চলছে পুজোপাঠ। — নিজস্ব চিত্র।
না, হাতে হাত ধরা নেই। পাশাপাশি হেঁটে পরস্পরের মঙ্গল কামনায় মন্দিরে পুজো দিলেন বিশ্বাস দম্পতি। ৩৩ বছরের পুরনো দাম্পত্য ওঁদের। দাম্পত্য ‘অটুট’ রাখতে নিয়ম করে জামাইষষ্ঠীর দিনে বছর যাটেকের রসময়বাবু, পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই স্ত্রী কমলাদেবীকে নিয়ে ধানতলার আড়ংঘাটার যুগলকিশোর মন্দিরে পুজো দেন। ইদানীং বয়সের কারণে সেই প্রথায় শিথিলতা এসেছে ঠিকই, তবু সময়-সুযোগ হলেই নৈবেদ্য নিয়ে মন্দিরে হাজির হন দম্পতি।
শুধু বিশ্বাস দম্পতি নন জামাইষষ্ঠীর দিন এমনই শয়ে শয়ে দম্পতি ভিড় করেন আড়ংগাটার যুগলকিশোর মন্দিরে। তিনশো বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে দাম্পত্যের মঙ্গল কামনায় পুজো দেওয়ার ওই প্রথা। যত দিন গিয়েছে জৌলুস বেড়েছে। এখন প্রতি বছর ১ জ্যৈষ্ঠ মন্দিরকে ঘিরে মেলা বসে। মাস পেরিয়ে শেষ হয় সেই মেলা।
মন্দিরের পাশেই রয়েছে চূর্ণী নদী। সকাল থেকে দম্পতিরা নদীতে স্নান করে হাজির হন মন্দিরে। এরপরই একে অপরের মঙ্গল কামনায় পুজো দেন। অনেকে আবার ঢিল বেঁধে মানতও করেন। রসময়বাবু বলেন, ‘‘এক সময় নিয়মিত আসতাম। এখন বয়স হয়েছে। সময়ও সে ভাবে পাই না!’’ কমলাদেবীর কথায়, ‘‘এখন মেয়েদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। এই দিনটাতে মেয়ে জামাই বাড়িতে আসে। ওদের রেখে আসা হয় না।’’
সময়ের অভাবে অনেকেই এখন সে ভাবে আসতে পারেন না, কিন্তু ইচ্ছেটা থাকেই—এক বাক্যে জানালেন অনেকেই। সলুয়ার বাসিন্দা পেশায় ব্যবসায়ী রাজর্ষি ঘোষ বলেন, ‘‘ষষ্ঠীর দিন মন্দিরে দু’জনে আসতে পারলে ভাল লাগে। কাজে ব্যস্ত থাকায় প্রতি বছর সেটা সম্ভব হয় না। তবে, জ্যৈষ্ঠ মাসের মধ্যে কোনও একদিন এখানে আসার চেষ্টা করি।’’
মেলা কমিটির পক্ষে মধুসূদন ধর বলেন, ‘‘সাধারণত এই দিনটাতে অনেকে যুগলে এসে মন্দিরে পুজো দিয়ে যান। যারা এই দিনটাতে সময় পান না, তারা চেষ্টা করেন এই মাসের যে কোনও দিন এসে পুজো দিয়ে যেতে।’’ তিনি বলেন, ‘‘মন্দিরটিকে হেরিটেজ ঘোষণার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে গিয়েছিলাম। বছর তিনেক আগে এক প্রতিনিধি দল মন্দির পরিদর্শন করে গিয়েছেন।’’
শোনা যায়, বর্ধমানের রাজগঞ্জ আশ্রমের মোহান্ত গঙ্গারাম দাস ওই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। এক সময় জায়গাটি জঙ্গলে ভর্তি ছিল। দিনের বেলায়ও লোকে যেতে ভয় পেত। পরে জনবসতি গড়ে ওঠে। তারপর যত দিন গিয়েছে যুগলের মন্দিরে পুজো দেওয়ার রীতি জনপ্রিয় হয়েছে। মন্দিরের সেবায়েত শ্যামদাস মহন্ত বলেন, ‘‘অনেক কষ্ট করে মহন্ত গঙ্গারাম দাস রাধা-গোবিন্দকে একত্র করে মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বছরের ৩৬৫ দিনই মন্দিরে পুজো হয়। ভোর ৪টে মন্দির খোলা হয়। দুপুর সাড়ে ১১টায় ভোগ নিবেদন। সাধারণত অন্ন ভোগ। সঙ্গে তরকারি, ভাজা-সহ অন্য পদ। সন্ধ্যা ৬টায় আরতি। রাত সাড়ে ৮টায় ভোগ নিবেদন করা হয়। সব শেষে শয়ন।’’
কিন্তু, এখানে যুগলে আসার নিয়ম কেন?
এক গাল হেসে তিনি বলেন, ‘‘নিজেদের দাম্পত্য অক্ষুণ্ণ রাখতে কে চায় না বলুন। সেই বাসনা থেকেই মানুষ এখানে ছুটে আসেন!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy