Advertisement
২২ মে ২০২৪

ছেলে তাড়িয়েছে, নালিশ মা-বাবার

অশক্ত শরীরে পেরে উঠছিলেন না। সাত সাত বার মামলার তারিখ পড়েছে। কিন্তু কোনও বারই বিচারক তথা মহকুমাশাসক ছিলেন না। ফলে প্রতিবারেই নিরাশ হয়ে ফিরতে হয়েছিল বৃদ্ধ দম্পতিকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৬ ০১:১৪
Share: Save:

অশক্ত শরীরে পেরে উঠছিলেন না। সাত সাত বার মামলার তারিখ পড়েছে। কিন্তু কোনও বারই বিচারক তথা মহকুমাশাসক ছিলেন না। ফলে প্রতিবারেই নিরাশ হয়ে ফিরতে হয়েছিল বৃদ্ধ দম্পতিকে।

কিন্তু সাংবাদিকদের থেকে সেই খবর পেয়ে মহকুমাশাসক আজ, শুক্রবার ডেকে পাঠালেন তাঁদেরকে। কী ভাবে ওই দম্পতিকে দ্রুত আইনি সহায়তা পান তার ব্যবস্থা করবেন।

মহকুমাশাসক দিব্যনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কাজে ব্যস্ত থাকায় ওই মামলার দিনগুলোতে হাজির থাকতে পারিনি। তবে বিষয়টি জানান পরে ওই দম্পতিকে ডেকে পাঠিয়েছি। যাতে তাঁরা দ্রুত আইনি সহায়তা পান তার চেষ্টা করব।’’

আট কাঠা জমির উপর দোতলা বাড়ি বছর দশেক আগে দুই ছেলেকে দানপত্র করে দেন রাধাগোবিন্দ সওদাগর। তার কয়েক বছরের মধ্যে বাবা-মায়ের উপরে মানসিক অত্যাচার শুরু করে ছোট ছেলে। তা এমন পর্যায় পৌঁছয় যে, বৃদ্ধ দম্পতিকে ঘর ছাড়তে হয়। স্ত্রী অঞ্জলীদেবী গিয়ে ওঠেন ছোট মেয়ের বাড়িতে। অশীতিপর রাধাগোবিন্দবাবু যান বাঁকুড়ায় আরও এক মেয়ের কাছে।

রাধাগোবিন্দবাবু জানান, এই অবস্থায় ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে ওই দানপত্র ফিরিয়ে নেওয়ার আবেদন জানিয়ে সিনিয়র সিটিজেন অ্যাক্টের ২৩ ধারায় বহরমপুর এসডিও কোর্টে মামলা দায়ের করেন তিনি। তার পরে সাত বার মামলার দিন পড়েছে। কিন্তু মহকুমাশাসকের অনুপস্থিতিতে মামলার শুনানি পর্যন্ত হয়নি।

রাধাগোবিন্দবাবুর আইনজীবী মহাতাব আলি জানান, সস্ত্রীক রাধাগোবিন্দবাবু যত দিন বাঁচবেন, তত দিন তাঁদের খাওয়া-পরা থেকে সেবা-যত্নের কোনও অভাব হবে না শর্তে তিনি সম্পত্তি দানপত্র করেন। কিন্তু বৃদ্ধ বয়সে এসে তাঁর উপরে নিয়মিত মানসিক অত্যাচার চালানো থেকে তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া পর্যন্ত হয়েছে। এতে সিনিয়র সিটিজেন অ্যাক্টের ২৩ ধারা লঙ্ঘিত হয়েছে। তাই দানপত্র ফিরিয়ে নেওয়ার আবেদন জানিয়ে মামলা দায়ের হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত বার বার মামলার দিন পড়লেও কোনও বারই আদালতে হাজির হতে পারেননি বিচারক তথা মহকুমাশাসক। শেষ তারিখ পড়ে ২২ নভেম্বর। পরবর্তী তারিখ পড়েছে ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে। রাধাগোবিন্দবাবুর অভিযোগ মূলত ছোট ছেলে পার্থ’র বিরুদ্ধে। তিনি জানান, সংসার খরচ হিসেবে ছোট ছেলের মাসিক পাঁচ হাজার টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও দিত মাত্র দু’হাজার টাকা। এরই মধ্যে ওই বৃদ্ধ দম্পতির অনুপস্থিতিতে ঘরের তালা ভেঙে ছোট ছেলে পার্থ আসবাবপত্র বাড়ির বাইরে বের করে দেয়। তার পরেই ওই বৃদ্ধ গোটা বিষয়টি জানিয়ে বহরমপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরের ওই ঘটনার জেরে বহরমপুর থানার পুলিশ পার্থকে গ্রেফতারও করে।

সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সদর-পূর্ব চক্রের মোহনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পার্থ সওদাগর। তিনি বলেন, ‘‘দানপত্র ফিরিয়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র করতেই মাকে সঙ্গে নিয়ে বাবা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Complaint Harassment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE