সংখ্যালঘু প্রধান দুই জেলা— মালদহ ও মুর্শিদাবাদে উচ্চশিক্ষার বেহাল দশা দেখে উদ্বিগ্ন ইন্দিরা গাঁধী রাষ্ট্রীয় মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় অর্থাৎ ইগনুর কর্তারা।
তাঁরা ইচ্ছা, এই দুই জেলায় ইগনুর স্টাডি সেন্টারের সংখ্যা বাড়াতে। কিন্তু অভিযোগ, জেলার কলেজগুলির গয়ংগচ্ছ মনোভাবের কারণে স্টাডি সেন্টারের সংখ্যা বাড়ছে না। জঙ্গিপুরের একটি কলেজেও ইগনুর স্টাডি সেন্টার খোলা যায়নি। গত সাত বছরেও। সম্প্রতি ইগনুর রঘুনাথগঞ্জ আঞ্চলিক কেন্দ্রের উদ্যোগে এক সমীক্ষা করা হয়। উচ্চ শিক্ষার হাল-হকিকৎ সংক্রান্ত ওই সমীক্ষায় প্রকাশ, মালদহে উচ্চ শিক্ষার হার ৭ শতাংশেরও নীচে। মুর্শিদাবাদে ক্ষেত্রে এই হার ৮ শতাংশের কিছুটা উপরে।
এই হার বাড়াতে সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় শিক্ষাবিদ ও জেলার কলেজগুলিকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন ইগনুর রঘুনাথগঞ্জের আঞ্চলিক অধিকর্তা এস শ্রীনিবাস।
২০০৯ সালে চালু হয় রঘুনাথগঞ্জ আঞ্চলিক কেন্দ্র। মুর্শিদাবাদ, মালদহ, বীরভূম-সহ ঝাড়খণ্ড একাংশের ছাত্র-ছাত্রীদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ করে দিতেই ইগনুর রঘুনাথগঞ্জ আঞ্চলিক কেন্দ্রটি চালু হয়। তিন জেলায় প্রায় ৬০টিরও বেশি কলেজ থাকা সত্ত্বেও মাত্র ১০টি কলেজে স্টাডি সেন্টার রয়েছে ইগনুর। সেই তালিকায় জঙ্গিপুরের কোনও কলেজের নাম নেই।
স্টাডি সেন্টারের অভাবে ইচ্ছে থাকলেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কোর্স চালু করা যাচ্ছে না বলে মত ইগনুর কর্তাদের।
এস শ্রীনিবাস জানান, জেলাগুলিতে উচ্চশিক্ষার হার বাড়াতে ইগনুর আঞ্চলিক কেন্দ্রে একটি উপদেষ্টা কমিটিও গড়া হয়েছে। তারা রিপোর্টও দিয়েছেন।
শ্রীনিবাস বলেন, “রঘুনাথগঞ্জে ইগনুর আঞ্চলিক কেন্দ্র চালু করা হলেও প্রত্যন্ত এলাকার ছাত্র ছাত্রীদের কাছে সেভাবে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে না বেহাল যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে।”
ইগনু’র সহকারি রেজিস্ট্রার অপূর্ব স্বর্ণকার জানান, মুর্শিদাবাদ জেলায় প্রয়োজনের তুলনায় কম স্টাডি সেন্টার রয়েছে। কারণ, কলেজগুলির আগ্রহের অভাব। বিশেষ করে লালগোলা, জঙ্গিপুর ও কান্দি মহকুমার কলেজগুলি অনেকটাই পিছিয়ে। ওই সব এলাকার কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে বার বার যোগাযোগ করা হলেও স্টাডি সেন্টার খোলার বিষয়ে কোনও কলেজই উৎসাহ দেখায়নি।
অপূর্ববাবু বলেন, “গত কয়েকমাস ধরে মুর্শিদাবাদ জেলার নদী বেষ্টিত ভারত – বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া গ্রামগুলিতে গিয়ে সমীক্ষা চালানো হয়। দেখা গেছে, ওই সব প্রত্যন্ত এলাকায় উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে আগ্রহের অভাব নেই। বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রতিকূলতা।”
কর্তারা জানান, বর্তমানে ৪৬টি কোর্স চালানো হচ্ছে। আরবান প্ল্যানিংয়ের গুরুত্ব বেড়েছে। দেশজুড়ে সরকারি ও বেসরকারি স্তরে আরবান ডেভলপমেন্টের বিভিন্ন কর্মসূচী নেওয়া হয়েছে। স্মার্ট সিটি ও আমরুট প্রকল্পভুক্ত হয়েছে তিন জেলার একাধিক শহর। একই সঙ্গে বেড়েছে হেলথ ওয়েস্টেজ ম্যানেজমেন্ট সমস্যাও। গত বছর স্নাতকোত্তরে দুটি কোর্সই চালু করা হয়। কিন্তু প্রথম কোর্সটিতে ৩০ জন ছাত্র ভর্তি হলেও দ্বিতীয়টি ছাত্রের অভাবে চালু করা যায়নি। এ বছর চালু করা হচ্ছে ‘উইমেন্স অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিস’-এ স্নাতকোত্তর। বীরভূম, মালদহ ও মুর্শিদাবাদের তিনটি কলেজে এই বিষয়ের উপর স্টাডি সেন্টার খোলার চেষ্টা হচ্ছে। সারা দেশের মধ্যে শুধুমাত্র ইগনুর রঘুনাথগঞ্জ আঞ্চলিক কেন্দ্র থেকেই নভেম্বর মাস থেকে লাইভ চ্যাট ব্যবস্থা চালু করছে ইগনু।
আঞ্চলিক অধিকর্তা জানান, এই লাইভ চ্যাট থেকেই ইগনুতে ‘ভর্তি থেকে ক্লাস’ সবই করতে পারবেন উচ্চ শিক্ষায় আগ্রহীরা। এ ছাড়াও তফশিলি জাতি ও উপজাতি ছাত্র ছাত্রীদের ইগনুতে পড়াশুনোর জন্য এ বছর থেকে আর কোনো ফি দিতে হবে না।
জঙ্গিপুর কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি ভজন সরকার বলেন, “অতীতে কি হয়েছে জানি না। ইগনু যদি স্টাডি সেন্টার খুলতে চায় তাহলে তাহলে কলেজ সাহায্য করবে।’’ এই আশ্বাস কবে বাস্তবায়িত হয়, এখন সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy