Advertisement
E-Paper

শিক্ষক সঙ্কটে ভর্তি বন্ধ স্কুলে

শিক্ষক ঘাটতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে চিঠি গিয়েছিল খোদ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। সেখান থেকে আশ্বাসও মিলেছিল। কিন্তু নানা জটিলতায় নিয়োগ করা যায়নি কোনও শিক্ষক। ফলে শিক্ষকের অভাবে ধুঁকতে থাকা ফরাক্কা ব্যারাজ স্কুল কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পঠন-পাঠন বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। স্কুল কর্তৃপক্ষ সটান জানিয়ে দিয়েছেন, একাদশ শ্রেণিতে চলতি বছরে কোনও পড়ুয়াকে ভর্তি নেওয়া হবে না।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৬ ০২:৪৩
পিচ উঠে বেহাল রঘুনাথগঞ্জের বাড়াল থেকে মণ্ডলপুর যাওয়ার রাস্তা। — নিজস্ব চিত্র

পিচ উঠে বেহাল রঘুনাথগঞ্জের বাড়াল থেকে মণ্ডলপুর যাওয়ার রাস্তা। — নিজস্ব চিত্র

শিক্ষক ঘাটতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে চিঠি গিয়েছিল খোদ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। সেখান থেকে আশ্বাসও মিলেছিল। কিন্তু নানা জটিলতায় নিয়োগ করা যায়নি কোনও শিক্ষক। ফলে শিক্ষকের অভাবে ধুঁকতে থাকা ফরাক্কা ব্যারাজ স্কুল কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পঠন-পাঠন বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। স্কুল কর্তৃপক্ষ সটান জানিয়ে দিয়েছেন, একাদশ শ্রেণিতে চলতি বছরে কোনও পড়ুয়াকে ভর্তি নেওয়া হবে না। এর আগেই ওই স্কুলের প্রাথমিক স্তরের দু’টি ক্লাস বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এলাকার এই ‘নামী’ স্কুলে একের পর এক শ্রেণি উঠে যাওয়ার চিন্তিত এলাকার শিক্ষামহল।

শিক্ষকের অভাবে বর্তমানে টিফিনের পর ওই স্কুলের পঠন-পাঠন কার্যত বন্ধ। এ ভাবে একের পর এক ক্লাসে ঝাঁপ পড়ায় অভিভাবক মহলে রীতিমতো ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। এ বছর একাদশ শ্রেণি তুলে দেওয়ায় সে ক্ষোভ আরও বেড়েছে।

কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছেন, অনুমোদিত ৫২ জন শিক্ষকের জায়গায় বর্তমানে রয়েছেন ১১ জন। বিজ্ঞানের শিক্ষক মাত্র একজন। ল্যাবরেটরি বন্ধ কর্মীর অভাবে। এই অবস্থায় প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস চালানো তাদের পক্ষে অসম্ভব। এমনকী বর্তমানে যা অবস্থা তাতে গরমের ছুটির পর একদিন অন্তর অন্তর ক্লাস করাতে হবে।

১৯৬৫ সালে ফরাক্কা ব্যারাজ নির্মাণের সময় ব্যারাজের কর্মীদের পরিবারের ছেলে-মেয়েদের কথা ভেবে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলা মাধ্যমের এই স্কুলটি পরিচালিত হয় রাজ্য সরকারের পাঠক্রম মেনে। কিন্তু স্কুলটির ভবন, পরিকাঠামো নির্মাণ, শিক্ষক ও কর্মী নিয়োগ-সহ যাবতীয় আর্থিক দায় কেন্দ্রীয় সরকারের জল সম্পদ মন্ত্রকের। স্কুলের কর্মী ও শিক্ষকেরা সকলেই কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারী। একসময় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে ফি বছর নিয়ম করে এই স্কুলের পড়ুয়ারা প্রথম দশে স্থান পেত। গত কয়েক বছরে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে ধারাবাহিক ভাবেই ১০০ শতাংশ ছাত্র ছাত্রী সাফল্য পেয়েছেন। এ বারে মাধ্যমিকে ৯৭ জন পরীক্ষার্থীর সকলেই কৃতিত্বের সঙ্গে পাশ করেছে। উচ্চ মাধ্যমিকেও ৯৩ জনের মধ্যে পাশ করেছেন ৯২ জন। স্বভাবতই এই স্কুলে ছেলে মেয়েদের ভর্তির জন্য বরাবরই নজর থাকে অভিভাবকদের। তাই একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আতান্তরে পড়েছেন মাধ্যমিক উত্তীর্ণ ছাত্র ছাত্রীরা।

নামে ফরাক্কা ব্যারাজ স্কুল হলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের ছেলে মেয়েরাও এখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়। ব্যারাজের কর্মী সংখ্যা কমে যাওয়ায় এখন স্কুলের ১১০০ ছাত্র-ছাত্রীর সিংহভাগ বহিরাগত।

স্কুলের অধ্যক্ষ মনোজ কুমার পানি বলেন, “স্কুলের এই সমস্যার কথা বহুবার জানানো হয়েছে কেন্দ্রীয় জল সম্পদ মন্ত্রকে। যেহেতু শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি তাদেরই নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু শিক্ষক সমস্যা তো মেটেইনি, বরং একের পর এক শিক্ষক অবসর নেওয়ায় তা এখন শিক্ষক সংখ্যা কমে এগারোয় ঠেকেছে। তাতে পঠন-পাঠন চালানো যাচ্ছে না। এতে ছাত্রদেরই ক্ষতি হচ্ছে। স্বাভাবিক ভাবেই একাদশ শ্রেণিতে এ বছর আর ছাত্র ভর্তি করা হচ্ছে না। আমাদের স্কুলের ছাত্রদেরও বলা হয়েছে আশপাশের কোনও স্কুলে চলে যেতে।”

স্কুলের এই শিক্ষক সঙ্কট কাটাতে অভিভাবকরাই গত বছর চিঠি লিখেছিলেন সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর দফতরে। তাদের আর্জি মেনে স্কুলকে ১০ জন চুক্তি ভিত্তিক অস্থায়ী শিক্ষক নিয়োগের অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু আইনগত বাধা বিপত্তিতে সেই নিয়োগও করা সম্ভব হয়নি।

স্কুলেরই এক শিক্ষক বলেন, “আশপাশে রাজ্য সরকার পোষিত সমস্ত হাই স্কুলে ৪০ করে ৫০ জন করে শিক্ষক রয়েছেন। সেখানে ১১ জন শিক্ষককে প্রাথমিক বিভাগ সহ দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত স্কুল চালানো কোনওমতেই সম্ভব নয়। যা অবস্থা তাতে স্কুলটি শেষ পর্যন্ত হয়ত বন্ধই করে দিতে হবে।” জঙ্গিপুর মহকুমার সহকারি বিদ্যালয় পরিদর্শক পঙ্কজ পাল বলেন, “একাদশ শ্রেণি তুলে দেওয়া মানে দ্বাদশ বিভাগটাই আর পরের বছর থাকবে না। ফরাক্কা ব্যারাজ প্রকল্পের স্কুলের ক্ষেত্রে রাজ্য শিক্ষা দফতরের কিছু করার নেই।’’

School Teacher
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy