বাড়ির দলিল বন্ধক রেখে রাষ্টায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন মাস্টারমশাই। দেনা শোধ হয়ে গিয়েছে কবেই। তার পর দু’বছর ধরে ব্যাঙ্কের দরজায় ঘুরেও সেই দলিল তো ফেরত পেলেনই না, উল্টে কপালে কখনও জুটল ধমক, কখনও আবার নকল দলিল তোলার পরামর্শ।
শেষ পর্যন্ত পুলিশের দ্বারস্থ হলেন সাতষট্টি বছরের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বিদ্যুৎবরণ ভৌমিক।
নবদ্বীপ প্রাচীনমায়াপুর জামতলার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বিদ্যুৎবরণ ভৌমিক গত ২০০৩ সালের মে মাসে বাড়ির দলিল বন্ধক রেখে এলাহাবাদ ব্যাঙ্কের নবদ্বীপ পোড়ামাতলা শাখা থেকে এক লাখ পঁচিশ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। ওই টাকায় তিনি তাঁর বসত বাড়ি সংস্কার করান। ২০১৫ সালের মার্চ মাসে বিদ্যুৎবাবু ব্যাঙ্কের দেনা সুদ সমেত পরিশোধ করেন। ওই বছর ২৬ মার্চ ব্যাঙ্ক লিখিত ভাবে জানিয়ে দেয় বিদ্যুৎবরণ ভৌমিকের কাছে ব্যাঙ্কের কোনও পাওনা নেই।
বিদ্যুৎবাবু বলেন, “ওই ২৬ মার্চেই আমি আমার বাড়ির দলিলটি ফেরত চাই। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ তখন জানান কয়েক দিনের মধ্যেই দলিলটি দিয়ে দেবেন। সেই থেকে টানা দু’বছর ধরে ঘুরেও দলিল ফেরত পেলাম না। এ নিয়ে বহু চিঠিচাপাটি করেছি। সৌজন্যের খাতিরে সে সব চিঠির উত্তর দেওয়া তো দূরে থাক এখন ব্যাঙ্কে গেলেই আমার সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করছেন ম্যানেজার। বাধ্য হয়ে পুলিশের সাহায্য চেয়েছি।” কার্যত হেনস্থার ভয়ে ব্যাঙ্কে যেতে আর সাহস পাচ্ছেন না প্রবীণ ওই শিক্ষক।
কিন্তু কেন দেনা শোধ হওয়ার দু’বছর পরেও দলিল ফেরত দেওয়া হল না, তা এখনও স্পষ্ট নয় বিদ্যুৎবাবুর কাছে। অবসরপ্রাপ্ত ওই শিক্ষককে সম্প্রতি ওই ব্যঙ্কের নবদ্বীপ পোড়ামাতলা শাখার ম্যানেজার একটি নকল দলিল তোলার পরামর্শ দিয়েছেন। বিদ্যুৎবাবু বলেন, “আমাকে এক দিন ম্যানেজার বললেন আপনি নকল দলিল তুলে নিন। যা খরচ হবে তার অর্ধেক ব্যাঙ্ক দেবে। আমার প্রশ্ন কেন আমার মূল দলিলের কী হল সে বিষয়ে ব্যাঙ্ক আজ পর্যন্ত কিছুই জানায়নি। নকল দলিলের প্রশ্ন আসছে কেন? তা হলে কি ব্যাঙ্ক দলিল হারিয়ে ফেলেছে? স্পষ্ট করে সেটা জানাচ্ছে না কেন?”
ব্যাঙ্কের নবদ্বীপ পোড়ামাতলা শাখার ম্যানেজার অরবিন্দপ্রসাদ চৌধুরীকে প্রশ্ন করা হলে ব্যঙ্গের সুরে জানতে চান— “কাগজে ছাপা হলেই কি দলিল পেয়ে যাবেন? ওনাকে ডুপ্লিকেট দলিল তুলতে হবে।” কিন্তু আসল দলিল কোথায় গেল? জবাবে তিনি বলেন “ বলতে বাধ্য নই। যা পারেন করুন।”
এ বিষয়ে এলাহাবাদ ব্যাঙ্কের অ্যাসিস্ট্যান্ট জোনাল ম্যানেজার হর্ষ শাহ বলেন, “কেন এত দিন উনি দলিল ফেরত পাননি সেটা খতিয়ে দেখছি। তবে সবার আগে বিদ্যুৎবাবু যাতে দ্রুত দলিল হাতে পান, সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy