একই দিনে জেলার দুই প্রান্তে দুই বিধায়কের স্মরণসভার আয়োজন। অথচ তাকে ঘিরেও তৃণমূলের অন্দরের কোন্দল ফের সামনে এল।
একদিকে সদ্য প্রয়াত বিধায়ক নাসিরুদ্দিন আহমেদ এবং অন্যদিকে সাত বছর আগে নিহত কৃষ্ণগঞ্জের বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাসের স্মরণসভা। একদিকে মন্ত্রী তথা প্রাক্তন জেলা সভাপতি উজ্জ্বল বিশ্বাসের ‘আয়োজন’ করা স্মরণসভায় দেখা গেল না দলের একটা বড় অংশকে। বদলে অন্য দিন ভিন্ন এক স্মরণসভার ঘোষণা। আবার জেলার দক্ষিণে আলাদা ভাবে সত্যজিৎ বিশ্বাসের স্মরণসভার আয়োজন করতে দেখা গেল দলের
যুযুধান দুই গোষ্ঠীকে।
রবিবার বিকালে পলাশিতে বিধায়ক নাসিরুদ্দিন আহমদের বাড়ির কাছে সার্কাস ময়দানে স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। সেখানে রাজ্যের মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস, বিধায়ক কল্লোল খাঁ, মানিক ভট্টাচার্য, রুকবানু রহমান সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ হাজির থাকলেও দেখা গেল না কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তথা সাংসদ মহুয়া মৈত্র, জেলা সভাধিপতি তারান্মুম সুলতানা মীর, কর্মাধ্যক্ষ তথা মল্লিকা চট্টোপাধ্যায়, তেহট্টের বিধায়ক তাপস সাহা, করিমপুরের বিধায়ক বিমলেন্দু সিংহরায়কে। ছিলেন না স্থানীয় ব্লক নেতৃত্বের পাশাপাশি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সহ
একাধিক সদস্য।
গত ১ ফেব্রুয়ারি মারা যান কালীগঞ্জের বিধায়ক নাসিরউদ্দিন আহমেদ। তার পরই এই স্মরণসভার কথা ঘোষণা করেন মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস। পরবর্তীতে সমাজমাধ্যমে কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি মহুয়া মৈত্রের পক্ষ থেকেও ১৬ ফেব্রুয়ারি এক স্মরণসভার আয়োজনের কথা ঘোষণা করা হয়। যা নিয়ে দলে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। তৃণমূলেরই একটা অংশের দাবি, রাজ্য নেতৃত্বের তরফে উজ্জ্বল বিশ্বাসের ডাকা স্মরণসভা বাতিলের নির্দেশ এসেছিল। এতে প্রয়াত বিধায়ক গোষ্ঠীর কর্মীদের মনোবল ভেঙে যায়। সেই মনোবল ধরে রাখতেই রবিবার এই স্মরণসভার ডাক দেওয়া হয়েছে বলে বিধায়কের পরিবারের দাবি। মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস সমাজমাধ্যমে একটি ভিডিও প্রকাশ করে এই স্মরণসভায় উপস্থিত থাকার জন্য আহ্বানও জানান। এ দিন সভা শেষে মন্ত্রী বলেন, “লাল আমাদের বন্ধু, তাঁর পরিবারের তরফে স্মরণসভা করার আবেদন রেখেছিল। আমরা এখানে উপস্থিত হয়েছি। কেউ কেউ ভুল ব্যাখ্যা করছে।”
জেলা সভাপতি মহুয়া মৈত্র যে স্মরণসভার আয়োজন করছেন, রাজ্য নেতৃত্ব তার স্বীকৃতি দিয়েছে বলে বিরোধী গোষ্ঠীর দাবি। এ বিষয়ে উজ্জ্বলের দাবি, “এটা ভুল কথা। পরিবারের তরফে আবেদন করেছিল বলেই আয়োজন করা হয়।” কিন্তু সভায় ব্লক নেতৃত্বকে দেখা গেল না কেন? মন্ত্রী বলেন, “মানুষের পাশে যদি কেউ না থাকে তাহলে
তারাই একা হয়ে যাবে।”
২০১৯ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি বাড়ির পাশের মাঠে সরস্বতী পুজোর মণ্ডপের সামনে খুন হয়েছিলেন কৃষ্ণগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস। তাঁর নিহত হওয়ার পর গোটা বিধানসভা এলাকায় তৃণমূলে ধস নামে। যে মাঠে সত্যজিৎ খুন হয়েছিলেন রবিবার সেই মাঠেই তাঁর স্মরণসভার আয়োজন করেছিল তৃণমূলের হাঁসখালি-১ সাংগঠনিক ব্লক কমিটি। আবার কিছুটা দূরে আরও একটি স্মরণসভার আয়োজন করেছিলেন যুব তৃণমূলের দক্ষিণপাড়া ১ অঞ্চল নেতৃত্ব। দুই অনুষ্ঠানকে ঘিরে এলাকার তৃণমূল নেতাকর্মীদেরকে কার্যত আড়াআড়ি ভাগ হয়ে যেতে দেখা গেল। বিভাজনের কথা স্বীকারও করলেন অনেকে। দলের যুব সংগঠনের দক্ষিণপাড়া ১ অঞ্চল সভাপতি রকি ঘোষ বলেন,“সত্যজিৎদা বেঁচে থাকতে যারা তাঁর ক্ষতি করতে চেয়েছিল তারাই আজ ঘটা করে স্মরণসভার আয়োজন করবে। সেটা কর্মীরা মানতে পারেননি। তাই মানুষের দাবি মেনেই আমরা স্মরণসভার আয়োজন করেছি।” আবার অন্য স্মরণসভার আয়োজক তৃণমূলের হাঁসখালি ১ সাংগঠনিক ব্লকের সভাপতি দীনেশ চক্রবর্তী বলেন, “রকিদের কোনও জনভিত্তি নেই। দলেও ওদের গুরুত্ব নেই। বিরোধীদের সুবিধা করে দিতেই আলাদা ভাবে ওরা অনুষ্ঠান করছে।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)