Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Schools

স্কুল খুললেও সর্বত্র মানা হল না স্বাস্থ্যবিধি

১১ মাস পর বিদ্যালয় খুললেও পড়ুয়াদের উপস্থিতি ছিল হাতে গোনা। অনেক পড়ুয়ার অভিভাবকই ধর্মঘট উপেক্ষা করতে পারে নি।

 বিধিসম্মত: বহরমপুরের একটি বিদ্যালয়ে ছাত্রীদের হাত স্যানিটাইজ় করা হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র।

বিধিসম্মত: বহরমপুরের একটি বিদ্যালয়ে ছাত্রীদের হাত স্যানিটাইজ় করা হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা 
বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৬:৫১
Share: Save:

বাম-কংগ্রেসের ডাকা বারো ঘণ্টার ধর্মঘট উপেক্ষা করে সরকারি নির্দেশে খুলল জেলার প্রায় সব স্কুলই। ধর্মঘটের প্রভাবে বিদ্যালয় বন্ধ রেখেছিলেন শমসেরগঞ্জের সাহেবনগর হাই স্কুল কতৃপক্ষ। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এনামুল হকের দাবি, “আমরা বিদ্যালয় খোলা রেখেছিলাম কিন্তু ধর্মঘটিরা বিদ্যালয়ের মূল প্রবেশদ্বারে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ায় পড়ুয়া বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারেনি।”

অতিমারিকালে বিদ্যালয় খুললেও কোনও বিদ্যালয়ে সরকারি বিধিনিষেধ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে দেখা গেল, কোথাও বিধিনিষেধ ঝুলিয়েই দায় সারলেন বিদ্যালয়ের প্রধানরা। এমনকি বেশ কিছু বিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের মুখে ছিল না ফেসকভার, এমনকি পায়ে জুতোও। তবে নিয়মরক্ষার স্যানিটাইজ়ারের বন্দোবস্ত ছিল প্রায় সব বিদ্যালয়েই।

কিন্তু ১১ মাস পর বিদ্যালয় খুললেও পড়ুয়াদের উপস্থিতি ছিল হাতে গোনা। অনেক পড়ুয়ার অভিভাবকই ধর্মঘট উপেক্ষা করতে পারে নি। পাশাপাশি অনেকে কোভিড পরিস্থিতিতে প্রথম দিন বিদ্যালয়ে আসার বিষয়ে দোটানা থাকায় বিদ্যালয়ে উপস্থিতি এড়িয়ে গিয়েছেন প্রথম দিন। অনেক বিদ্যালয় প্রধানদের দাবি, সপ্তাহের শেষ দিন আজ শনিবার বিদ্যালয় স্বাভাবিক খোলা থাকলেও পড়ুয়াদের হাজিরা কম থাকবে।

চলতি সপ্তাহের ৯ তারিখ মুখ্যমন্ত্রীর জেলা সফরে ভিন জেলার পুলিশ মুর্শিদাবাদে এসেছিলেন। তাঁদের থাকার জন্য শহরের কয়েকটি বিদ্যালয় কতৃপক্ষকে ১২ তারিখ পর্যন্ত বিদ্যালয় অধিগ্রহণ করবার লিখিত আবেদন জানিয়েছিল জেলা পুলিশ। ১১ তারিখ মুর্শিদাবাদ থেকে বাইরের জেলার পুলিশ চলে গেলেও সময়াভাবে স্যানিটাইজ় করা, পড়ুয়াদের জন্য বসার বেঞ্চের ব্যবস্থা করতে পারেনি সেই সব বিদ্যালয়। ফলে ওই বিদ্যালয়গুলি কেউ পুরো বন্ধ রেখেছেন শুক্রবার, কেউ নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির সবকটি ক্লাস চালু
করতে পারেননি।

বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর জেলা সফরের দরুণ পুলিশ ১২ তারিখ পর্যন্ত বিদ্যালয় অধিগ্রহণ করেছিল। সেহেতু আমরা সরকারি নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও ক্লাস শুরু করতে পারি নি।” তিনি বলেন, “নিয়ম অনুযায়ী বিদ্যালয় স্যানিটাইজ় করতে হবে। তাই বিদ্যালয় স্যানিটাইজ় করে বিদ্যালয়ের পঠন পাঠন শুরু করবো।” গোরাবাজার শিল্পমন্দির গার্লস হাইস্কুলও পুলিশ অধিগ্রহণ করেছিল। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মৃন্ময়ী ঘোষ বলেন, “পুলিশ বিদ্যালয় অধিগ্রহণ করে থাকায় আমরা সব ঘর পরিষ্কার করে স্যানিটাইজ করতে পারিনি। তাই দুটি ক্লাস বাদ দিয়ে অন্যদের বিদ্যালয়ে আসতে বলেছিলাম।”

তবে ধুলিয়ান, শমসেরগঞ্জ সহ জেলার অন্যত্র বিদ্যালয় খোলার ক্ষেত্রে ধর্মঘটের কোন প্রভাব পড়েনি।

এদিকে টানা এগারো মাস পড়ে বিদ্যালয় খোলায় উপস্থিত পড়ুয়ারা খুশি। ঘরবন্দি থাকতে তাদের আর ভাল লাগছিল না বলেই জানায় একাংশ পড়ুয়া। বহরমপুর জেএনএকাডেমির দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া অঙ্কিত ধরের দাবি, “বহুদিন পরে বিদ্যালয়ের পোশাকে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে ক্লাসরুমে দেখা হওয়ায় আনন্দ হচ্ছে।” বিদ্যালয়ের কঠোর করোনা বিধি উপেক্ষা করতেও পিছপা হয় নি তারা। কান্দি রাজ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভূমানন্দ সিংহ বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন পর স্কুল চালু হওয়ায় আমাদের সঙ্গে পড়ুয়ার খুশি। তবে এদিন বন্‌ধের কারণে পড়ুয়ার সংখ্যা কম এসেছে। কিন্তু আগামী কাল পড়ুয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।"

সারগাছি রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের প্রধান শিক্ষক সুদীপ্ত চক্রবর্তী বলেন, “ধর্মঘটের দিনও স্বতঃস্ফুর্তভাবে ছাত্ররা বিদ্যালয়ে এসেছিল। বহুদিন পর ছাত্র শিক্ষক মুখোমুখি হয়ে ভাল লাগছে।” জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক অমর কুমার শীল বলেন, “জেলার সমস্ত মাদ্রাসা ও উচ্চবিদ্যালয়গুলিতে নিয়ম মেনে পড়ুয়ারা এসেছিলেন। সেখানে ক্লাসও হয়েছে।” জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক সব বিদ্যালয় খোলার দাবি করলেও জানা যায়, আজ শনিবার অর্ধদিবস ও কাল রবিবার পূর্ণদিবস বিদ্যালয় বন্ধ থাকবে। সোমবার বাদ দিয়ে মঙ্গলবার সরস্বতী পুজো। পুজোর পরের দিন বেশ কিছু বিদ্যালয় খোলার কথা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Schools COVID-19 protocols
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE