রোজিনা বিবি
টাকা টাকা করে চাপ বাড়ছিল ক্রমশই। পণের বাকি দশটি হাজার টাকা মিটিয়ে দেওয়ার পরও থামছিল না নির্যাতন। আরও..., আরও চাই।
প্রতিবাদ করেছিলেন তরুণী। কত বার বাপের বাড়িতে বলা যায়, তাদের জামাইয়ের টাকার খিদে এখনও মেটেনি। তা ছাড়া এটাও বুঝেছিলেন তিনি, এ দাবি কোনও দিন মেটার নয়। শুধু ভাবতে পারেননি, এ ভাবে দাম চোকাতে হবে। শ্বশুরবাড়ির রোষের আগুনে পুড়ে মরতে হবে তাকে।
হোগলবেড়িয়া থানার হটপাড়া গ্রামের ঘটনা। রোজিনা বিবি নামে বছর চব্বিশের এক তরুণীকে পুড়িয়ে মারার অভিযোগ উঠল তাঁর স্বামী-সহ পরিবারের চার জনের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার রাতে বোনকে খুন করার লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন রোজিনার দাদা রেজাবুল মণ্ডল।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর দুয়েক আগে হোগলবেড়িয়ার হটপাড়ার লাল্টু শেখের সঙ্গে বিয়ে হয় যমশেরপুরের কলেজ পড়ুয়া রোজিনার। বিয়ের পর থেকে তাঁদের মধ্যে ঝগড়া-অশান্তি লেগেই থাকত। রোজিনার বাবা আলাউদ্দিন মণ্ডলের অভিযোগ, মেয়ের বিয়েতে পণ হিসেবে নগদ পঞ্চাশ হাজার টাকা, সোনার গয়না ও অন্যান্য জিনিসপত্র দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাতে খিদে মেটেনি জামাই লাল্টু শেখের। দশ হাজার টাকা বাকি রয়েছে বলে মাঝেমধ্যেই খোঁটা শুনতে হতো তাঁর মেয়েকে। অনেক কষ্টেশিষ্টে তা-ও মিটিয়ে দিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন, এ বার বোধহয় ভাল থাকবে মেয়ে। সুখে শান্তিতে সংসার করবে। কিন্তু কোথায় কী?
আলাউদ্দিন পুলিশকে জানান, দশ হাজার টাকাটা পেয়ে যেতেই লাল্টুর দাবিদাওয়া আরও বেড়ে যায়। ফের শুরু হয় রোজিনার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। জামাইয়ের মুখে লেগে থাকত একটাই কথা— যা, বাবার কাছ থেকে টাকা চেয়ে নিয়ে আয়। সেই সঙ্গে মারধর।
রোজিনার দাদা রেজাবুলের আরও অভিযোগ, বৌদির সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক ছিল লাল্টু শেখের। সে কথা তাঁকে আগেই জানিয়েছিলেন বোন। ক’দিন আগে রোজিনা প্রতিবাদ করেছিলেন। প্রশ্ন তুলেছিলেন বৌদির সঙ্গে লাল্টুর সম্পর্ক নিয়ে। রেজাবুলের আক্ষেপ, হয়তো এরই মাশুল দিতে হল তাঁর ছোট বোনটাকে।
অভিযোগ, বুধবার বাড়ির সকলে মিলে জোর করে রোজিনার হাত-পা চেপে ধরে গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। ‘‘আমাদের কাউকে খবর পর্যন্ত দেয়নি ওরা। বোনটাকে বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করিয়ে দিয়েই পালিয়ে গিয়েছে। হাসপাতালে মৃত্যুর আগে বোন আমাকে সে কথা জানিয়েছে। দোষীদের কঠোর শাস্তি চাই আমরা,’’ কাঁদতে কাঁদতে বললেন রেজাবুল। সে দিন বিকেলেই রোজিনা মারা যায়।
পুলিশ সূত্রে খবর, বুধবার সকালে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় রোজিনাকে প্রথমে করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতাল ও পরে বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। দেহ ময়নাতদন্তের পর হাসপাতাল থেকে বাপের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। বৃহস্পতিবার রাতেই হোগলবেড়িয়া থানায় মৃতার স্বামী লাল্টু শেখ, শাশুড়ি হাসেনা বেওয়া, লাল্টুর দাদা রাজ্জাক শেখ ও বৌদি মামনি বিবির বিরুদ্ধে রোজিনাকে পুড়িয়ে মারার অভিযোগ জানানো হয়েছে। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) তন্ময় সরকার জানান, পুলিশ খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করছে। অভিযুক্তরা সকলেই পলাতক। তাদের খোঁজ করছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy