মেডিক্যাল অফিসার থেকে শুরু করে নার্সিংস্টাফ-সহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের তাঁদের নিজ নিজ হেডকোয়ার্টারে থাকার নির্দেশ দিল জেলা স্বাস্থ্য দফতর। এ ছাড়া জেলা কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া সদর দফতর ছাড়া যাবে না বলে নির্দেশিকায় বলা হয়েছে। সূত্রের খবর, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রুখতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সোমবার জেলা স্বাস্থ্য দফতর থেকে এমন নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া, এ দিনই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, জেলা স্বাস্থ্য দফতর ও মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের ভিডিয়ো কনফরেন্স হয়েছে। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছেন, তেমনই মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজারের কালোবাজারি রুখতে মাঠে নামার নির্দেশ দিয়েছেন।
সোমবার মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলেন, ‘‘করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে আমরা যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়েছি। রাজ্য সরকারের নির্দেশ মতো আমরা কাজ করছি। এক দিকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে, অন্য দিকে আমরা প্রস্তুতিও নিয়েছি।’’
২০১৮ সালের ১২ ডিসেম্বর বহরমপুর পুরবোর্ডের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন না হওয়ায় তার পরের দিন থেকে বহরমপুর পুরসভায় প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এবারে কি মুর্শিদাবাদের বাকি ৬ টি পুরসভায় বহরমপুরের মতো প্রশাসক বসতে চলেছে— সোমবার কলকাতায় রাজ্য নির্বাচন কমিশনে সর্বদলীয় বৈঠক শেষে নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর জেলা জুড়ে এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে শুরু করেছে। আগামী মে মাসে কান্দি, জঙ্গিপুর, ধুলিয়ান, বেলডাঙা, জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জম পুরসভা এবং জুলাই মাসে মুর্শিদাবাদ পুরসভার মেয়াদ উত্তীর্ণ হবে।
পুর নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়ার ফলে এই সব পুরসভাতেও প্রশাসক নিয়োগের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে এই সময়ে পর্যাপ্ত পুর পরিষেবা মিলবে কি না, তা নিয়ে অনেকেই আশঙ্কা করছেন। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির দাবি, বিপর্যয় বলে কয়ে আসে না। ফলে আগে পুরভোট করলে ভোটকে কেন্দ্র করে আজকে করোনভাইরাস সংক্রমণের মতো এমন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সামনে আমাদের পড়তে হত না।
মুর্শিদাবাদের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রশান্ত বিশ্বাস বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত জেলায় কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হননি। আইসোলেশন ওয়ার্ডেও কেউ ভর্তি নেই।’’ মেডিক্যাল অফিসার ও অন্য স্বাস্থ্য কর্মীদের হেডকোয়ার্টারে থাকার বিষয়ে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সতকর্তা মূলক ব্যবস্থা হিসেবে তাঁদের নিজের নিজের হেডকোয়ার্টারে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’
জেলা প্রশাসন সূ্ত্রের খবর স্কুল কলেজ আইসিডিএস কেন্দ্রগুলিতে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করার পাশাপাশি বড় জমায়েত যাতে না হয়, তা দেখার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ ছাড়া সরকারি সভাগৃহে অনুষ্ঠান বন্ধ রাখা, যত কম সংখ্যক বৈঠক করা যায় তার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মেলার মতো বড় জমায়েত বন্ধ করতে হবে। এমনকি ধর্মীয় অনুষ্ঠান হলে জমায়েত কম করার জন্য উদ্যোক্তাদের সচেতন করার কথা বলা হয়েছে।
রাজ্য জুড়ে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের আকাল দেখা দিয়েছে। লোকজন দোকানে গিয়ে সে সব পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী জেলা প্রশাসনকে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের কালোবাজারি রুখতে মাঠে নামার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রয়োজনে কালোবাজারিদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন।
বহরমপুর শহরের অদূরে বানজেটিয়ায় কর্মতীর্থে (মার্কেট কমপ্লেক্সে) কোয়ারান্টিন কেন্দ্র আজ মঙ্গলবার থেকে চালু হবে। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর সোমবার থেকে ওই কেন্দ্রে শয্যা পাতার কাজ শুরু হয়েছে। মঙ্গলবারও শয্যা পাতার পাশাপাশি চিকিৎসক, নার্সিংস্টাফ-সহ অন্য কর্মীদের সেখানে পোস্টিং দেওয়া হবে।