Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ওপার বাংলার মাটিতে তৈরি হয় ছিন্নমস্তার বেদি

দিন বদলের সঙ্গে ভোলও বদলেছে মেলার। কলেবর বেড়েছে। বেড়েছে জাঁকও। গত শনিবার শুরু হয়েছে সেই ছিন্নমস্তার কালীপুজো। চলবে টানা একমাস। প্রতিবারের মতো মেলা বসছে এ বারেও।

শুরু হয়েছে পুজো। ইনসেটে, সেই মন্ত্রপুস্তক। নিজস্ব চিত্র

শুরু হয়েছে পুজো। ইনসেটে, সেই মন্ত্রপুস্তক। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
তেহট্ট শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:২৯
Share: Save:

ছোটবেলায় মেলা দেখার স্মৃতি রোমন্থন করছিলেন অশীতিপর সুনীল তিওয়ারি। সে সময় এত রকমারি আলো ছিল না। সন্ধে নামলেই সুনসান হত পথঘাট। ব্যতিক্রম ছিল মেলার ক’টা দিন। বিদ্যুতের বালাই ছিল না। পেট্রোম্যাক্স জ্বলত মেলা প্রাঙ্গণে। লোকে হ্যারিকেন জ্বালিয়ে আসতেন মেলায়। দোকানেও ঝুলত লন্ঠন। বাপেরবাড়িতে আসত পাড়ার মেয়েরা। গাঁয়ে ফিরত ভিন্ দেশে কাজ করতে যাওয়া ছেলেপুলেরাও।

দিন বদলের সঙ্গে ভোলও বদলেছে মেলার। কলেবর বেড়েছে। বেড়েছে জাঁকও। গত শনিবার শুরু হয়েছে সেই ছিন্নমস্তার কালীপুজো। চলবে টানা একমাস। প্রতিবারের মতো মেলা বসছে এ বারেও।

ওপার বাংলায় শুরু হয়েছিল এই কালীপুজো। অধুনা বাংলাদেশের মেহেরপুরের দড়িয়াপুর গ্রামে সত্যরঞ্জন মুখোপাধ্যায় পুজো শুরু করেন। কথিত আছে, একদিন তিনি সকালে মন্দিরে গিয়ে দেখেন প্রতিমার মুন্ডু নেই। প্রতিমার এমন অবস্থা দেখে সেই অবস্থায় নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেন। কিন্তু মুন্ডুহীন অবস্থাতেই পুজো করতে হবে বলে সে দিন রাতে তিনি স্বপ্নাদেশ পান। সেই সঙ্গে উত্তরপ্রদেশের কাশীতে তালপাতায় লেখা মন্ত্র পড়ে পুজো করার আদেশ পান। আদেশ পেয়ে বাংলাদেশ থেকে পায়ে হেঁটে সুদুর কাশী যান ও সেখান থেকে মন্ত্রপুস্তক নিয়ে এসে তিনি নতুন করে পুজো শুরু করেন। দেশ ভাগের সময় তিনি ভারতের তেহট্টে চলে আসেন। পদ দাস নামে এক ব্যক্তি ও দেশের আদি মন্দিরের মাটি নিয়ে এসে বর্তমান মন্দিরের বেদি তৈরি করেন।

সেই থেকে ধুমধাম করে ছিন্নমস্তার কালীপুজো হয়ে আসছে। অগ্রহায়ণ মাসের ষষ্ঠীতে পুজো শুরু হয়। প্রতিমা বিসর্জন হয় পৌষের সপ্তমীতে।

ছিন্নমস্তার পুজো উপলক্ষে পাড়ার প্রায় সব মেয়েরাই শ্বশুরবাড়ি থেকে ক’দিনের জন্য বাপের বাড়িতে চলে আসেন। মীরা বিশ্বাস, কানন দেবনাথদের কথায়, “খুব ছোট থেকে এই মেলা দেখে আসছি। ছোটবেলায় বাবা মায়ের হাত ধরে মেলায় ঘুরে ঘুরে খেলনা কেনার কথা মনে পড়ে। গরমাগরম পাঁপড় খেতে খুব ভাল বাসতাম।’’

স্থানীয় মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী বলেন, “টানা একমাস ধরে মেলা চলে। ভক্তেরা নানা মিষ্টি দিয়ে মায়ের পুজো দেন। যে কারণে দোকানের সকলে এক মাস নিরামিশ খেয়েই মিষ্টান্ন তৈরি করেন।”

মেলা কমিটির সদস্য নৃপেণ ঘোষ জানান, মেলায় প্রায় শ’খানেক দোকান বসেছে। নিরাপত্তার জন্য সিসিটিভি ক্যামেরা বসেছে মেলা চত্বরে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE