Advertisement
E-Paper

দুই কিশোরীকে হোমে পাঠানোয় মার তাহেরপুরে

ছোট বয়সে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল মেয়ে দু’টিকে। শ্বশুরবাড়িতে মানাতে না পেরে তারা ফিরে এসেছিল। তাদের যাতে জোর করে শ্বশুরবাড়িতে ফেরত পাঠানো না যায়, তার জন্য হোমে রাখার ব্যবস্থা করেছিলেন মানবাধিকার কর্মীরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৬ ০১:০৫

ছোট বয়সে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল মেয়ে দু’টিকে। শ্বশুরবাড়িতে মানাতে না পেরে তারা ফিরে এসেছিল। তাদের যাতে জোর করে শ্বশুরবাড়িতে ফেরত পাঠানো না যায়, তার জন্য হোমে রাখার ব্যবস্থা করেছিলেন মানবাধিকার কর্মীরা।

সেই রাগেই তাহেরপুরের দু’জন মানবাধিকার কর্মীকে ধরে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে মেয়ে দু’টির বাড়ির লোক এবং এলাকার একটি ক্লাবের কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার বিকেলের ঘটনা। শুক্রবার রাত পর্যন্ত পুলিশ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে। তার মধ্যে রতন ও ডলি দাস নামে দু’জন একটি মেয়ের বাবা-মা। তৃতীয় জন, সোমা দাস অন্য মেয়েটির মা। দুই আহত মানবাধিকার কর্মী সঞ্জয় দেবনাথ ও পূর্ণিমা দেবনাথ শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ভর্তি।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিকেলে তাহেরপুরের সার্কুলার রোডে পূর্ণিমা দেবনাথের বাড়িতে গিয়েছিলেন সঞ্জয়। সেখান থেকে বেরিরে আসার সময়ে কয়েক জন তাঁকে ধরে জানতে চায়— মেয়ে দু’টিকে কী ভাবে বাড়িতে নিয়ে আসা সম্ভব। তিনি জানান, তারা হোমে ভালই আছে। এই নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে গণ্ডগোল বেধে যায়।

পূর্ণিমার মেয়ে শিখা হালদার বলেন, “ওই সময়ে আমরা বাড়িতেই ছিলাম। সঞ্জয়কাকুকে ওরা মারতে শুরু করে দেয়। তার পরে আমাদের বাড়িতে ঢুকেও মারধর শুরু করে। মা, দাদা আর আমাকে মারে।” সঞ্জয়ের অভিযোগ, মারধর করে খানিক দূরে সম্মিলনী ক্লাবের ঘরে নিয়ে গিয়ে তাঁদের আটকে রাখা হয়। তাঁর কথায়, ‘‘ওই দুই বাড়ির লোক এবং ক্লাবের ছেলেরা আমাদের মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিল। আমার মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ধরা হয়। দু’লক্ষ টাকা দেওয়ার জন্যও চাপ দেওয়া হতে থাকে।” শেষমেশ খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে আনে। কিন্তু ক্লাবের কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। এ দিন রানাঘাট আদালতে তোলা হলে রতন দাসকে এক দিন পুলিশ হেফাজত এবং বাকি দুই মহিলাকে চার দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কেন কিছু লোকের চক্ষুশূল হলেন মানবাধিকার কর্মীরা?

মানবাধিকার কমীদের মতে, ওই এলাকায় বাল্যবিবাহ রোখা তো বটেই, পুকুর ভরাটের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে তাঁরা অনেকের কায়েমি স্বার্থে ঘা দিয়ে বসেছেন। এর মধ্যে শাসকদলের সঙ্গে যুক্ত লোকজনও জড়িত আছেন। এদের ইন্ধনেই হামলা চালানো হয়েছিল। সঞ্জয়ের কথায়, ‘‘দু’টি নাবালিকাকে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল। শ্বশুরবাড়ির অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে তারা বাপের বাড়িতে ফিরে আসে। তাদের ফেরত পাঠানোর চেষ্টা চলছিল। মেয়ে দু’টি আমাদের জানায়। পরে চাইল্ড লাইনের মাধ্যমে

তাদের হোমে পাঠানোর ব্যবস্থা করি। তারা সেখানে ভালই রয়েছে। এ দিকে এখানে প্রচার করা হচ্ছে, আমরা মেয়ে দু’টিকে পাচার করে দিয়েছি।”

মেয়ে দু’টির বাড়ির লোকজন এবং ক্লাবকর্তারা অবশ্য উল্টো গাইছেন। ধৃত ডলি দাসের বোন মালতী দাসের দাবি, “মেয়েরা বাড়ি ফিরবে বলে কান্নাকাটি করছে। আমরাও ওদের ফিরিয়ে আনতে চাইছি। এই নিয়েই গণ্ডগোল।” ধৃত সোমা দাসের বৌমা পিউ দাসের বক্তব্য, “স্বামীর সঙ্গে অশান্তি করে চলে এসেছিল আমার ননদ। ওদের হোমে পাঠানোর সময়ে বলা হয়েছিল, লেখাপড়া শিখিয়ে চাকরির ব্যবস্থা করা হবে। সে সব কিছুই হচ্ছে না। উল্টে ননদের সঙ্গে দেখা করতে হোমে গিয়ে দেখি, সে বাড়ি ফিরবে বলে কান্নাকাটি করছে। আমার শাশুড়ি সঞ্জয়কাকুকে জিজ্ঞাসা করতে গিয়েছিলেন, ওদের কবে ফেরাবেন। তা শুনেই তিনি উত্তেজিত হয়ে যান।” সম্মেলনী ক্লাবের সদস্য সুরেশ চৌধুরীর দাবি, “আমাদের কোনও সদস্য ওঁদের মারধর করেনি। অনেক লোক জড়ো হয়ে গিয়েছিল। ওঁদের বিপদ হতে পারে ওদের ক্লাবের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল।” তাহেরপুর নোটিফায়েডের প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান তথা স্থানীয় তৃণমূল নেতা পরিতোষ ঘোষেরও দাবি, “উত্তেজিত জনতা যে ভাবে দু’জনকে ঘিরে ফেলেছিল, তা দেখেই ওঁদের ক্লাবের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে পুলিশকে খবর দিতে বলি।” তাঁদের দলের কেউ হামলায় ইন্ধন জোগাননি, বাল্যবিবাহ বা পুকুর ভরাটের মতো কাজেও কেউ জড়িত নন বলেও তাঁর দাবি।

নদিয়া জেলা শিশুকল্যাণ সমিতির চেয়ারপার্সন রিনা মুখোপাধ্যায় বলেন, “তাহেরপুর এলাকায় সবচেয়ে বেশি বাল্যবিবাহ হয়। তা রুখতে ওই মানবাধিকার কর্মীরা খুবই সাহায্য করেন আমাদের। আমরা পুলিশকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলেছি। হোমে মেয়ে দু’টির কাউন্সেলিং করা হচ্ছে। বাড়ি ফিরতে তারা ইচ্ছুক নয়।”

এসডিপিও (রানাঘাট) ইন্দ্রজিৎ বসু বলেন, “অস্ত্র আইন-সহ বিভিন্ন ধারায় অভিযোগ করা হয়েছে। সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

taherpur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy