Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Murshidabad

গরু পাচার-কাণ্ডে এ বার সিআইডির হাতে গ্রেফতার এনামুল-ঘনিষ্ঠ জানেরুল! আঙুল বিএসএফের দিকেও

সিআইডি সূত্রে খবর, বিএসএফের হাতে ধরা পড়া দাবিহীন গরু ‘মৃত’  দেখিয়ে পাচার করা হত। তাতে বিএসএফের সঙ্গে রাজ্য পুলিশের কয়েক জনের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম ছিলেন এই জানেরুল।

গরু পাচার কাণ্ডে গ্রেফতার।

গরু পাচার কাণ্ডে গ্রেফতার। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৬:০৮
Share: Save:

এ বার গরু পাচার-কাণ্ডে রাজ্যের সিআইডির হাতে গ্রেফতার হলেন এক ব্যক্তি। শনিবার সন্ধ্যায় জানেরুল শেখ নামে ওই ব্যক্তিকে মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জের এলআইসি মোড় থেকে পাকড়াও করা হয়। রবিবার ধৃতকে বহরমপুরে সিআইডির বিশেষ আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁকে ১৪ দিনের হেফাজতের নির্দেশ দেন।

সিআইডি সূত্রে খবর, বিএসএফের হাতে ধরা পড়া দাবিহীন গরু ‘মৃত’ দেখিয়ে পাচার করা হত। তাতে বিএসএফের সঙ্গে রাজ্য পুলিশের কয়েক জনের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম ছিলেন এই জানেরুল। বিএসএফের উচ্চপর্যায়ের কর্তাদের সঙ্গে রাজ্য পুলিশের সমন্বয় তৈরি করতেন এনামুল-ঘনিষ্ঠ ওই ব্যক্তি।

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফের হাতে আটক হওয়া প্রায় ১৭০০ গরুকে মৃত দেখিয়ে রাজ্য পুলিশের সহায়তায় সেগুলিকে বাংলাদেশে পাচার করেন জানেরুল। এমনটাই জানা গিয়েছে সিআইডি সূত্রে। ঘটনার সূত্রপাত ২০১৯ সালে। রঘুনাথগঞ্জ সীমান্তে সে বার প্রায় ১৯০০ গরু আটক করে বিএসএফ। এর বেশ কিছু দিনের মধ্যে ওই গরুগুলি রাজ্য পুলিশকে হস্তান্তর করে তারা। রাজ্য পুলিশ তাদের অধীনস্থ সীমান্তবর্তী এলাকার তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা সিমুলিয়া গ্রামের একটি খোঁয়াড়ে গরুগুলিকে মজুদ করে রাখে। স্থানীয় সূত্রে খবর, এই খোয়ার মালিক এনামুলের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। এই খোঁয়াড়ে এনামুলকে বেশ কয়েকবার আসতেও দেখেছেন তাঁরা। রঘুনাথগঞ্জ এলাকার সিমুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা আতিফ লস্করের কথায়, ‘‘দু’দিন পর পর এনামুলকে এই খোঁয়াড়ে আসতে দেখেছি। তার পর ওই গরুগুলো রাতারাতি খোঁয়াড় থেকে উধাও হয়ে যায়!’’ ওমরপুর এলাকার গরু ব্যবসায়ী আরিজুন শাহের কথায়, ‘‘রাতের অন্ধকারে গরুগুলোকে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী মোটা অঙ্কের বিনিময়ে বিক্রি করে দেয়।’’ তবে বিএসএফের মদত ছাড়া এগুলো ভিন্‌দেশে পাচার হতে পারে না বলে মন্তব্য করেন আরিজুন।

সূত্রের খবর, পুলিশ সরকারি ভাবে ওই গরুগুলিকে ‘মৃত’ বলে দেখিয়েছে। বিএসএফের হাতে আটক হওয়া এই বিপুল পরিমাণ দাবিহীন গরু রাজ্য পুলিশের খাতায় হঠাৎ করেই কী ভাবে ‘মৃত’ হয়ে গেল, তা নিয়ে সন্দেহ বাড়ে গোয়েন্দাদের। শুরু হয় তদন্ত। রাজ্য গোয়েন্দাদের দাবি, বিএসএফের হাতে আটক দাবিহীন জীবিত গরুগুলোকে মৃত দেখানোর পিছনে বিএসএফ এবং রাজ্য পুলিশের একাংশ রয়েছে। তা ছাড়া স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারাও যুক্ত থাকতে পারেন। জানেরুলকে গ্রেফতার করে এই বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের শিকড়ে পৌঁছতে চাইছেন তদন্তকারীরা। কারা এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত, কোনও সরকারি আধিকারিক এই বেআইনি কারবারে মদত দিতেন কি না, সেই সব তথ্য জানার চেষ্টা করছেন তাঁরা।

কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে দুই এবং রাজ্য পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া আরও দুই পাচারকারীর কাছ থেকে পাওয়া তথ্য মিলিয়ে গরু পাচার-কাণ্ডের মূলচক্রীর কাছে পৌঁছতে চাইছেন তদন্তকারীরা। তবে তদন্ত যত এগোচ্ছে, তাতে গরু পাচার-কাণ্ডে মুর্শিদাবাদের যোগ ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা শাখার হাতে গ্রেফতার হওয়া সঞ্জয় মালিক, আব্দুল বারিক এবং লতিফ হালসনাকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করতে চাইছে সিআইডি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE