Advertisement
E-Paper

ভাঙনে থমকে ভোট-বাদ্যি, ঘুম উধাও সান্যালচরের

ভোট আসে, ভোট যায়। সান্যালচরে ভাঙন চলতেই থাকে। চৈতি রোদ্দুরে তামাম বাংলা যখন ভোট নিয়ে ফুটছে তখন ভাঙনের ভয়ে রাত জাগছে নদী পাড়ের ওই জনপদ। দিন পাঁচেক আগে বিঘা পাঁচেক খেত গিলেছে ভাগীরথী। মাস কয়েক আগে আচমকা তলিয়ে গিয়েছে ৭৫টি বাড়ি।

সৌমিত্র সিকদার

শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৬ ০১:১৪
ভাঙছে পাড়।—নিজস্ব চিত্র

ভাঙছে পাড়।—নিজস্ব চিত্র

ভোট আসে, ভোট যায়। সান্যালচরে ভাঙন চলতেই থাকে। চৈতি রোদ্দুরে তামাম বাংলা যখন ভোট নিয়ে ফুটছে তখন ভাঙনের ভয়ে রাত জাগছে নদী পাড়ের ওই জনপদ। দিন পাঁচেক আগে বিঘা পাঁচেক খেত গিলেছে ভাগীরথী। মাস কয়েক আগে আচমকা তলিয়ে গিয়েছে ৭৫টি বাড়ি। নদী থেকে ফুট চল্লিশেক দূরে বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে আরও কুড়িটি বাড়ি। বাড়ির মালিকেরা সমস্বরে বলছেন, ‘‘দিনটা কোনও রকমে কাটছে। কিন্তু রাতে ভয়ে ঘুমোতে পারছি না। সবসময় মনে হচ্ছে—এই বুঝি হুড়মুড়িয়ে সব ভেঙে পড়ল!’’

গ্রামে পা রাখতেই মনে হল— ভোট-রাজ্যের বাইরে কোনও এলাকা নাকি! সান্যালচরে ঢোকার আগে বাবলাতলা, বিশ্বাসপাড়ার মতো কিছু এলাকায় নানা দলের ফ্লেক্স, ফেস্টুন পতাকা চোখে পড়েছে। কানে এসেছে রাজনৈতিক দলের স্লোগান। কিন্তু সান্যালচর একেবারেই চুপ। আপনাদের এলাকায় কি ভোট হচ্ছে না? কোনও উত্তর না দিয়ে খেত থেকে ফেরার পথে কার্তিক বিশ্বাস, হেমন্ত হালদারেরা পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন— ‘‘কী হবে ভোট দিয়ে? বলি, ভোটবাবুরা কি ভাঙন রুখতে পারবেন?’’

সাকিন সান্যালচর। গ্রাম পঞ্চায়েত চান্দুরিয়া ২। ব্লক চাকদহ। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে ভাগীরথী। সেই ১৯৭৪ সাল থেকে এই এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। আগে শুধু বর্ষার সময় পাড় ভাঙত ঝুপঝাপ। এখন সম্বৎসর। তাঁদের অভিযোগ, ভোটের হাওয়ায় ভাসে ভাঙন রোধের প্রতিশ্রুতি। তারপর ভোট ফুরোতেই সব ফক্কা।

অথচ এই সান্যালচরেই একসময় সাড়ে চোদ্দো হাজারের বেশি ভোটার ছিল। এখন সেই সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪ হাজার ৫৮৭ জন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, সেই ১৯৭৪ সাল থেকে এই এলাকায় ভাঙন চলছে। সেই ভাঙনের কারণে আটের দশক থেকে লোকজন এই গ্রাম থেকে চলে যেতে শুরু করেন। তাঁরা চাকদহ, পায়রাডাঙা, শিমুরালি, মদনপুর, কল্যাণী ও হুগলির খামারগাছি, বলাগড়-সহ বিভিন্ন এলাকায় পাকাপাকি ভাবে চলে গিয়েছেন। এই বিপুল সংখ্যক ভোটার এলাকা ছেড়ে চলে গেলেন। অথচ রাজনীতির কারবারিরা কেউ কিছু করলেন না কেন? সান্যালচরের বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, আটকানোর চেষ্টা যে একেবারেই করেনি, তা নয়। কিন্তু মানুষ শুনবে কেন? ভাঙন রুখতে সে ভাবে কেউ উদ্যোগী হননি। তাই চলে যাওয়াও আটকানো যায়নি।

ভাঙনের সঙ্গে সঙ্গে এখানে পঞ্চায়েতেও ক্ষমতা বদল হয়েছে। ১৯৭৮ সাল থেকে টানা ১৫ বছর স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত ছিল বামফ্রন্টের দখলে। ১৯৯৩ সালে পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় আসে কংগ্রেস। কিন্তু পরের বার, ১৯৯৮ সালে বিজেপিকে সঙ্গে নিয়ে ক্ষমতায় আসে তৃনমূল। ২০০৩ সালে ফের বামফ্রন্ট। এবং তারপর থেকে ফের তৃণমূল।

সব দলই মানছে ভাঙন এখানকার সবথেকে বড় সমস্যা। ভোট-বাক্সেও তার প্রভাব পড়েছে। কিন্তু সেটা রুখতে কি কোনও পদক্ষেপ করা হয়েছে? এলাকার সিপিএম নেতা নিত্যানন্দ বিশ্বাসের দাবি, ‘‘ভাঙন রুখতে আমাদের সময়ে টুকটাক কিছু কাজ হয়েছিল। কিন্তু তারপর আর কিছুই হয়নি।’’ স্থানীয় তৃণমূল নেতা সুকুমার মণ্ডল বলছেন, ‘‘ভাঙন নিয়ে যে আমরাও বিরাট কিছু করেছি এমন নয়। তবে ভাঙন রুখতে সবরকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’’

নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে সান্যালচরের বীণা বিশ্বাস, স্বাতী বিশ্বাসেরা বলছেন, ‘‘আমাদের কথা কেউই সে ভাবে ভাবেননি। চোখের সামনে কত মানুষ চলে গেল। নদী গিলে খেল ঘরবাড়ি-খেতি জমি। আমরাও যে এখানে কতদিন থাকতে পারব জানি না।’’

ভোটের বাদ্যি নয়, সান্যালচরে মাঝে মধ্যেই শোনা যাচ্ছে পাড় ভাঙার শব্দ।

Erosion Election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy