Advertisement
E-Paper

কেন এনেছেন? মানসিক রোগীকে ফেরালেন সুপার

সারা গায়ে ধুলো। নোংরা, রক্ত-মাখা জামাকাপড়ে রাস্তার ধারেই পড়েছিল লোকটা। কেউ আড় চোখে তাকাচ্ছিল, কেউ তা-ও না। কেউ কেউ আবার কোনও মতে রুমাল দিয়ে নাক চেপে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল।

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৬ ০১:৫১
চলছে সেবা। — নিজস্ব চিত্র

চলছে সেবা। — নিজস্ব চিত্র

সারা গায়ে ধুলো। নোংরা, রক্ত-মাখা জামাকাপড়ে রাস্তার ধারেই পড়েছিল লোকটা। কেউ আড় চোখে তাকাচ্ছিল, কেউ তা-ও না। কেউ কেউ আবার কোনও মতে রুমাল দিয়ে নাক চেপে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল। বিশ্রি দুর্গন্ধ যে।

তবে এর কোনওটাই পারেননি ছোট আন্দুলিয়ার বাসিন্দা আরশব আলি শেখ। সাত সকালে লছিমনটা নিয়ে বেড়িয়ে পড়েছিলেন রুজির টানে। কৃষ্ণনগর-করিমপুর রাজ্য সড়কের পাশে ও ভাবে একটা মানুষকে পড়ে থাকতে দেখে চোখ ফিরিয়ে নিতে পারেননি তিনি। লছিমনটা রাস্তার এক পাশে রেখে এগিয়ে যান। প্রথমে সন্দেহ হয়েছিল, মরে গিয়েছে নাকি। কিন্তু কিছু ক্ষণ ভাল করে লক্ষ করে বোঝেন, শরীরে এখনও প্রাণ রয়েছে। ঠিক মতো চিকিৎসা করালে হয়তো বেঁচে যাবে। ‘‘সামনেই ইদ। উৎসবের দিনে এ ভাবে একটা লোককে ফেলে রাখা যায়,’’ বললেন আরশব।

যেমন ভাবা, তেমনই কাজ। রাস্তা থেকে মানুষটাকে পাঁজাকোলা করে তুলে শুইয়ে দেন লছিমনের ভিতরে। তার পর ৮ কিলোমিটার রাস্তা উজিয়ে সোজা চাপড়া গ্রামীণ হাসপাতালে। যোগাযোগ করেন চাপড়ার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গেও।

কিন্তু তখনও জানতেন না, কোন অভিজ্ঞতা তাঁর জন্য অপেক্ষা করে রয়েছে।

ছুটে আসেন ওই সেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যরা। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্মীদের সঙ্গে হাত লাগান তাঁরাও। কিন্তু বেঁকে বসে হাসপাতাল। নিমরাজি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে কোনও মতে রাজি করিয়ে ক্ষতবিক্ষত মানুষটাকে ভর্তি করানো হয়। আর সেই শুরু বিপত্তির।

কেন এনেছেন ওকে? ওর জন্য হাসপাতালের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। লোকটা বিছানা নোংরা করছে। গায়ে কটু গন্ধ, অন্য রোগীদের অসুবিধা হচ্ছে...।

—স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটির দাবি, এমনই সব অভিযোগ তুলতে থাকেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাদের আরও বক্তব্য, হাসপাতালের শয্যায় শুধুমাত্র জায়গাটুকু দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনও পরিচর্যা তো দূরের কথা, সামান্য চিকিৎসাটুকুও করা হয়নি।

ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সম্পাদক দেবদুলাল বিশ্বাস বলেন, ‘‘মানুষটা বিছানায় পড়ে রয়েছে। এতটুকু ওষুধ পড়েনি পেটে। উল্টে এই রোগীকে ভর্তি করার জন্য সুপার সকলের সামনে অপমান করলেন। বললেন এই ধরনের রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে এসে, আমরা নাকি হাসপাতালের পরিবেশ নষ্ট করছি।’’ বলে চললেন তিনি, ‘‘সরকারি হাসপাতালে যদি নিয়ে যেতে না পারি, তা হলে কোথায় নিয়ে যাব?’’

আরও অভিযোগ, চিকিৎসা করার বিষয়ে চাপ দিতেই তড়িঘড়ি শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় রোগীকে। বারবার অনুরোধ করা সত্বেও একটা সরকারি অ্যাম্বুল্যান্স মেলেনি। শেষে নিজেদের মধ্য চাঁদা তুলে লোকটিকে কৃষ্ণনগরের জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসেন ওরা।

রবিবার সকালে অসুস্থ মানুষটাকে চাপড়া হাসপাতাল থেকে বের করে রাজেশ, অর্পণ, ইন্দ্রজিতরা তাঁকে সাবান মাখিয়ে স্নান করিয়ে পরিষ্কার জামা-প্যান্ট পরিয়ে নিয়ে যান জেলা হাসপাতালে।

এখানে অবশ্য একই পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি। দেবদুলালূবাবু বলেন, ‘‘জেলা হাসপাতালের এক দিনের চিকিৎসাতেই সুস্থ হয়ে উঠেছেন মানুষটা। আজ কলা-পাউরুটি খেলেন। এত দিনতো কিছুই দাঁতে কাটেননি।’’

যদিও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে চাপড়া গ্রামীন হাসপাতালের সুপার রণবীর সাহা বলেন, ওই রোগীয় চিকিৎসার জন্য যা যা প্রয়োজন, তা করা হয়েছে। কিন্তু যাঁরা ভর্তি করে দিয়ে গেলেন, তাঁরা কি নিজেদের দায়িত্ব পালন করেছেন। আমরাই ওদের ফোন করে ডেকে এনেছি। এই ধরনের স্পেশাল রোগীদের হাসপাতালের ভর্তি করে দিলেই চলে না।’’

সোমবার গোটা বিষয়টি লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘কোনও রোগী ভর্তি হলে তাঁর চিকিতসার সমস্ত দায়িত্ব হাসপাতালের। এমন ঘটনা কখনই কাম্য নয়।’’

Hospital super mental patient
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy