Advertisement
E-Paper

নষ্ট গুড় আর ডিমের খোলায় দেশজয় বিশ্বনাথের

মশলা-উপকরণ বলতে বেশি কিছু ছিল না। এই হাতের নাগালে নিখরচায় যা কিছু পাওয়া যায়।সামান্য গোবর, পচা কলা, পোকাধরা বেসন, নষ্ট হয়ে যাওয়া গুড়, ডিমের খোলা, এই আর কী।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৭ ১৪:২০
জয়ী: নিজের জমিতে বিশ্বনাথ বিশ্বাস। নিজস্ব চিত্র

জয়ী: নিজের জমিতে বিশ্বনাথ বিশ্বাস। নিজস্ব চিত্র

মশলা-উপকরণ বলতে বেশি কিছু ছিল না। এই হাতের নাগালে নিখরচায় যা কিছু পাওয়া যায়।

সামান্য গোবর, পচা কলা, পোকাধরা বেসন, নষ্ট হয়ে যাওয়া গুড়, ডিমের খোলা, এই আর কী।

আর তাতেই চোখ ধাঁধাঁনো আয়োজন।

উপকরণগুলোকে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে মিশিয়ে তৈরি হয়েছে সার। নিজের হাতে তৈরি ওই জৈব সার দিয়ে ফসল ফলিয়ে জাতীয় স্তরে শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা পেলেন নদিয়ার কৃষক বিশ্বনাথ বিশ্বাস।

করিমপুরের পাট্টাবুকা গ্রামের বাসিন্দা এবং আদতে পান চাষি বিশ্বনাথবাবু দীর্ঘদিন ধরেই প্রাকৃতিক সার ব্যবহার করে আসছেন। ১৯৮৮ সাল থেকে তিনি জৈব সারের ব্যবহার করে আসছেন তাঁর বিঘা পাঁচেকের পান বরজে। সেই সময়ে জেলায় হাতেগোনা যে দু’এক জন কৃষক জৈবসার ব্যবহার করতেন, তিনি ছিলেন তাঁদের অন্যতম। ২০০৪ সালে তিনি এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন ‘ইনস্টিটিউট অব এগ্রিকালচার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’তে। সেখানে হাতেকলমে শেখানো হয়েছিল রাসায়নিক সারের বদলে কেমন করে গোবর, গোমূত্র বা অনান্য ফেলে দেওয়া জিনিস থেকে তৈরি করা যায় জমির খাদ্য বা সুষম সার।

জৈব চাষ প্রসঙ্গে বিশ্বনাথবাবু বলেন, ওই সব উপকরণ মিশিয়ে আমরা যে সার তৈরি করি, তার নাম জীবামৃত। চাষিরা বলে তরল সার। ১০০ থেকে ১২০ দিনে পাকে এমন ফসলে চারবার ওই সার জমিতে প্রয়োগ করতে হয়। স্প্রে কিংবা হাতে করে ছিটিয়ে অথবা সেচনালার জলে মিশিয়ে দিলেই হল। বিঘাপ্রতি গড়ে পঞ্চাশ লিটার সারই যথেষ্ট। ‘জিরো কস্ট ন্যাচারাল ফার্মিং’ নামে পরিচিত এই প্রক্রিয়া আসলে জমি এবং ফসলকে রাসায়নিক মুক্ত করার অভিযান, যা ইতিমধ্যে কৃষকদের মধ্যে ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে।

চাষের জমিতে এখন বারোমাস ফসল হয়। এই বিরামহীন ফসল পেতে নির্বিচারে ব্যবহার হচ্ছে রাসায়নিক সার, কীটনাশক, নানা আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তি। বছরভর আবাদ অন্য দিকে স্বাভাবিক খাদ্যের বদলে রাসায়নিক ব্যবহার। এই দুইয়ের সাঁড়াশি আক্রমণে জমি হারাচ্ছে উর্বরতা, ফসল হয়ে উঠছে বিষ।

এই পরিস্থিতিতে কৃষির স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতেই ভরসা রাখছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা। দেশ জুড়ে সরকারি উদ্যোগে জৈব পদ্ধতিতে চাষআবাদ নিয়ে নানা প্রকল্পের কাজ চলছে। বিশ্বনাথবাবু বলেন, “২০১২ সাল থেকে নদিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে বর্ডার এরিয়া ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রাম নামে একটি পরিকল্পনা চলছে। যেখানে চাষিদের জৈবচাষের নানা রকম কৌশল শেখানো হচ্ছে।” ওই প্রকল্পে করিমপুর ১ নম্বর ব্লকের মাস্টার রিসোর্স পার্সন বিশ্বনাথবাবু নিজেই।

সম্প্রতি ‘পরম্পরাগত কৃষি বিকাশ যোজনা’ নামে একটি কেন্দ্রীয় যোজনায় চিরাচরিত প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে ফসল ফলানোর উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। নদিয়ার উপকৃষি অধিকর্তা বুদ্ধদেব ধর বলেন, “প্রকল্পের কাজ সম্প্রতি শুরু হয়েছে নদিয়ায়। করিমপুর ব্লক এবং হাঁসখালি ব্লকের পঞ্চাশ একর করে মোট একশ একর জমিতে ডাল শস্য এবং শাকসবজি চাষ করা হচ্ছে পরম্পরাগত পদ্ধতিতে। ওই দুই ব্লক মিলিয়ে আটানব্বই জন কৃষকে প্রাথমিক ভাবে এর আওতায় আনা হয়েছে।”

মুর্শিদাবাদের উপকৃষি অধিকর্তা তাপস কুণ্ডু বলেন, “আমাদের জেলায় ওই প্রকল্পের কাজ এখনও শুরু হয়নি। খুব শীঘ্রই হবে। তবে ইতিমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় জমিতে রাসায়নিক সার বা কীটনাশকের বদলে কেঁচো সার এবং নিমাস্ত্রের মতো জৈব উপাদান ব্যবহার হচ্ছে।”

গত ৯-১০ মে ব্যাঙ্গালোরে ‘ইনস্টিটিউট অব এগ্রিকালচার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’ আয়োজিত দু’দিনের এক অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজ্যের ৩৯ জন কৃষকের সঙ্গে নদিয়ার বিশ্বনাথ বিশ্বাসকে কৃষকরত্ন পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। রাজ্য থেকে তিনি একাই এই পুরস্কার পেয়েছেন।

Natural Farming Farmers
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy