Advertisement
E-Paper

আকাশের নীচেই চলছে মিড ডে মিল

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনুরোধে বিশ্বভারতীর জলকষ্ট দূর করেছিলেন তিনি। আমজনতার পানীয় জলের অভাব দূর করতে মুর্শিদাবাদ জেলা জুড়ে অজস্র কূপ ও পুকুর খনন করেছিলেন তিনিই। সেই কারণে লালগোলার দানবীর মহারাজা যোগীন্দ্রনারায়ণ রায় ‘পানিপাঁড়ে’ নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। প্রয়াত সেই মহারাজার প্রতিষ্ঠিত লালগোলার মহেশ নারায়ণ অ্যাকাডেমির ছাত্রদের বরাতেই আজ আর জুটছে না পানীয় জল।

অনল আবেদিন

শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৫ ০০:০৩
এ ভাবেই মিড ডে মিল খায় পড়ুয়ারা।—নিজস্ব চিত্র

এ ভাবেই মিড ডে মিল খায় পড়ুয়ারা।—নিজস্ব চিত্র

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনুরোধে বিশ্বভারতীর জলকষ্ট দূর করেছিলেন তিনি। আমজনতার পানীয় জলের অভাব দূর করতে মুর্শিদাবাদ জেলা জুড়ে অজস্র কূপ ও পুকুর খনন করেছিলেন তিনিই। সেই কারণে লালগোলার দানবীর মহারাজা যোগীন্দ্রনারায়ণ রায় ‘পানিপাঁড়ে’ নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। প্রয়াত সেই মহারাজার প্রতিষ্ঠিত লালগোলার মহেশ নারায়ণ অ্যাকাডেমির ছাত্রদের বরাতেই আজ আর জুটছে না পানীয় জল। জোটে না মিড ডে মিল খাওয়ার আগে হাত ধোয়ার জল ও সাবান। শতবর্ষ প্রাচীন ওই বিদ্যালয়ের খুদে পড়ুয়াদের মিড ডে মিল খেতে হয় খোলা আকাশের নীচে। রোদ-ঝড়-জলেও তার ব্যতিক্রম নেই। অথচ সেই মাঠের পাশেই বিদ্যালয়ের নবনির্মিত তিনতলা ভবনের ১০টি ঘর তালাবন্দি হয়ে পড়ে রয়েছে বছর খানেক ধরে। সুপ্রাচীন ঐতিহ্যের ওই বিদ্যালয়ের পৌনে ৩ হাজার ছাত্রছাত্রীর জন্য শৌচালয় রয়েছে সাকুল্যে ৪টি।
ওই বিদ্যালয়ে এ বছরের পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস শুরু হয়েছিল ১৭ জানুয়ারি। অন্তত ছাত্রদের হাজিরা খাতা সে কথাই বলছে। অথচ ৯ জানুয়ারি থেকে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ৭ দিনে পঞ্চম শ্রেণির ৯৭২ জন ছাত্রকে মিড ডে মিল খাওয়ানোর হিসাব দেখিয়ে সরকারি দফতর থেকে চাল, ডাল ও টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ৩টি শ্রেণির মিড ডে মিল নিয়েও একই রকমের আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এমনই বেশ কিছু অভিযোগ ও অব্যবস্থার প্রতিকার চেয়ে অভিভাবকদের পক্ষ থেকে লালগোলার বিডিও স্বপ্নজিৎ সাহার কাছে সম্প্রতি স্মারকলিপি দেওয়া হয়। স্বপ্নজিৎবাবু বলেন, ‘‘তদন্ত করতে মিড ডে মিলের ব্লক নোডাল অফিসারকে বিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছিল। তিনি প্রধানশিক্ষকের কাছ থেকে মিড ডে মিল সংক্রান্ত নথিপত্র নিয়েছেন। তদন্তে দোষ প্রমাণিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

গত ২৯ জুন মিড ডে মিলের লালগোলা ব্লক নোডাল অফিসার রুহুল আমিনের হাতে প্রধানশিক্ষক সুব্রত ভট্টাচার্য নথিপত্র তুলে দেন। ওই নথির হিসাব অনুযায়ী, গত জানুয়ারি মাসে ৩১৬২ জনের আর ফেব্রুয়ারি মাসে ১০১৮ জনের টাকা ও চাল-ডাল তুলে নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় অভিভাবকদের একাংশের অভিযোগ, প্রধানশিক্ষকের দেখানো এই হিসেব ভুয়ো। প্রধানশিক্ষক সুব্রত ভট্টাচার্য অবশ্য অভিযোগ মানতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। ৯ জানুয়ারি থেকেই পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস শুরু হয়েছে। সে দিন থেকেই মিড ডে মিল দেওয়া হয়েছে। হিসাবে কোনও গরমিল নেই।’’

গত জুন মাসের মাঝামাঝি থেকে ওই বিদ্যালয়ের মিড ডে মিলের দায়িত্বে রয়েছেন শিক্ষক রবীন মণ্ডল। তাঁর দুই ছেলে ওই বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। লালগোলা পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান অজয় ঘোষের ছেলেও ওই স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। রবীনবাবু ও অজয়বাবু— দু’ জনেই বলেন, ‘‘প্রধানশিক্ষক ঠিক কথা বলছেন না। জানুয়ারি মাসের ১৭ তারিখ থেকে পঞ্চম শ্রেণির পঠনপাঠন শুরু হয়েছে। তিনি মিড ডে মিলে ভুয়ো হিসেব দেখিয়ে বহু টাকা নয়ছয় করছেন।’’

সর্বশিক্ষা মিশনের নির্দেশিকা অনুসারে স্কুলে ছাত্রদের জন্য পানীয় জলের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা, হাত ধোয়ার সাবান ও পর্যাপ্ত শৌচালয় থাকতে হবে। প্রধানশিক্ষক বলেন, ‘‘একটি নলকূপ বসানো হয়েছে গত সোমবার। আর শৌচালয় আছে ৪টি।’’ স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, স্কুলের বিপুল সংখ্যক ছাত্রদের জন্য একটি নলকূপ! লালগোলা আর্সেনিকপ্রবণ এলাকা। কিন্তু ৩ দিন আগে বসানো নলকূপের জল পরীক্ষা না করেই পড়ুয়াদের খাওয়ানো হচ্ছে।

বাহাদুরপুর পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান যদুরাম ঘোষ বলেন, ‘‘খোলা আকাশের নীচে নোংরা জায়গাতেই পড়ুয়াদের মিড ডে মিল খেতে দেওয়া হয়। অথচ মিড ডে মিল খাওয়ার ঘরের জন্য সরকারি বরাদ্দ ৩ লক্ষ টাকা আট মাস ধরে পড়ে আছে।’’ প্রধানশিক্ষক বলছেন, ‘‘শীঘ্রই নির্মাণের কাজ শুরু হবে।’’

Primary School Drinking water mid day meal school bahadurpur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy