‘‘কংগ্রেস পাঁচথুপিতে প্রার্থী দিতে পারেনি। সেখানে কংগ্রেস, সিপিএমের সঙ্গে আসন সমঝোতা করেছে।’’

‘অবাধ’ ভোট করা নদিয়া জেলা প্রশাসনের কাছেও চ্যালেঞ্জের। প্রশাসনের একটি সূত্রের মত, কল্যাণীর সগুনা ও গয়েশপুর থেকে যে অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে, তা হিমশৈলের চূড়া মাত্র। জেলার বিভিন্ন প্রান্তে এখনও প্রচুর অস্ত্র মজুত রয়েছে বলে অনুমান ওই সূত্রটির। প্রশাসন সূত্রে খবর, জেলায় যে ১১টি থানা এলাকায় উপনির্বাচন হচ্ছে গত ক’য়েক দিনে সেখানে লাগাতার অভিযান চালিয়ে ২৬টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৭৭টি বুলেট ও ৪৯টি বোমা উদ্ধার হয়েছে। গোলমাল ঠেকাতে আগাম গ্রেফতার করা হয়েছে ১৮৮ জনকে। এ ছাড়াও গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকা ৫১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মত, বিধানসভা ভোটের আগে উপনির্বাচনের সব আসনে জিততে চাইবে শাসক দল। কেননা, কোনও ভাবে তার উল্টোটা হলে বিরোধীদের মনোবল বেড়ে যেতে পারে। তাতে প্রশ্ন উঠতে পারে সেই এলাকার বিধায়কের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও! সেই কারণে এই ভোট বিধানসভা ভোটের আগে শাসক দলের বিধায়কদের কাছেও চ্যালেঞ্জের। একই কারণে তা গুরুত্বপূর্ণ বিরোধী দলের নেতাদের কাছেও।

সে কারণেই ভোটের মুখে পুলিশের সাহায্যে শাসক দল মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন প্রান্তে সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করেছে বলে অভিযোগ বিরোধী দলগুলির। সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যের দাবি, ‘‘বীরভূম ও বর্ধমান লাগোয়া এলাকায় বহিরাগত দুষ্কৃতীদের আমদানি করছে তৃণমূল।’’ সোমবার রাতে খড়গ্রাম থানার সর্বাঙ্গপুর গ্রামে দলীয় কর্মীদের মারধর করা হয় বলেও মৃগাঙ্গবাবুর দাবি। বৃহস্পতিবার রাতে নদিয়ার চাকদহ ব্লকের তাতলা ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের কামালপুরে দলীয় পতাকা, ব্যানার ছিড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সিপিএম প্রার্থী স্বপন মণ্ডলের দাবি, ‘‘হার নিশ্চিত হবে বুঝে শাসক দলের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা এমন কাণ্ড ঘটিয়েছে।’’ অভিযোগ মানতে চায়নি স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। এ ব্যাপারে অভিযোগ দায়ের হয়েছে, জানিয়েছেন চাকদহের বিডিও নিশীথ ভাস্কর।

তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিও। অধীর বলছেন, ‘‘পুলিশ, প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা অত্যন্ত জরুরি। কেননা, ভোটের আগে থেকেই তৃণমূল যে ভাবে আগ্নেয়াস্ত্র, বোমা-গুলি জোগাড় করে বহিরাগত দুষ্কৃতীদের জেলায় এনে রেখেছে, তাতে গণ্ডগোলের আশঙ্কা রয়েছে।’’ সন্ত্রাস ঠেকাতে কংগ্রেস কর্মীরাও প্রস্তুত, জানিয়েছেন অধীর।

একই সুর শোনা গিয়েছে নদিয়ার বিরোধী নেতাদের গলাতেও। নদিয়া জেলা বিজেপির মুখপাত্র সৈকত সরকার বলেন, ‘‘স্বচ্ছ ভাবে ভোট হলে তৃণমূলের হার নিশ্চিত। সে ঝুঁকি তারা নেবে না। তেমন হলে আমরাও প্রতিরোধে প্রস্তুত।’’ একই কথা শুনিয়েছেন জেলা সিপিএমের সম্পাদক সুমিত দে থেকে জেলা কংগ্রেস সভাপতি অসীম সরকার।

সব মিলিয়ে আজ দিনের শেষে কী হয়, দেখার সেটাই।

murshidabad by poll congress bjp
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy