Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
পুকুরে ভেসে উঠল দেহ

‘দিবি না টাকা’ খুন করে দুল ছিড়ল স্বামী

বুধবার রাতভর সোনালি বাড়ি ফিরে না আসায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে খোঁজ পড়েছিল তার। তবে, বেশিক্ষণ খুঁজতে হয়নি, সহিসপাড়ায় সোনালিদের বাড়ির কাছেই একটি পুকুরে ভাসতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে।

নিহত সোনালি বিবি। ফাইল চিত্র

নিহত সোনালি বিবি। ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কান্দি শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৫৯
Share: Save:

মদ্যপানের পাশাপাশি হালে মাদকের নেশায় ডুবে গিয়েছিল নুর সেলিম শেখ। আর টাকা জোগাড়ের নানা অছিলায় কখনও সাইকেল, কখনও বা জামা-প্যান্ট কেনার নাম করে স্ত্রীর উপর চলছিল ক্রমাগত চাপ। বাপের বাড়ি থেকে চেয়েচিন্তে টাকা নিয়ে প্রথম দিকে মন ভরালেও আর পেরে উঠছিলেন না সোনালি বিবি।

বুধবার তাই সহিসপাড়ায় বাপের বাড়ি চলে গিয়েছিলেন তিনি। এক স্যাঙাৎকে সঙ্গে নিয়ে সেখানেও হাজির হয়েছিল নূর। তার পর টাকার জন্য শুরু করেছিল চাপাচাপি। তা যে মিলবে না বুঝতে পেরে, ‘কথা আছে’ বলে, ওই রাতেই বৌকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল গ্রামের পুকুর পাড়ে। তার পর, গলা টিপে খুন করে সোনালির (২৬) দেহটা গড়িয়ে দিয়েছিল পুকুরে। তবে, পালিয়ে যাওয়ার সময়ে মৃত স্ত্রীর কান থেকে সোনার দুল দু’টো ছিনিয়ে নিতে ভোলেনি সে।

এই বেপরোয়া ‘নৃশংসতা‘টাই চমকে দিয়েছে মনোবিদদের। পুলিশও বলছে, ‘কতটা মরিয়া হলে স্ত্রীকে খুন করার পরেও কানের দুল ছিনিয়ে নেওয়া যায়!’ পরিচিত মনোবিদ অভিষেক আশ বলছেন, ‘‘এই ডেসপারেট-আর্জ বা মরিয়া চাহিদাটাই প্রমাণ করছে কতটা নেশার কাছে বিকিয়ে গেলে এ কাজ করতে পারে এক জন।’’

তবে ঘটনার পরে প্রায় চব্বিশ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও নুরের খোঁজ পায়নি পুলিশ।

বুধবার রাতভর সোনালি বাড়ি ফিরে না আসায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে খোঁজ পড়েছিল তার। তবে, বেশিক্ষণ খুঁজতে হয়নি, সহিসপাড়ায় সোনালিদের বাড়ির কাছেই একটি পুকুরে ভাসতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। জল থেকে তুলতেই মিলেছিল গলায় শ্বাসরোধ করার ছাপ। আর তখনই খেয়াল করেছিলেন সোনালির মা, মেয়ের কানের দুল দু’টো ছিঁড়ে নিয়ে গিয়েছে কেউ।

নুর ও তার এক বন্ধুর বিরুদ্ধে কান্দি থানায় এ দিনই খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন সোনালির বাবা মেহের শেখ।

বছর পাঁচেক আগে সোনালির সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল ভরতপুরের পলিশা গ্রামের বাসিন্দা পেশায় নুরের। তাদের দু’টি ছেলে আছে।তার পারিবারিক সূত্র বলছে, বছর দু’য়েক ধরে মদ্যপ নুর হেরোইনের নেশা ধরেছিল। আর তাতেই ভেঙে গিয়েছিল তাদের সংসার। প্রথমে স্ত্রীর গয়নাগাটি হাতিয়ে নেশা পূরণ চলছিল তার। সে সব ফুরোলে ঘরের ঘটি-বাটিতেও হাত পড়েছিল তার। তার পর, শুরু হয়েছিল স্ত্রীর উপর চাপ, ‘টাকা আন’।

অতিষ্ঠ হয়ে বছর দেড়েক আগে, পলিশা থেকে ছেলেদের নিয়ে সহিসপাড়ায় চলে আসেন সোনালি। কিছু দিন ধরে সেখানেও হানা দিচ্ছিল নুর। বুধবার ছিল সেরকমই এক নিশ্চুপে হানা দেওয়া রাত। পুলিশ জানতে পেরেছে, সঙ্গে তার এক নেশা-সঙ্গীও ছিল। মেহের জানান, জামাই যে মেয়ের কাছে টাকা চাইতেই এসেছে তা বুঝতে পেরে সোনালিকে সাবধান করে দিয়েছিলেন তিনি। তাকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেলে সতর্কও করেছিল, ‘দেখিস, সাবধানে। দূরে কোথাও য়াস না।’

মেহের বলছেন, ‘‘সেটাই কাল হল, মেয়েটা দূরেই চলে গেল একেবারে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

husband Drunk Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE