Advertisement
E-Paper

খেলার মাঠে দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্য, উদাসীন প্রশাসন

ঘটনা ১: প্রতিদিনের মতো বুধবার করিমপুরের রেগুলেটেড মার্কেটে প্রাতঃভ্রমণে গিয়েছিলেন স্থানীয় এক ব্যবসায়ী। সঙ্গীরা তখনও মাঠে হাজির না হওয়ায় তিনি একাই হাঁটতে শুরু করেছিলেন। কিছুটা হাঁটার পরেই থমকে দাঁড়িয়ে পড়েন তিনি। মাঠের সবুজ ঘাসের উপরে পড়ে রয়েছে অজস্র কাচের টুকরো। কে বা কারা মদের বোতল ভেঙে ফেলে গিয়েছে। ওই ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘আর একটু হলেই তো রক্তারক্তি কাণ্ড ঘটত মশাই!’’

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৫ ০১:২৯
খেলাধূলার একমাত্র ভরসা রেগুলেটেড মার্কেটের সেই মাঠ। ছবি: কল্লোল প্রামাণিক।

খেলাধূলার একমাত্র ভরসা রেগুলেটেড মার্কেটের সেই মাঠ। ছবি: কল্লোল প্রামাণিক।

ঘটনা ১: প্রতিদিনের মতো বুধবার করিমপুরের রেগুলেটেড মার্কেটে প্রাতঃভ্রমণে গিয়েছিলেন স্থানীয় এক ব্যবসায়ী। সঙ্গীরা তখনও মাঠে হাজির না হওয়ায় তিনি একাই হাঁটতে শুরু করেছিলেন। কিছুটা হাঁটার পরেই থমকে দাঁড়িয়ে পড়েন তিনি। মাঠের সবুজ ঘাসের উপরে পড়ে রয়েছে অজস্র কাচের টুকরো। কে বা কারা মদের বোতল ভেঙে ফেলে গিয়েছে। ওই ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘আর একটু হলেই তো রক্তারক্তি কাণ্ড ঘটত মশাই!’’

ঘটনা ২: ওই একই কারণে দিনকয়েক আগের এক সকালে মার্কেটের মাঠে এসে অনুশীলন করা হল না সিএবি পরিচালিত ক্রিকেট কোচিং দলকে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কাচের টুকরো পরিষ্কার করতেই সময় লাগলো পাক্কা চার ঘণ্টা। অনুশীলন না হওয়ায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ ওই খেলোয়াড়রা বলছিলেন, ‘‘এ রকম চলতে থাকলে এই মাঠে তো খেলাধুলো শিকেয় উঠবে।’’

করিমপুর এলাকায় এই রেগুলেটেড মার্কেটের মাঠই একমাত্র ভরসা আট থেকে আশি সকলের। প্রাতঃভ্রমণ, খেলাধুলো থেকে শুরু করে নানা অনুষ্ঠান হয় এই মাঠেই। সেই মাঠ এমনিতেই দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। তার উপরে সম্প্রতি শুরু হয়েছে এই নতুন দৌরাত্ম্য।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিোগ, সন্ধ্যার পর থেকে এই মাঠ ক্রমশ চলে যাচ্ছে দুষ্কৃতীদের দখলে। রাতের অন্ধকারে অবাধে চলে মদের আসর। আসর শেষে মাঠের মধ্যেই মদের বোতল ভেঙে রেখে দেয় তারা। পড়ে থাকে ঠাণ্ডা পানীয়ের বোতল, মাংসের হাড়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘দিনকয়েক আগে ওই মাঠের পাশ দিয়ে আসার সময় দেখলাম অপরিচিত কয়েকজন লোক বসে মদ খাচ্ছে। নিষেধ করতে গেলে উল্টে আমাকেই দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়।’’

এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে কমবেশি অনেকেরই। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশ প্রশাসন ও মার্কেট কর্তৃপক্ষের একাংশ সবকিছু জেনেও কোনও পদক্ষেপ করছে না। এই মাঠে বছর কয়েক আগে আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু বহুদিন ধরেই সে আলোও আর জ্বলে না। ফলে সন্ধ্যার পরে ওই মাঠের বেশিরভাগ এলাকা অন্ধকারে ডুবে যায়। আর সেই সুযোগটাই কাজে লাগায় দুষ্কৃতীরা। এলাকার প্রাক্তন খেলোয়াড় তথা পেশায় শিক্ষক মানবেন্দ্র বিশ্বাস বলেন, “এলাকার খেলার মাঠ সেই এলাকার পরিচয় দেয়। বর্তমানে মাঠের সংখ্যা ক্রমশ কমে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় খেলার মাঠে যদি এমন অত্যাচার চলে তাহলে তো খুব মুশকিল। এরপর থেকে তো আর কেউ মাঠে যেতে চাইবেন না। প্রশাসনের উচিত অবিলম্বে এর বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়া।’’

করিমপুর আঞ্চলিক ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক সুজিত বিশ্বাস জানান, করিমপুর ১ ও ২ ব্লকে এখন হাতে গোনা কয়েকটি মাঠ রয়েছে। তার মধ্যে এই রেগুলেটেড মার্কেটের মাঠ অন্যতম। এই মাঠেই সারা বছর লিগ-সহ অন্যান্য খেলা চলে। ক্রিকেটে জুনিয়র লিগ, সিনিয়র লিগের খেলা থেকে শুরু করে ফুটবল ও অন্যান্য সব খেলা হয় এই মাঠে। কিছু সমাজবিরোধী লোকজন এই মাঠটিকে নষ্ট করতে চাইছে।

তিনি বলেন, ‘‘আমরা ঘটনার কথা লিখিত ভাবে জেলাশাসক, জেলার পুলিশ সুপার, জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও রেগুলেটেড মার্কেট কমিটিকে জানিয়েছি।’’

জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, এমন অভিযোগ পাওয়ার পর থেকে মাঝে মধ্যেই ওই ওই মাঠে টহল দেওয়া হয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কাউকে ধরা যায়নি। করিমপুর ১ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান কংগ্রেসের তারক সরখেল বলেন, ‘‘এই মাঠে যাতে এমন কাজ না হয় তার জন্য রেগুলেটেড মার্কেট কমিটির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। ওদের নিজস্ব পাহারাদার আছে। তারা ঠিকমতো নজর রাখলেই এমন ঘটনা এড়ানো সম্ভব।’’

তারকবাবু জানান, ওই মাঠে যে দুটো উচ্চ বাতিস্তম্ভ রয়েছে তা কিছুদিন জ্বলার পরে বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। বাতিগুলো জ্বললে মাঠে অন্ধকার থাকবে না। কেউ খারাপ কাজ করতে সাহসও পাবে না।

নদিয়া জেলা রেগুলেটেড মার্কেট কমিটির সম্পাদক দীপক বিশ্বাস বলেন, “আমাদের আগের কিছু বিদ্যুৎ বিল বাকি ছিল। আমরা দু’দিন আগেই সেই বকেয়া বিল শোধ করেছি। জেলাশাসকের অনুমতিও মিলেছে। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি মাঠের উচ্চ বাতিস্তম্ভের বাতি জ্বালাতে পারব। আমাদের পাহারাদারদেরও বলছি আরও কড়া নজর রাখতে।’’

Karimpur Police Playground Manabendra Biswas Cricket Dipak biswas
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy