Advertisement
E-Paper

নেই ঠিকানায় স্কুল ডাক্তারি ছাত্রদের

পঁয়ত্রিশ ঘর সেই ‘নেই’ মানুষের পাশে দাঁড়াল কল্যাণীর জেএনএম’র চিকিৎসকেরা।

মনিরুল শেখ

শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৮ ০১:৪৫
স্কুলের পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র

স্কুলের পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র

কল্যাণীর লাইন বস্তিতে ওঁদের ঠিকানা বছর তিনেকের। কোনও সরকারি পরিচয়পত্র নেই— আধার, রেশন, ভোটার, কার্ডের রকমফের জানেন না ওঁরা। ঠিকানা জিজ্ঞেস করলে ফ্যাল ফ্যাল বলেন, ‘‘লাইন কা উসপার!’’

জেলা নির্মল ঘোষণা হয়ে গিয়েছে বেশ কিছু দিন, তবে ওঁদের শৌচালয় নেই, নেই-এর দীর্ঘ তালিকায় বাড়ির ছাদ, কুচোকাঁচা ছেলেপুলেদের স্কুল-যাত্রা, জোড়াতালি দেওয়া ছাদের তলায় বিদ্যুৎ— ৩৫ ঘর মানুষ যেন একটা নিশ্চুপ নেই দুনিয়ায় নির্বিকার বসবাস করেন।

পঁয়ত্রিশ ঘর সেই ‘নেই’ মানুষের পাশে দাঁড়াল কল্যাণীর জেএনএম’র চিকিৎসকেরা।

যেমনটা ঠিক পাশে পেয়েছিল বহরমপুরের গাঁধী কলোনির হাড়-হাভাতে মানুষগুলো, খান কয়েক কলেজ ছাত্র-ছাত্রীকে। নিজেদের হাত খরচা বাঁচিয়ে যাঁরা টোটো, রিকশা, ভ্যান চালানো হদ্দ অভাবী পরিবারগুলোর ছেলেপুলেদের পড়াশোনা, চিকিৎসার দায় কাঁধে তুলে নিয়েছে বছর কয়েক ধরে।

গাঁধী কলোনির সেই সব মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে থাকা সংস্কার মুছে দেওয়া থেকে তাদের হাতে কলমে কাজ শেখানো, কেএন কলেজেরে পড়ুয়াদের উদ্যোগ দেকে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন সরকারি কর্তারাও। কলেজের অধ্যক্ষ সুজাতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘মানুষগুলোকে এগিয়ে দিতেই আমাদের কলেজের ছেলেমেয়েদের একটা ছোট্ট উদ্যোগ নিয়েছে। মন প্রাণ ঢেলে কাজ করে গাঁধী কলোনিতে আলো ফুটিয়েছে ওরা।’’

কল্যাণীর ওই ঠিকানাহীন মানুষগুলো বছর তিনেক আগে ঘর খুঁজতে খুঁজতে এসে বসত গেড়েছিলেন মেডিক্যাল কলেজের অ্যানাটমি বিভাগের পাঁচিল ঘেঁষে। সুদূর উত্তর ভারতের কোনও নাম না জানা অজ গ্রাম থেকে আসা সেই মানুষগুলোর উপরে উৎখাতের কোপ পড়তে সময় লাগেনি। খান কয়েক তস্য ছেঁড়া পোশাক আর খুটিনাটি সাংসারিক জিনিস কাঁধে বয়ে হাঁটতে হাঁটতে ফের নতুন ঠিকানা খুঁজে নিয়েছিলেন তাঁরা, শিল্পাঞ্চল স্টেশনের লাইন পারে। তাঁদেরই এক জনের কথায়, ‘‘এ বার এখান থেকেও হয়ত তাড়িয়ে দেবে। আবার ‘ঘর’ খুঁজব।’’ বেশির ভাগই দিনমজুর। বাচ্চাগুলো দিনভর হুটোপুটি করে স্টেশন চত্বরে, খিদে পেলে সলজ্জ চোখে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে পাশের সস্তা হোটেলের উচ্ছিষ্টের আশায়।

মেডিক্যাল কলেজের চতুর্থ বর্ষের পড়ুয়া মেহেদি হাসান মোল্লা তাঁর কয়েকজন সহপাঠীর উদ্যোগে সেই নেই মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন প্রথম। মেহেদি বলছেন, ‘‘এক দিন নিজেই চলে গিয়েছিলাম সাহস করে। ওঁদের কথা শোনার পরে ভেবেছিলাম, কোনও ভাবে যদি পাশে দাঁড়ানো যায়।

সহপাঠীদের নিয়ে মেহেদির উদ্যোগেই এখন ওই লাইন পারের মানুষগুলোর জন্য গড়ে উঠেছে স্কুল। তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় দায়ও এখন ডাক্তারি পড়ুয়াদের হাতে।

নিজেদের পড়াশোনার ফাঁকে নিয়ম করে সেই স্কুলে পড়াচ্ছেন মেহেদিরা। প্রথম পাঠের সেই স্কুলে উঁকি দিয়ে দেখা গেল— দু’দিন আগেও স্টেশন চত্বরে অলস পড়ে থাকা ছেলেমেয়েগুলো যেন ফুটছে। সরু বেঞ্চিতে বসে এক মুখ হাসি নিয়ে হাত তুলে ঝাঁপিয়ে পড়ছে সাদামাটা প্রশ্নের উত্তরে।

ফাহিম বলছেন, ‘‘এত কিছুর মধ্যে ওদের এই উৎসাহটাই প্রাপ্তি আমাদের।’’ কল্যাণীর পুরপ্রধান সুশীল তালুকদার স্বীকার করে নিচ্ছেন, ‘‘সত্যিই এক নেই সংসারে ওদের বসবাস। মহকুমাশাসকের সঙ্গে কথা হয়েছে, ওদের জন্য অন্তত পরিচয়পত্রটুকু করে দেওয়ার একটা ব্যবস্থা করা হবে শিগিরই।’’

ততদিন নেই দুনিয়ার লাইন পার’ই ওদের ঠিকানা।

Homeless Doctor Education Students
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy