রাজার শহর কান্দি, একই ভাবে ওই কান্দি বিধানসভা কেন্দ্রটি আদলে কংগ্রেসের ‘শক্ত ঘাঁটি’ বলেই পরিচিত। অতীতের দিকে তাকালে দেখা যায় ওই কেন্দ্রের বাসিন্দারা বারংবার কংগ্রেসের প্রার্থীকে জয়ী করেছেন। এমনকি বছর দু’য়েক আগে লোকসভা ভোটে কংগ্ররেসের অধীর চৌধুরী ওই কেন্দ্র থেকে প্রায় ৩৬ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিলেন। একই ভাবে ওই কেন্দ্রের উপ-নির্বাচনেও নতুন কংগ্রেসের মুখ শফিউল আলম খানও তৃণমূলের গৌতম রায়ের থেকে প্রায় সাড়ে ২১ হাজার বেশি ভোট পেয়ে বিধায়ক হয়েছেন। ফলে কান্দি কংগ্রেসের গড় বলা যেতে পারে।
কিন্তু ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে ওই কেন্দ্র রক্ষা করতে কংগ্রেস যেমন তৈরি আছে ঠিক একই ভাবে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া কান্দি শহর ও ব্লক নেতৃত্বরাও ওই কেন্দ্রটি তৃণমূলের দখলে নেওয়ার মরিয়া চেষ্টা করছে। পিছিয়ে নেই গেরুয়া শিবিরও। ওই কেন্দ্রে ২০০৬ সালে তৎকালীন কংগ্রেসের প্রার্থী তথা কান্দির ‘রাজাবাবু’ অতীশচন্দ্র সিংহের বিরুদ্ধে অধীর চৌধুরী অপূর্ব সরকারকে ‘গোঁজ’ প্রার্থী হিসাবে প্রার্থী করে জয়ী করেছিলেন। তারপর থেকে অপূর্ব কংগ্রেসে যোগ দেন। পর পর দু’বার কংগ্রেসের প্রতীকে জয়ী হয়েছেন। কিন্তু ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটের আগে অধীরের সঙ্গ ছেড়ে সদ্য প্রাক্তন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে তৃণমূলে নাম লেখায়। পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়ন পত্র দাখিল করা নিয়ে অধীরকে বাধা দেওয়া হয়েছিল। সেটাও আবার অধীরের নিজে হাতে তৈরি কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া নেতৃত্বদের হাতে। যদিও ওই ঘটনাটি কান্দির সাধারণ মানুষ ভাল ভাবে নেননি বলেও রাজনৈতিক কারবারিদের। ২০১৯ সালে ফের লোকসভা ভোটে অধীরের বিরুদ্ধে অপূর্ব প্রার্থী হন। তখন কান্দি ব্লক ও কান্দি পুরসভা সবই তৃণমূলের দখলে। পুরসভায় অপূর্ব আর কান্দি পঞ্চায়েত সমিতিতে অপূর্বের দাদা পার্থপ্রতিম সরকার। তারপরেও ২০১৯ সালে কান্দি বিধানসভা থেকে অধীর প্রায় ৩৬ হাজার ভোটে লিড করে। একই ভাবে ওই কেন্দ্রের বিধায়ক অপূর্ব বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর বিধানসভা নির্বাচন হয়। সেই সময়েও কংগ্রেসের নতুন মুখ শফিউল আলম খানকে জয়ী করে কান্দি।
শুধু ব্লকের মানুষ নয় কান্দি পুরসভার মানুষও তৃণমূলের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে দেখা গিয়েছে।
কিন্তু এবার আসন্ন বিধানসভা ভোটে বিজেপিও ঘারে নিঃশ্বাস ফেলছে। কারণ তৃণমূলের একের পর এক নেতা গেরিয়া শিবিরে নাম লেখানোর জন্য পা বাড়িয়ে আছে। তার প্রভাব কান্দিতেও কিছুটা হলেও পড়েছে। কান্দির বিজেপি নেত্রী বিনীতা রায় বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকারের উন্নয়ন মানুষ দেখতে পাচ্ছেন। তাই নতুন করে মানুষকে বোঝাতে হচ্ছে না। মানুষ স্বেচ্ছায় বিজেপির দিকে ভর করছে।’’ যদিও কান্দি পুরসভার প্রশাসক ও কান্দির প্রাক্তন বিধায়ক জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র অপূর্ব সরকার বলেন, “রাজ্য সরকারের উন্নয়ন দেখে মানুষ তৃণমূলকেই সমর্থন করবেন। উন্নয়ন কিছু কম হয়নি। গরিব মানুষদের পাকা বাড়ি দেওয়া থেকে গ্রামে গ্রামে ঢালাই রাস্তা কী হয়নি।” কংগ্রেসের বিধায়ক শফিউল আলম খানও উন্নয়নের দাবি করে বলেন, “সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে যেখানে উন্নয়নের প্রয়োজন আছে সেখানে উন্নয়নের কাজ হচ্ছে। করোনাভাইরাস রোধ করতে তৃণমূলের নেতারা যে ভাবে চাল, ডাল বিলি করেছে সেটা কোথা থেকে পেয়েছে!’’