দীর্ঘ ক্ষণ ধরে গ্রামের প্রবেশপথ আটকে রেখে ‘পরিকল্পিত’ ভাবে ঘটানো হয়েছে গণপিটুনির ঘটনা। আক্রান্তদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের পর আটকে দেওয়া হয়েছে দমকলের গাড়িও। নদিয়ার তেহট্টের ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মাথায় এ বার এমনটাই দাবি পুলিশের। ওই ঘটনায় ইতিমধ্যে এক জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। অন্য দিকে, যে শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘিরে এত উত্তেজনা, সেই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার হয়েছেন চার জন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতদের নাম ছোট্টু মণ্ডল, কার্তিক মণ্ডল, সুচিত্রা মণ্ডল এবং সুপ্রিয়া ভৌমিক। রবিবার ধৃতদের আদালতে হাজির করানো হয়েছে। গণপিটুনির ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে সৌম্যজিৎ বিশ্বাস নামে আর এক যুবককেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঘটনায় আরও কেউ জড়িত রয়েছেন কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। সোমবার আদালতে হাজির করিয়ে হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানানো হবে তাঁকেও।
আরও পড়ুন:
পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার সকালে ন’বছরের স্বর্ণাভ বিশ্বাসের দেহ উদ্ধারের পর থেকে গ্রামবাসীরা নিহত উৎপল মণ্ডলদের বাড়ির সামনে জড়ো হতে শুরু করেন। তেহট্ট থানার অন্তর্গত নিশ্চিন্তপুর গ্রামের চারটি প্রবেশপথ রয়েছে। পুলিশের দাবি, এর পর রীতিমতো ‘পরিকল্পনা’ করেই অভিযুক্তের বাড়ির সদস্যদের গ্রামের মন্দিরের কাছে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। তার পর শুরু হয় গণপিটুনি। খবর পেয়ে বিশাল বাহিনী নিয়ে গ্রামে ঢোকার চেষ্টা করে পুলিশ। কিন্তু গ্রামের প্রতিটি প্রবেশপথ অবরুদ্ধ থাকায় গ্রামে পৌঁছোতে পারেনি তারা। অভিযুক্তদের পাটের গুদামে এবং এক আত্মীয়ের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে গ্রামের দিকে ছুটে যায় দমকলের গাড়ি। কিন্তু বিক্ষোভকারীদের বাধায় দমকলও পৌঁছোতে পারেনি। পরে কোনও মতে ঘটনাস্থলে পৌঁছে গুরুতর জখম অবস্থায় উৎপল ও তাঁর স্ত্রী সোমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। তত ক্ষণে অবশ্য দম্পতির মৃত্যু হয়েছে।
এ বিষয়ে তেহট্ট মহকুমা পুলিশের আধিকারিক শুভতোষ সরকার বলেন, ‘‘স্বতঃস্ফূর্ত গণরোষের পাশাপাশি ঘটনার নেপথ্যে কিছু মানুষের প্ররোচনাও ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। পরিকল্পিত ভাবে গ্রামে ঢুকতে দেওয়া হয়নি পুলিশকে। দমকলকেও আটকে দেওয়া হয়। গণপিটুনির ঘটনায় এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শিশুখুনের পাশাপাশি গোটা ঘটনার তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ।’’ এই ঘটনার সঙ্গে শিশুপাচার চক্রের যোগ রয়েছে কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে তা-ও।
শুক্রবার দুপুর থেকে নিখোঁজ থাকার পর শনিবার সকালে তেহট্টের নিশ্চিন্তপুর গ্রামের এক ডোবা থেকে ত্রিপলে মোড়া অবস্থায় তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়া ওই শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার হয়। পরিবারের দাবি ছিল, তাদের ছেলেকে খুন করে দেহটি জলে ফেলে দিয়েছেন প্রতিবেশী উৎপল মণ্ডল ও তাঁর পরিবারের লোকজন। খবর ছড়িয়ে পড়তেই উত্তেজনা ছড়ায় গ্রামে। উন্মত্ত জনতা অভিযুক্তের বাড়িতে চড়াও হয়ে ব্যাপক মারধর শুরু করে ওই পরিবারের সদস্যদের। ওই পরিবারের পাটের গোডাউনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ভাঙচুর চালানো হয় বাড়িতে। গণপিটুনিতে মৃত্যু হয় উৎপল ও সোমার। উৎপলের পুত্রবধূ নিশা মণ্ডলকেও বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। তিনি আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, এই প্রথম নয়, এর আগেও শিশু পাচারের মতো ঘটনায় নাম জড়িয়েছে উৎপল ও তাঁর পরিবারের। সে সব অভিযোগ খতিয়ে দেখছে পুলিশ।