Advertisement
১৯ মে ২০২৪

বন্ধ হোক রেষারেষি, আর্তি

রাস্তা পার হতে গিয়ে বাসের ধাক্কায় মারা গিয়েছিল বছর চব্বিশের ছেলেটা। প্রায় সতেরো বছর আগে করিমপুরের নির্মল সাহার মর্মান্তিক মৃত্যুর স্মৃতি আজও তাড়া করে তাঁর পরিবারকে। নির্মলবাবুর পরিবার মনে করে, আইন মেনে সতর্ক ভাবে চালকেরা বাস চালালে দুর্ঘটনা কমবে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:২৮
Share: Save:

রাস্তা পার হতে গিয়ে বাসের ধাক্কায় মারা গিয়েছিল বছর চব্বিশের ছেলেটা। প্রায় সতেরো বছর আগে করিমপুরের নির্মল সাহার মর্মান্তিক মৃত্যুর স্মৃতি আজও তাড়া করে তাঁর পরিবারকে। নির্মলবাবুর পরিবার মনে করে, আইন মেনে সতর্ক ভাবে চালকেরা বাস চালালে দুর্ঘটনা কমবে। আর সেই কারণে বাস চালকদের উৎসাহ দিতে ২০১২ সাল থেকে নির্মলবাবুর মা রেখাদেবী ও দাদা দুর্গা সাহা নির্মলের স্মৃতিতে ‘সুদক্ষ চালক’ পুরস্কার চালু করেছেন।

সেই পুরস্কার তাঁদেরই দেওয়া হয় যাঁরা সারা বছর ধরে ট্রাফিক আইন মেনে চলে নজির গড়েছেন। চালকদের উদ্দেশে বৃদ্ধা রেখাদেবীর অনুরোধ, ‘‘সাবধানে গাড়ি চালিও বাবা। তোমাদের ভুলে যেন আমার মতো আর কোনও মায়ের কোল খালি না হয়।’’

রবিবার কান্দিতে বাস দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছে বছর তেরোর শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। বাবার সঙ্গে বহরমপুরে এসেছিল চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে। বাড়ি ফেরার সময় সে জানলার পাশে বসেছিল। দুর্ঘটনায় তার ডান হাত ছিঁড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মারা যায় সপ্তম শ্রেণির মেধাবী ওই ছাত্র। শুভঙ্করের বাবা সসীমবাবু বলেন, “বাস চালকের ভুলের জন্যই সব শেষ হয়ে গেল। এ ভাবে বাস চালানো বন্ধ হোক। নাহলে এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে। আমার মতো অনেক বাবা-মায়ের কোল খালি হয়ে যাবে।”

সন্তানহারা দুই বাবা-মায়ের আর্তি একটাই—বেপরোয়া বাস চলাচল বন্ধ হোক। কিন্তু সে কথা কি শুনছেন বাসের চালক, কর্মী কিংবা প্রশাসন?

কৃষ্ণনগর থেকে প্রায় ৫৯টি রুটে প্রায় ছ’শোরও বেশি বাস চলে। একটা বাসের সঙ্গে আর একটা বাসের সময়ের ব্যবধান মাত্র কয়েক মিনিট। কোনও কোনও রুটে আবার একই সময়ে একাধিক বাস ছাড়ে। ফলে বাসে বাসে রেষারেষি এখন প্রায় রোজনামচা। বাস মালিক ও কর্মীদের একাংশ আবার রেষারেষি বা মাত্রাতিরিক্ত গতিতে বাস চালানোর জন্য দায়ী করছেন শহরের যানজটকে। নদিয়া জেলা বাস মালিক সমিতির পক্ষে অসীম দত্ত বলছেন, “যানজট ঠেলে শহর থেকে বের হতেই ২০ থেকে ২৫ মিনিট অতিরিক্তি সময় লেগে যাচ্ছে। ফেলে নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে গেলে তো বাসের গতি বাড়ানো ছাড়া তো উপায় নেই।’’

মুর্শিদাবাদের এক শিক্ষক ছোটন ঘোষ নিয়মিত কান্দি থেকে সালার যাতায়াত করেন। তাঁর কথায়, ‘‘কান্দি বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসগুলি সময়ে ছাড়ে। কিছুটা এগিয়ে দোহালিয়া বাইপাশে যাত্রী থাক বা না থাক প্রায় পাঁচ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকে। তারপর ভরতপুর পর্যন্ত প্রায় ১৪ কিলোমিটার রাস্তা বাসের গতি থাকে খুবই কম। কিন্তু ভরতপুরের পর থেকে বাস উড়তে শুরু করে। এটা বন্ধ হোক।’’

মুর্শিদাবাদ জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের আধিকারিক অনন্তচন্দ্র সরকার বলেন, ‘‘কড়া নজর রাখছি। তবে নির্দিষ্ট কোনও রুটের বিশেষ কোনও বাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে জানান। কড়া পদক্ষেপ করব।’’ নদিয়ার আঞ্চলিক পরিবণ দফতরের আধিকারিক সৌমিত্র বিশ্বাস বলছেন, ‘‘রেষারেষি বন্ধ করতে আমরা একাধিক বার বাস মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। ফের সতর্ক করা হচ্ছে বাস চালকদের।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE