Advertisement
০২ মে ২০২৪
Bank Scam

শূন্য থেকে শুরু! আর্যভট্টের আবিষ্কারকে কাজে লাগিয়ে জালিয়াতি নাকাশিপাড়ায়, পলাতক অভিযুক্ত

গ্রাহককে দু’হাজার দিয়ে বাকিটা পকেটস্থ করতেন নিজের। এই ভাবেই শূন্যের কেরামতি দেখিয়ে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠল এক ব্যাঙ্কের সহায়তা কেন্দ্রের পরিচালকের বিরুদ্ধে।

An image of the man

শশাঙ্ক কর্মকার। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
নাকাশিপাড়া শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০২৩ ০৩:৫৬
Share: Save:

সবই ছিল ‘শূন্যের খেলা’। কেউ তাঁর কাছে দু’হাজার টাকা তুলতে গেলে তিনি তুলতেন ২০ হাজার। গ্রাহককে দু’হাজার দিয়ে বাকিটা পকেটস্থ করতেন নিজের। এই ভাবেই শূন্যের কেরামতি দেখিয়ে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠল এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সহায়তা কেন্দ্রের পরিচালকের বিরুদ্ধে। আপাত ভাবে মূল্যহীন শূন্য এ ভাবে যে তাদের আমানতের অঙ্ক শূন্যে নামিয়ে দেবে কল্পনাও করতে পারেননি কেউ। প্রতারিত গ্রাহকেরা এবং ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ মিলে সোমবার লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন নাকাশিপাড়া থানায়। এর পর থেকেই পলাতক ওই অভিযুক্ত ব্যক্তি। তাঁর খোঁজ শুরু করেছে পুলিশ।

অন্যের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করে একটু একটু করে প্রায় ৪২ হাজার টাকা জমিয়েছিলেন এক বৃদ্ধা। ইচ্ছে ছিল, সেই টাকা দিয়ে একটি সোনার আংটি কিনে একমাত্র নাতনির বিয়েতে নাতজামাইকে উপহার হিসেবে দেবেন। সোমবার সকালে বেথুয়াডহরির একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় ৩০ হাজার টাকার জমা দিতে গিয়ে তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তাঁর অ্যাকাউন্টে রয়েছে সাকুল্যে দু’হাজার টাকা! কথা শুনে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে ওই বৃদ্ধার। হন্তদন্ত হয়ে ছুটে যান ওই শাখার ম্যানেজারের কাছে। তথ্য ঘেঁটে ম্যানেজার জানান, সহায়তা কেন্দ্র থেকে ১৫ দিন আগে বৃদ্ধা ৪০ হাজার টাকা তুলেছেন। চিকিৎসার বিশেষ প্রয়োজনে চার হাজার টাকা তুললেও ৪০ হাজারের অঙ্ক শুনে জ্ঞান হারানোর জোগাড় হয় বৃদ্ধার। বেলা বাড়তেই প্রায় একই সমস্যা নিয়ে বহু গ্রাহক ওই ব্যাঙ্কে এসে উপস্থিত হন। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে জানানো হয়, সহায়তা কেন্দ্রের পরিচালক শূন্যের কারসাজি করে হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় ২০ লক্ষ টাকা।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বেথুয়াডহরির তলাহাট এলাকায় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সহায়তা কেন্দ্র পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন শশাঙ্ক কর্মকার নামে এক ব্যক্তি। টাকা জমা, তোলা-সহ সমস্ত আর্থিক লেনদেন হত ওই সহায়তা কেন্দ্র থেকে। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আধার সংযুক্তিকরণ প্রক্রিয়া শেষে আঙুলের ছাপ দিয়ে সহজেই আর্থিক লেনদেন করা যেত। গ্রামের বেশির ভাগ গ্রাহক পড়াশোনায় তেমন সড়গড় না হওয়ায় আঙুলের ছাপ দিয়ে আর্থিক লেনদেন করতেন। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে শশাঙ্ক বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই টাকা জমা দেওয়ার সময় মোট টাকার অঙ্কের থেকে শূন্য কমিয়ে দিতেন। আর টাকা তোলার সময় শূন্যের সংখ্যা বাড়িয়ে দিতেন। শশাঙ্ক এই ভাবে কয়েক লক্ষাধিক টাকার আর্থিক জালিয়াতি করেছেন বলে অভিযোগ। ব্যাঙ্ক সূত্রে খবর, ঘটনার পর থেকেই পলাতক শশাঙ্ক। তাঁর নামে মূল শাখায় ইতিমধ্যেই লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন একাধিক গ্রাহক।

পুলিশকে তদন্তের কথা জানালেও আর্থিক প্রতারণার বিষয়ে আশ্বাস দিতে পারেননি ম্যানেজার। বেথুয়াডহরি ওই ব্যাঙ্কের ম্যানেজার মিঠুন পাল চৌধুরী বলেন, “আমরা এর আগেও শশাঙ্কের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ পেয়েছি। তাঁকে বারবার সতর্ক করা হয়েছে, তবুও তিনি সংযত হননি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বায়োমেট্রিক সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে টাকা তোলার সময় একাধিক শূন্য বাড়িয়ে ও টাকা জমা দেওয়ার সময় একাধিক শূন্য কমিয়ে কয়েক লক্ষ টাকার আর্থিক জালিয়াতি করেছেন তিনি। আমরা আমাদের মতো তদন্ত করছি।” প্রতারিত এক গ্রাহক রানিবালা মণ্ডল বলেন, “চার হাজার টাকা তুলব বলে বোতাম টিপেছিলাম। এখন শুনছি চল্লিশ হাজার তুলে নিয়েছে। আমরা অতো পড়াশোনা জানি না। শূন্যের রকমফের অত বুঝতে পারিনি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE