শুধু বন্ধের বিরোধিতাই নয়, সাধারণ মানুষের হয়রানি রুখতে অতিরিক্ত বাস চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু বৃহস্পতিবার খোদ মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতি সত্ত্বেও নদিয়া জেলা দেখল উল্টো চিত্র। মুখ্যমন্ত্রীর সভাকে সফল করতে নদিয়া জেলা প্রশাসন ও তৃণমূল যে ভাবে জেলার সিংহভাগ বাস তুলে নিয়েছিল। আর তার ফলে চরম হয়রান হতে হল সেই সাধারণ মানুষকেই। আর তৃণমূল সরকার ও মুখ্যমন্ত্রীর এমন ভূমিকাকে দ্বিচারিতা বলেই কটাক্ষ করলেন বিরোধীরা।
বুধবার নবদ্বীপে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে জনসভায় তিনি হাত জোড় করে অনুরোধ করেছিলেন—‘‘ওই বন্ধকে কেউ সমর্থন করবেন না। আমাদের কালকে নির্মল বন্ধন প্রোগ্রাম। আমি নিজে কাল কৃষ্ণনগরে থাকব।’’ বৃহস্পতিবার কৃষ্ণনগরে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই তাঁর অনুরোধকে উপেক্ষা করে কৃষ্ণনাগরিকেরা যে ভাবে সর্বাত্মক বন্ধ পালন করলেন তাতে মুখ্যমন্ত্রী তথা শাসক দলের কাছে অন্যরকম বার্তা গেল বলেই মনে করছেন বিরোধীরা। এ দিন কৃষ্ণনগরের সভায় অবশ্য বন্ধ নিয়ে একটি শব্দও খরচ করলেন না মুখ্যমন্ত্রী। তিনি শুধু বলেন, ‘‘কর্মনাশা নয়, কর্মঠাসা বাংলা গড়তে হবে।’’ যা নিয়েও বিদ্রুপ করে সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে বলেন, ‘‘নিজে চোখেই সব দেখার পরে কোন মুখে উনি বন্ধ নিয়ে বলবেন!’’
খোদ নদিয়ায় এসে মুখ্যমন্ত্রী বন্ধের প্রবল বিরোধিতা করছেন। ফলে তৃণমূল ও জেলা প্রশাসন উভয়ের কাছেই এটা ছিল মুখ্যমন্ত্রীর মুখ রক্ষার চ্যালেঞ্জ। আর সেই কারণই বন্ধ যাতে সফল না হয় তার জন্য কোনওরকম চেষ্টার ত্রুটি রাখেনি তারা। অনুরোধে কাজ না হলে হুমকিও দেওয়া হয়েছিল ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বাসমালিকদেরও। বন্ধের পক্ষে যা প্রচার হয়েছিল তার থেকে বহুগুণ বেশি প্রচার হয়েছিল বন্ধের বিরোধিতায়। কিন্তু গলদ থেকে গিয়েছিল গোড়াতেই! কী রকম?
সাধারণ মানুষ যাতে হয়রান না হন তার জন্য মুখ্যমন্ত্রী বন্ধের বিরোধিতা করছেন। অতিরিক্ত বাস চালানো হচ্ছে রাজ্য জুড়ে। অথচ নদিয়া দেখল উল্টো চিত্র। কৃষ্ণনগর সরকারি কলেজের মাঠে মুখ্যমন্ত্রীর সভাকে সফল করতে জেলা প্রশাসন ও তৃণমূল জেলার সিংহভাগ বাস তুলে নিয়েছিল। জেলার বাসমালিক সমিতির পক্ষে অসীম দত্ত বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর সভার জন্য প্রশাসন বাস চাইলে আমরা তা দিতে বাধ্য থাকি। এ ছাড়াও জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাস তুলে নেওয়া হয়েছিল। বাকি যে বাসগুলি পড়ে ছিল সেগুলোও শ্রমিকেরা চালাতে চাননি।’’
কৃষ্ণনগর থেকে করিমপুরে স্কুলে যাওয়ার সময় চরম হয়রান হয়েছেন এক শিক্ষক। তিনি বলছেন, ‘‘খোদ নদিয়ায় দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে বন্ধের বিরোধিতা করেছিলেন, তাতে আমাদের মনে হয়েছিল যে এই জেলায় অন্তত সবকিছু স্বাভাবিক থাকবে। কিন্তু বাস্তবে তা হল না।’’ শেষ পর্যন্ত তিনি একটি সব্জির গাড়িতে স্কুলে গিয়েছিলেন।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে বলেন, ‘‘এটা তো নির্ভেজাল দ্বিচারিতা! একদিকে মুখ্যমন্ত্রী সাধারণ মানুষের অসুবিধা হবে দাবি করে বন্ধের বিরোধিতা করছেন। অন্য দিকে তাঁরই সভা ভরাতে তাঁরই প্রশাসন ও দল জেলার প্রায় সব বাসই তুলে নিচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর উতিচ সবার আগে তাঁর নিজের অবস্থান ঠিক করা।’’
জেলাশাসক পি বি সালিম অবশ্য এতে দোষের কিছু দেখছেন না। তাঁর কথায়, ‘‘নির্মল বাংলা দিবসেই এ দিন নদিয়াকে নির্মল জেলা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। ফলে তাঁর অনুষ্ঠানে এই বাসের ব্যবস্থা না করলে এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত লোকজন দূরদুরান্ত থেকে আসতেন কী ভাবে?’’ কিন্তু তার জন্য যে বিরাট সংখ্যক মানুষকে হয়রান হতে হল? এ বার জেলাশাসক নিরুত্তর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy