E-Paper

স্মৃতি ছড়িয়ে জেএনএমে, বিচার-দাবিও  

শনিবার সকালে, শিয়ালদহ আদালত এই মামলায় ধৃত সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করার আগেই জেএনএমে গিয়ে দেখা যায়, সব কিছুই চলছে আপাত স্বাভাবিক নিয়মে।

সুদেব দাস, অমিত মণ্ডল

শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:৫০
এখনও রয়েছে অভয়ার বিচারের দাবি। শনিবার জেএনএমে।

এখনও রয়েছে অভয়ার বিচারের দাবি। শনিবার জেএনএমে। নিজস্ব চিত্র।

কল্যাণী জেএনএমে জরুরি বিভাগের প্রবেশপথে ডান দিকের দেওয়ালে তাকালেই চোখে পড়বে, দেওয়ালের পাশে পড়ে রয়েছে ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানের পুরনো সাইনবোর্ড। আর সাদা দেওয়ালে লালে-কালোয় বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজিতে লেখা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’।

কোথাও আবার ধর্ষণ বন্ধের দাবিতে প্রতীকী চিত্র, সঙ্গে ধর্ষণ-খুনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ভাষা। দু'পা এগোলেই হাসপাতাল ভবনে প্রবেশের দরজা। তার পাশেই একটি টেবিলে রাখা আর জি করে নিহত তরুণী চিকিৎসকের প্রতীকী ছবি। ছোট্ট একটা বোর্ড ঝুলছে ছবির পাশে, কিছুটা কাত হয়ে। তাতেও লেখা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’।

উচ্চ মাধ্য়মিকের পরে নদিয়ার এই মেডিক্যাল কলেজ থেকেই এমবিবিএস পাশ করেছিলেন নির্যাতিতা তরুণী। পাঁচটা বছর এই কলেজেরই বিভিন্ন ওয়ার্ড, ক্যান্টিন, সেমিনার হলে হই-হুল্লোড় করে দিন কেটেছে তাঁর। কত নতুন বন্ধুত্ব হয়েছে। জীবনে এসেছে প্রেম। এই কলেজের প্রতি তাঁর নাড়ির টান, বহু স্মৃতির বন্ধন। কল্যাণী জেএনএম থেকে স্নাতক হয়ে স্নাতকোত্তর পর্বে তাঁর আর জি করে যাওয়া।

গত বছর ৯ অগস্ট রাতেই শেষ হয়ে গিয়েছে সেই সব কিছু। সেই ধাক্কা জেএনএমের শিক্ষক থেকে পড়ুয়া অনেকেই কাটিয়ে উঠতে পারেননি এখনও।

শনিবার সকালে, শিয়ালদহ আদালত এই মামলায় ধৃত সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করার আগেই জেএনএমে গিয়ে দেখা যায়, সব কিছুই চলছে আপাত স্বাভাবিক নিয়মে। তবে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাইরে রয়ে গিয়েছে বিভিন্ন পোস্টার, দেওয়াল লিখন। কোথাও লেখা— ‘ডাক্তার দিদির বিচার চাই’, আবার কোথাও ‘যত দিন বিচার না মিলবে বহির্বিভাগের চিকিৎসা পরিষেবা বন্ধ থাকবে’। সকাল থেকেই জেএনএমের নানা অলিন্দেও পাক খেয়েছে জল্পনা।

গত বছর ১০ অগস্ট তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-মৃত্যুর ঘটনা সামনে আসার পরেই তোলপাড় হয় রাজ্য রাজনীতি। সেই ঢেউ জেএনএমেও এসে লেগেছিল। বহির্বিভাগে পরিষেবা বন্ধ রেখে প্রতিবাদে শামিল হন ডাক্তারি পড়ুয়া ও জুনিয়র ডাক্তারেরা। আর জি করের মতো এখানেও তৃণমূল-আশ্রিত কিছু ছাত্রছাত্রীর বিরুদ্ধে হুমকি-চক্র চালানোর অভিযোগ ওঠে। যার প্রশ্রয়ে এই চক্র চলছিল, তৃণমূলের সেই চিকিৎসক নেতা অভীক দে সাসপেন্ড হওয়ার পরে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা মুখ খোলার সাহস পান। সরিয়ে দেওয়া ওই চক্রের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত তদানীন্তন অধ্যক্ষকেও। ছাত্রছাত্রীদের করা অভিযোগের ভিত্তিতে ৪০ জনকে ক্লাস এবং হস্টেল থেকে সাসপেন্ড করা হয়। সম্প্রতি হাই কোর্টের নির্দেশে তাঁরা আবার ক্লাসে ফিরেছেন, তবে হস্টেলে ফেরার অনুমতি এখনও পাননি।

এ দিন যে প্রশ্ন জেএনএমে চিকিৎসক থেকে পড়ুয়া সকলের মুখে-মুখে ফিরেছে তা হল, এত বড় একটা মাত্র এক জনই দোষী সাব্যস্ত হল কেন? সিবি‌আইয়ের ভূমিকা কী? নিহত তরুণীর এক সহপাঠীর মতে, “ঠিক মতো তদন্ত হয়নি। তথ্যপ্রমাণ লোপাট হয়েছে। আদালত এক জনকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। কিন্তু এই বিচারে আমাদের মন মানছে না।" কল্যাণী জেএনএমের সুপার অতনু বিশ্বাস বলেন, "আদালত এক জনকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। তবে আরও কেউ যদি এই ঘটনায় যুক্ত থেকে থাকে, তদন্তকারী সংস্থার তাদেরকেও চিহ্নিত করা উচিত।"

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Kalyani JNM Hospital

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy