Advertisement
০৪ মে ২০২৪

মেলেনি নতুন কার্ড, জট পাকছে রেশনে

সিঁদুরে মেঘ দেখছেন রেশন ডিলারেরা! খাদ্যসাথী প্রকল্পে সস্তায় চাল-গম পেতে হলে থাকতে হবে ডিজিটাল রেশন কার্ড। অথচ দক্ষিণবঙ্গের দুই জেলা— নদিয়া ও মুর্শিদাবাদের কয়েক লক্ষ গ্রাহক এখনও সেই কার্ড পাননি।

সামসুদ্দিন বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:০৬
Share: Save:

সিঁদুরে মেঘ দেখছেন রেশন ডিলারেরা!

খাদ্যসাথী প্রকল্পে সস্তায় চাল-গম পেতে হলে থাকতে হবে ডিজিটাল রেশন কার্ড। অথচ দক্ষিণবঙ্গের দুই জেলা— নদিয়া ও মুর্শিদাবাদের কয়েক লক্ষ গ্রাহক এখনও সেই কার্ড পাননি। এ দিকে, সরকারি নির্দেশ বলছে, ১ ফেব্রুয়ারি থেকেই নতুন কার্ড না দেখালে মিলবে না দু’টাকা কেজি দরে চাল এবং তিন টাকা কেজির গম।

এই অবস্থায় গ্রাহক বিক্ষোভের আশঙ্কা করছেন জেলার ডিলারেরা। তাঁদের আশঙ্কা, লোকজন অতশত নিয়ম বুঝতে চায় না। কিছু হলেই প্রথম ক্ষোভটা এসে পড়ে তাঁদের উপরেই। বিক্ষোভের আঁচ পেয়ে ওয়েস্ট বেঙ্গল এমআর ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের নদিয়া জেলার সম্পাদক রেজাউল করিমের দাবি, সবার হাতে নতুন কার্ড না পৌঁছনো পর্যন্ত আগের নিয়মেই রেশন দেওয়া হোক।

যদিও রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক আশ্বস্ত করেছেন, ১ মার্চ পর্যন্ত পুরনো আবেদনপত্র দেখিয়েই গ্রাহকেরা চাল-গম তুলতে পারবেন। কিছু আবেদনপত্র পদ্ধতিগত ক্রুটির জন্য বাতিল হয়েছিল। সেই গ্রাহকেরা ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পুনরায় আবেদনও করতে পারবেন।

২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে নতুন রেশন কার্ড বিলির মাধ্যমে রাজ্যজুড়ে খাদ্যসাথী প্রকল্প চালু হয়। ওই প্রকল্পের উপভোক্তাদের বিশেষ কার্ড দেওয়া শুরু হয়। অভিযোগ, সে সময় অনেকেই কার্ড পাননি। বলা হয়েছিল, আবেদনপত্র দেখিয়েই আপাতত ভর্তুকির চাল-গম মিলবে। তবে, এই বন্দোবস্ত চালু থাকবে ৩১ জানুয়ারি ২০১৭ পর্যন্ত। তার মধ্যেই নতুন রেশন কার্ড সংগ্রহ করতে হবে।

বিপত্তির শুরু এখানেই। নদিয়া জেলায় আবেদনকারীর সংখ্যা ছিল লাখ দশেক। ৫০ হাজার নাগরিকের আবেদনপত্র পদ্ধতিগত ত্রুটির জন্য বাতিল হয়। বাকি কার্ড জেলায় আসে। স্থির হয়, পঞ্চায়েতের মাধ্যমে তা বিলি করা হবে। কিন্তু এখনও প্রায় আড়াই লক্ষ কার্ড বিলি করা যায়নি। গ্রাহকদের দাবি, প্রশাসন তাঁদের কার্ড আসার বিষয়টি জানায়নি।

একই অবস্থা পড়শি জেলা মুর্শিদাবাদেও। সেখানেও প্রায় লাখ দু’য়েক রেশন কার্ড এখনও বিলি হয়নি। জেলার খাদ্য নিয়ামক অরবিন্দ সরকার বলছেন, “এ বার কার্ড বিলিতে ব্লক প্রশাসনকে কাজে লাগানো হবে। আশা করি খুব দ্রুত সব কার্ড বিলি হবে।’’

এরই মধ্যে ২৪ জানুয়ারি খাদ্য দফতর নির্দেশ দেয়, ১ ফেব্রুয়ারি থেকে নতুন কার্ড না দেখালে, মিলবে না সস্তার রেশন-সামগ্রী। নদিয়ার সিংহাটির বাসিন্দা আলি শেখ বলেন, ‘‘কার্ড আসার বিষয়টি জানতেই পারিনি। এখনও বুঝতে পারছি না, কী ভাবে কার্ড পাব। না হলে তো চাল-গম পাব না।’’ উদ্বিগ্ন মুর্শিদাবাদের জলঙ্গির বাসিন্দা আতাউর খানও। তাঁর কথায়, ‘‘আবেদন করা সত্ত্বেও এখনও কার্ড পেলাম না। এ দিকে সরকার বলছে, মাসখানেক পরে কার্ড না দেখালে রেশন মিলবে না।’’

জেলা প্রশাসনের এক কর্তা অবশ্য মন্ত্রীর সুরেই জানাচ্ছেন, সরকার ১ মার্চ অবধি পুরনো নিয়মেই রেশন দেওয়ার কথা জানিয়েছে। অতএব কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এর মধ্যে বিলি না হওয়ার কার্ড গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে যাবে। অবশ্য কার্ড বিলি না হওয়ার কারণ হিসেবে খাদ্য দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, অনেকের আবেদনপত্র ‘রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা আইন—২’ এর আওতায় পড়েছে। ফলে তাঁদের ১৩ টাকা কেজি দরে গম ও ৯ টাকা কেজি দরে চাল নিতে হবে। ফলে উৎসাহ হারিয়ে তাঁরা কার্ড সংগ্রহ করছেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Digital ration cards Food security
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE