Advertisement
E-Paper

ডাকছে চিনের বাড়ি, ফেরা কবে

দরজার বাইরে তখন এক ব্যাগ আনাজ হাতে দাঁড়িয়ে স্থানীয় যুবক বিশ্বজিৎ দেবনাথ।

সুদীপ ভট্টাচার্য 

শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০২০ ০১:২৮
মোবাইলে প্রিয়জনের খোঁজ লিলি, জুজিয়ার। মায়াপুরে। নিজস্ব চিত্র

মোবাইলে প্রিয়জনের খোঁজ লিলি, জুজিয়ার। মায়াপুরে। নিজস্ব চিত্র

মায়াপুরের গৌরনগর। ভরদুপুরে পাঁচ তলার ফ্ল্যাটের দরজায় মৃদু টোকা। হাসিমুখে দরজা ফাঁক করে ইশারায় আস্তে কথা বলার অনুরোধ করলেন বত্রিশের চিনা তরুণী লিলি।

দরজার বাইরে তখন এক ব্যাগ আনাজ হাতে দাঁড়িয়ে স্থানীয় যুবক বিশ্বজিৎ দেবনাথ। প্রতি বছর দোলের সময়ে লিলিরা চিন থেকে মায়াপুরে এলে গ্যাস সিলিন্ডার জোগাড় করা থেকে আনাজ-বাজার— সবেতেই খোঁজ পড়ে বিশ্বজিতের। লিলির ধীরে কথা বলতে বলার কারণ মায়ের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাতে চান না। গত কয়েক মাস চিনে থাকা স্বামী-সন্তানের চিন্তায় প্রচণ্ড উদ্বেগে কেটেছে যে তাঁর।

ভাঙা-ভাঙা ইংরেজি আর হিন্দি মেশানো বাক্যে বিশ্বজিতের প্রশ্ন— ‘‘ চিনে ভাই, বাবা সবাই কেমন আছেন এখন?’’ হাসিমুখে লিলির উত্তর, ‘‘এখন সব স্বাভাবিক। এয়ারপোর্ট খুলেছে। এই মাসের শেষ দিকে দেশে ফিরে যাব।’’

গত ডিসেম্বরে চিনের গুয়ানসি শহর থেকে মায়ের সঙ্গে মায়াপুরে এসেছেন লিলি। এর মাঝেই চিনের উহান শহরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের খবর আসে। চিনের বাড়িতে লিলির বাবা আর ভাই রয়েছেন। করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে ভীষণ উদ্বেগ ছিল। বাবা আর ভাই সিনচুনের থেকে এতটা দূরে মায়াপুরে রয়েছেন মা-বোন। দুশ্চিন্তায় গত মাসে খেতে-ঘুমোতে পারেননি লিলি আর তাঁর মা জুজিয়াও।

লিলি জানালেন, তাঁদের শহর উহান থেকে বহু দূরে অবস্থিত।তা সত্ত্বেও গত ফেব্রুয়ারি মাসে অফিস, দোকান, বাজার সবই বন্ধ ছিল লিলির শহরে। লিলি নিজে নৃত্যশিল্পী, কুংফুতে পারদর্শী। চিনে তাঁর নাচের স্কুল আছে। লিলির বাবা আর ভাইয়ের গাড়ির ব্যবসা। গত ক’মাস খুব প্রয়োজনে মুখোশ পরে রাস্তায় বেরোচ্ছেন মানুষ। এ সব কারণে ব্যবসা খুব খারাপ গিয়েছে তাঁদের। গাড়ি বিক্রি প্রায় তলানিতে।

তাঁর কাছেই শোনা গেল, গত মাসে লিলির স্কুলও বন্ধ ছিল। ফেব্রুয়ারি মাসে সরকার থেকে এক দিন পর পর এক বেলা ভাত, নুডুলস, ফল, মুরগির মাংসের মতো খাবার ও জল বাড়ি বাড়ি দিয়ে গিয়েছে। সেই খাবার ও জলই ছিল লিলির গৃহবন্দি বাবা আর ভাইয়ের বেঁচে থাকার রসদ। রোজ রাতের ফোনে অনিশ্চিত আগামী দিনের অপেক্ষায় থাকতেন ওঁরা।

তখন বড্ড অসহায় লাগত লিলির। এতটা দূর থেকে কী-বা করার থাকতে পারে তাঁর? তবুও তিনি বোঝানোর চেষ্টা করতেন ওঁদের। কিন্তু নিজেকে বোঝাতে পারতেন না লিলি। তাই চিন্তায় ঘুম আসত না রাতে। উধাও হয়েছিল খিদেও।

মায়াপুরে লিলিদের ফ্ল্যাটেই এই বছর জানুয়ারিতে চিনের অন্য এক শহর থেকে এসেছেন ৬০ বছরের প্রবীণা সুসিয়া। তাঁর ছেলে চিনে সরকারি চাকরি করেন। বাড়িতে একা বউকে রেখে গত মাসের পুরোটাই তাঁকে অফিস সামলাতে হয়েছে। করোনাভাইরাসের মোকাবিলায় চিনে সরকারি কর্মীদের কাজের চাপ বেড়ে গিয়েছে বহু গুণ। ফোনে মায়ের সঙ্গে কথা বলারও সময় পেতেন না ছেলে। একবেলা কোনও মতে খাওয়ার সময় পেতেন চিনের ওই সরকারি কর্মী। অফিসের মেঝেতেই ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে নিতেন একটু সময়। মার্চ মাসের প্রথম থেকে চিনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। দোকান, বাজার খুলছে। মানুষ রাস্তায় বেরোতে শুরু করেছেন আগের মতো।

ফিরে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এখন। মায়াপুরে দোল উৎসব কাটিয়েই দেশে ফিরবেন ওঁরা।

Coronavirus China
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy