Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

আগুনে পুড়ে যুবকের মৃত্যু কল্যাণীতে

মাসখানেক আগেই বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে দিঘা ঘুরে এসেছিলেন তিনি। চাকরি পাওয়ার পরে সেই প্রথম একসঙ্গে কোথাও বেড়াতে যাওয়া। তখনই বলেছিলেন, বড় ছুটি নিয়ে পুজোর সময় দূরে কোথাও মা-বাবাকে ঘুরে আসবেন। কিন্তু, তার আগে জীবন থেকেই পাকাপাকি ছুটি হয়ে গেল বছর চব্বিশের শীর্ষেন্দু দে-র। মঙ্গলবার গভীর রাতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হল তাঁর।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কল্যাণী শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৬ ০২:০৬
Share: Save:

মাসখানেক আগেই বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে দিঘা ঘুরে এসেছিলেন তিনি। চাকরি পাওয়ার পরে সেই প্রথম একসঙ্গে কোথাও বেড়াতে যাওয়া। তখনই বলেছিলেন, বড় ছুটি নিয়ে পুজোর সময় দূরে কোথাও মা-বাবাকে ঘুরে আসবেন। কিন্তু, তার আগে জীবন থেকেই পাকাপাকি ছুটি হয়ে গেল বছর চব্বিশের শীর্ষেন্দু দে-র। মঙ্গলবার গভীর রাতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হল তাঁর। আর যাঁদের নিয়ে তিনি বেড়াতে যাবেন ভেবেছিলেন, সেই দে দম্পতিও অগ্নিদগ্ধ হয়ে গুরুতর জখম অবস্থায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন। দু’জনেই কল্যাণী জেএনএম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কল্যাণী থানার মদনপুর শান্তিনগরের ওই ঘটনার পরে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।

প্রাথমিকভাবে পুলিশের অনুমান, সিলিন্ডার থেকে রান্নার গ্যাস লিক করে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। ছেলেকে বাঁচাতে গিয়েই মা-বাবাও অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, রাতে হয়তো গ্যাস বন্ধ করতে ভুলে গিয়েছিলেন তাঁরা। বেশি রাত পর্যন্ত কাজ করা এবং কাজের ফাঁকে কফি খাওয়ার অভ্যাস ছিল শীর্ষেন্দুর। রাতে গ্যাস জ্বালাতে গিয়েই এই দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তবে, এই তত্ত্ব ঠিক নাও হতে পারে বলেই মনে করছে পুলিশেরই একাংশ। কল্যাণীর এসডিপিও কৌস্তভদীপ্ত আচার্য জানিয়েছেন, ওই ঘরটি সিল করে দেওয়া হয়েছে। তদন্ত চলছে। শীর্ষেন্দুর মৃতদেহের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট মিললে বিষয়টি অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে যাবে।

শীর্ষেন্দুর বাবা বিমলবাবু কেন্দ্র সরকারের কর্মী। বর্তমানে তিনি হিলি সীমান্তে কর্মরত। বিমলবাবুর স্ত্রী গৌরীদেবী গৃহবধু। বছর দেড়েক আগে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে চাকরি পান শীর্ষেন্দু। তিনি বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। শান্তিনগরে নিজের বাড়ির দোতলায় বাস করত দে পরিবার। নিচের তলা ভাড়া দেওয়া রয়েছে।

ভাড়াটে বন্দিতা মিত্র পেশায় স্কুল শিক্ষিকা। তিনি জানান, মঙ্গলবার রাত তখন ২.৫০। বিকট আওয়াজে তাঁর ঘুম ভেঙে যায়। শুনতে পান, উপরের ঘরে ধুপধাপ আওয়াজ হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রচণ্ড আর্তনাদ। সঙ্গে সঙ্গে তিনি স্বামীকে ডেকে তোলেন। তাঁরা প্রথমে ভেবেছিলেন, উপরের ঘরে ডাকাত পড়েছে। এরপরে পাশেই শীর্ষেন্দুবাবুদের এক আত্মীয় পঙ্কজ দামের বাড়িতে ফোন করা হয়। প্রতিবেশীদের অনেকেই জেগে যান। পঙ্কজবাবুর সঙ্গে তাঁদেরই কয়েকজন শীর্ষেন্দুদের বাড়িতে যান।

পঙ্কজবাবুর স্ত্রী ডলিদেবী জানিয়েছেন, উপরে গিয়ে দেখা যায়, ঘর থেকে বেরনোর দরজা খোলা। কিন্তু, কোলাপসিবল গেটটি বন্ধ। তার সামনেই পড়ে রয়েছেন শীর্ষেন্দুর বাবা বিমলবাবু এবং মা গৌরীদেবী। তালা ভেঙে ভিতরে ঢোকেন তাঁরা। পঙ্কজবাবুদের চিৎকার শুনে ছুটে যান বন্দিতাদেবীর স্বামী সমীরবাবুও।

সমীরবাবু বলেন, ‘‘উপরে উঠে দেখি চারদিকে ধোঁয়া। শ্বাস নেওয়াই কষ্টকর। কোনও রকমে দু’জনকে নিচে নামাই। তারপর যখন শীর্ষেন্দুর খোঁজে ভিতরে ঢুকতে যাচ্ছি, তখন পঙ্কজবাবু বলেন, সব শেষ। দেখি রান্নাঘরে পড়ে রয়েছে শীর্ষেন্দুর নিথর দেহ।’’ গাড়ি ডেকে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে পাঠানো হয় সবাইকে। চিকিৎসকরা শীর্ষেন্দুকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে বিমলবাবু বলেন, ‘‘গ্যাসটা হয়তো বন্ধ করা ছিল না। ছেলেকে বাঁচাতে গিয়েছিলাম। কিন্তু পারলাম না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE