Advertisement
১৮ মে ২০২৪

অরুণ হত্যা মামলায় চার্জ গঠন

নবদ্বীপের সিপিএম নেতা অরুণ নন্দী খুনের মামলার চার্জগঠন সম্পূর্ণ হল। মঙ্গলবার নবদ্বীপের অতিরিক্ত জেলা এবং দায়রা বিচারক সুধীর কুমারের আদালতে এই চার্জগঠন হয়। ২০১৩ সালের ১ এপ্রিল রাতে নিজের বাড়িতে খুন হন নবদ্বীপে সিপিএমের শাখা সম্পাদক অরুণবাবু। প্রেমিকের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে স্বামী খুনের অভিযোগে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছেন অরুণবাবুর স্ত্রী উৎপলা নন্দী এবং তাঁর বন্ধু নবকুমার দত্ত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৫ ০০:৪৩
Share: Save:

নবদ্বীপের সিপিএম নেতা অরুণ নন্দী খুনের মামলার চার্জগঠন সম্পূর্ণ হল। মঙ্গলবার নবদ্বীপের অতিরিক্ত জেলা এবং দায়রা বিচারক সুধীর কুমারের আদালতে এই চার্জগঠন হয়। ২০১৩ সালের ১ এপ্রিল রাতে নিজের বাড়িতে খুন হন নবদ্বীপে সিপিএমের শাখা সম্পাদক অরুণবাবু। প্রেমিকের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে স্বামী খুনের অভিযোগে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছেন অরুণবাবুর স্ত্রী উৎপলা নন্দী এবং তাঁর বন্ধু নবকুমার দত্ত। আদালতের নির্দেশে তাঁরা এখন জেল হেফাজতে।

চাঞ্চল্যকর এই মামলার চার্জগঠন বিষয়ে নবদ্বীপ আদালতের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি সনৎকুমার রায় জানান, এই মামলায় অভিযুক্ত দু’জন। প্রথম জন উৎপলা নন্দী, মৃত অরুণ নন্দীর স্ত্রী। পেশায় সরকারি হাসপাতালের নার্স। দ্বিতীয় ব্যক্তি হলেন নবকুমার দত্ত। অভিযোগ, ওই দু’জন বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িত ছিলেন দীর্ঘ তেরো-চোদ্দ বছর ধরে। উৎপলা দেবীর স্বামী বিষয়টি জেনে ফেলায় ২০১৩ সালের ১ এপ্রিল রাতে উৎপলা এবং নবকুমার পরিকল্পনা করে যৌথ ভাবে অরুণবাবুকে ধারালো ছুরি দিয়ে খুন করে। তাঁদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ (খুন), ২০১ (সাক্ষ্যপ্রমাণ লোপাট) ও ৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়।

এর আগে গত ৭ মে অরুণ নন্দী হত্যা মামলার চার্জ গঠন হওয়ার দিন ধার্য হলেও দুই অভিযুক্তের তরফে সে দিন কোনও আইনজীবী নিয়োগ না করায় তা সম্ভব হয়নি। অভিযুক্ত‌েরা আদালতে বলেছিলেন, জেল হেফাজতে থাকায় তাঁদের পক্ষে পরিবারের কারুর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তাই আইনজীবীর ব্যাপারে কিছু জানেন না। তবে মঙ্গলবার আদালতে উৎপলাদেবীর তরফে তাঁর আইনজীবী হাজির থাকলেও, নবকুমার দত্তের তরফে কোনও আইনজীবী ছিলেন না। এই পরিস্থিতিতে আদালতের নির্দেশে ডিস্ট্রিক্ট লিগাল সার্ভিসের সদস্য এবং নবদ্বীপ আদালতের আইনজীবী ষষ্ঠীভূষণ পালকে অভিযুক্ত নবকুমার দত্তের আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ করা হয়।

সেটা ছিল ২০১৩ সালের ৩১ মার্চের গভীর রাত। নবদ্বীপ পুরসভার কর্মী এবং সিপিএমের শাখা সম্পাদক অরুণ নন্দী (৫৭) নিজের বাড়িতে নৃশংস ভাবে খুন হয়েছিলেন। পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা অরুণবাবুর ওলাদেবীতলার বাড়ির শোওবার ঘর থেকে উদ্ধার হয় তাঁর রক্তাক্ত দেহ। ঘটনার প্রায় বাইশ মাস পরে গত ৭ ফেব্রুয়ারি পুলিশ খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করে অরুণবাবুর স্ত্রী, সরকারি হাসপাতালের নার্স উৎপলা নন্দী এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু নবকুমার দত্তকে। গ্রেফতার করার ছেষট্টি দিনের মাথায় গত ১৩ এপ্রিল নবদ্বীপ আদালতে ধৃতদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। ৩৪৪ পাতার ওই চার্জশিটে পুলিশ অরুণ নন্দী হত্যায় তাঁর স্ত্রী উৎপলা নন্দী এবং নবকুমার দত্তের বিরুদ্ধে পরিকল্পনা করে খুন এবং প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ এনেছিল পুলিশ।

উল্লেখ্য খুনের ঘটনার পরে অরুণবাবুর স্ত্রী উৎপলা নন্দীই প্রথমে পুলিশের কাছে এফআইআর করে জানিয়েছিলেন ডাকাতি করতে আসা দুষ্কৃতীরা তাঁর স্বামীকে খুন করেছে। যদিও পুলিশ প্রথম থেকেই ডাকাতির ওই অভিযোগ নিয়ে সন্দিহান ছিল। এলাকায় অত্যন্ত জনপ্রিয় অরুণবাবু খুন হওয়ার পর থেকেই ডাকাতির তত্ত্ব উড়িয়ে দিয়েছিলেন পড়শিরাও। তাঁদের অভিযোগের আঙুল ছিল অরুণবাবুর স্ত্রী উৎপলাদেবীর দিকেই। কিন্তু উপযুক্ত সাক্ষ্য প্রমাণের অভাবে পুলিশ সে সময় কিছুই করতে পারেনি। বরং প্রথমে কিছুদিন তদন্ত চালানোর পর পুলিশ হাত গুটিয়ে নিয়েছে বলেই মনে করেছিলেন সকলে।

যদিও জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, এটাই ছিল তাঁদের কৌশল। অরুণবাবু খুনের রাত থেকেই মামলার অন্যতম অভিযুক্ত নবকুমার দত্ত গা ঢাকা দিয়েছিলেন। যদিও সে সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ কেউ করেনি পুলিশের কাছে। তবুও অরুণবাবুর স্ত্রীর ঘনিষ্ঠ নবকুমার দত্ত ৩১ মার্চ রাত থেকে বেপাত্তা হওয়ায় তাঁকে সন্দেহ করতে শুরু করে পুলিশ। পরবর্তীতে পুলিশি তদন্তে উঠে আসা তথ্যের ভিত্তিতে নবকুমারের নাম এই ঘটনায় অন্যতম সন্দেহভাজনের তালিকায় উঠে আসে। খুবই সন্তর্পণে নবকুমারের খোঁজখবর নেওয়ার কাজ শুরু করে পুলিশ। বিষয়টি ধামাচাপা পড়েছে মনে করে একসময় নবকুমার নবদ্বীপে ফিরে নিজের বাড়িতে বসবাস করতে থাকেন। স্বাভবিক জীবনে ফিরে আসেন অরুণবাবুর পরিবারের সকলে। যদিও দুই সন্দেহভাজনের উপর পুলিশের গোপন নজরদারী চলতেই থাকে সবার অলক্ষ্যে। উপযুক্ত সুযোগের অপেক্ষায় থেকে ঘটনার প্রায় বাইশ মাস পরে পুলিশ শেষ পর্যন্ত নবকুমার এবং অরুণ নন্দীর স্ত্রী উৎপলা নন্দীকে গ্রেফতার করে। আগামী ১৬ জুলাই এই মামলার শুনানির দিন ধার্য হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE