Advertisement
E-Paper

বাড়ি ফিরতে চাই, সাড়াই দেয়নি নবান্ন

বাঁকাচোরা হাতের লেখায় মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিল মেয়েটি— ‘স্কুলে যাওয়ার পথেও ভয় দেখাচ্ছে ওরা, বলছে বাবাকে খুন করে দেবে!’

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৭ ১৫:০০

বাঁকাচোরা হাতের লেখায় মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিল মেয়েটি— ‘স্কুলে যাওয়ার পথেও ভয় দেখাচ্ছে ওরা, বলছে বাবাকে খুন করে দেবে!’

নবান্ন রা কাড়েনি। বছর ঘুরতে চলল, সে চিঠির সাড়া না পেয়ে এক সময় চুপ করে গিয়েছিল পরিবারটি। তবে, ফল হয়েছিল উল্টো, কী করে যেন সে চিঠির কথা পাঁচ কান হয়ে পড়েছিল। আর তাতেই বেড়ে গিয়েছিল হুমকির রকমসকম।

বেগতিক দেখে মাসির ছেলের সঙ্গে তড়িঘড়ি বিয়ে দিয়ে দিয়েছিলেন মেয়ের।বিড় বিড় করছেন, ‘‘কি করব, মুখ্যমন্ত্রীই সাড়া দিলেন না, মেয়েটাকে বাঁচাতে হবে তো!’’

শুধু নবান্নই নিশ্চুপ থাকেনি, দিন কয়েকের মধ্যেই খবর মিলেছিল, তার কাকার খুনে প্রধান অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নেওয়ার সিন্ধান্ত নিয়েছে সরকার। অথচ বোতবোড়িয়ার নিহত আসাদুল শেখের পরিবার এখনও ফিরতে পারেনি গ্রামে।

তিন সন্তান নিয়ে পরাশ্রয়ী আসাদুলের ক্ষুন্নিবৃত্তির জীবন। একই অবস্থা অন্য ভাইদেরও। বেতবেড়িয়া গ্রামের শ’খানেক বাম পরিবার এ ভাবেই যেন টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়া রয়েছে অন্যের আশ্রয়ে।

স্কুল-ভোটে বামেদের প্রার্থী হওয়ার ‘অপরাধে’ খুন হয়েছিলেন আসাদুল। আর, একে একে ঘর ছাড়তে হয়েছিল বাম সমর্থ পরিবারগুলিকে। চার-চারটে বছর, ধরে তাঁদের শূন্য ঘরে এখন মাকড়সার জাল। অথচ প্রশাসনের হুঁশ নেই।

বেতবেড়িয়া গ্রামের নেমে যাওয়া ঢালু রাস্তাটার পাশেই আসাদুলের বাড়ি। দেয়াল জুড়ে এখনও পোড়া দাগ। আসাদুলের ঘরটা কোথায়? পথ চলতি মানুষকে প্রশ্নটা ছুড়ে দিলে মাথা নিচু করে এড়িয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। বেতবেড়িয়া এখনও সন্ত্রস্ত।

সিপিএমের তরফে উদ্য়োগ অবশ্য নেওয়া হয়েছে। জেলাশাসক থেকে পুলিশ সুপার— গ্রানে গিয়ে অভয় দিয়ে এসেছেন। ঘরছাড়াদের কথায়, “এক দিকে প্রশাসন উদ্যোগী হয়েছে, অন্য দিকে ওঁরা ফিরে গেলেই শুরু হয়েছে হুমকি।’’ চাপড়া বাজারে চারদিক তাকিয়ে ঘরছাড়া এক মহিলা বলেন, “দেখছেন না রাস্তায় বেড়িয়েছি কাপড়ে মুখ ঢেকে। পুলিশ আমাদের কি ২৪ ঘন্টা পাহারা দিতে পারবে?”

প্রশাসন এগিয়ে এলেও জেলা তৃণমূলের তরফে এখনও কোনও উদ্যোগ নেই। জেলা সভাপতি উজ্জ্বল বিশ্বাস বলছেন, ‘‘ঠিক করেছি, আমি নিজেই এ বার বেতবেড়িয়া যাব। নিজের মত করে গোটা বিষয়টা বুঝে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করব।” যা শুনে সিপিএমের ঘর-হারা মানুষেরা বলছেন, ‘‘ও সব মুখে বলতে হয়, কাজে করতে নেই! তা হলে তৃণমূলে টেঁকাই দায় হবে ওঁর!’’

জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা বলছেন, “এর আগে আমরা একাধিকবার উদ্যোগ নিয়েছি। ঘর ছাড়ারাই তখন ফিরতে চাননি। আবার যদি তারা ফিরতে চান, তাহলে আমরা সব রকম ব্যবস্থা করব।” কিন্তু, কেন তাঁরা পিরতে পারেননি, তার খোঁজ কি রেখেছে প্রশাসন? অন্তত জেলা পুরিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়ার কথাতেই তা স্পষ্ট, ‘‘এ ব্যাপারে কোনও কথা বলব না।’’

তা হলে কি পুলিশও সমঝে চলে বেতবেড়িয়াকে?

CPM workers Homeless
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy