অনেক দিন পর ওরা ফিরে পাচ্ছে হারিয়ে যাওয়া বন্ধু, স্যর, চেনা পরিবেশ। আগের মতো। সেই মার্চ মাস থেকে ঘরবন্দি জীবনে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছিল শরীর, মন।
এই বছর আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠান তাদের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনল।
অন্যান্য বছরে ৩ ডিসেম্বর দিনটি আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস হিসাবে পালিত হয়। রাজ্য জুড়ে নানা অনুষ্ঠান উৎসবের আয়োজন হয়। কিন্তু অতিমারি কালে সে সব বন্ধ। বিশেষ করে ওদের বাড়ি থেকে বেরনোর ঝুঁকি অনেক বেশি বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। অনেকেরই প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনায় কম। সুতরাং, আনলকের ছয় তম পর্বে এসেও ওদের মুক্তি ঘটেনি।
এই পরিস্থিতিতে এবার রাজ্য সরকারের উদ্যোগে প্রতিবন্ধী দিবস বদলে যায় আন্তজাতিক প্রতিবন্ধী সপ্তাহে। ডিসেম্বরের ৩ থেকে ৯ সপ্তাহ জুড়ে নানা অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করা হয়। তাতেই ভার্চুয়াল মাধ্যমে জেলা জুড়ে শুরু হয় উদ্যাপন। দীর্ঘ দিনের বন্দি জীবনে এই সপ্তাহটি যেন নতুন করে মুক্তির স্বাদ এনে দিয়েছে নানা বয়সের প্রতিবন্ধীদের কাছে।
এই বিষয়ে নদিয়া জেলা শিক্ষা আধিকারিক বিশ্বজিৎ ঢ্যাং বলেন, “করোনা কালে ভীষণ ভাবে বিছিন্ন হয়ে পড়েছিলাম আমরা সবাই। কিন্তু শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধীদের সমস্যা আরও জটিল। ওদের কথা ভেবে এই দুঃসময়ে ওদের পাশে থাকার জন্য রাজ্য সরকারের তরফে এই সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।’’
তিনি জানালেন, প্রতিবন্ধীদের কাছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পৌঁছে যাওয়া হচ্ছে। পাঁচটি বিভাগে বাড়িতে বসে তারা নিজস্ব অনুষ্ঠান রেকর্ড করে পাঠাচ্ছে নিজস্ব অঞ্চলের প্রতিবন্ধী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। সেখান থেকে আসছে জেলায়। বিশ্বজিতের কথায়, ‘‘ওদের উপস্থাপনার উপরে পুরস্কার দেওয়া হবে। আর কোনও কিছুর জন্য ওদের আসতে হবে না। আমরাই ওদের কাছে যাব।”
নদিয়ার আইইডি স্বপনকুমার রক্ষিত বলেন, “বিপুল সাড়া পড়েছে। আমাদের জেলায় প্রতিবন্ধীদের ৩৭টি কেন্দ্র আছে। তাতে কমবেশি ৮১৯০ জন প্রতিবন্ধী শিশু-কিশোর আছে, যারা প্রাক্-প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করছে। সকলে খুশি হয়ে অংশগ্রহণ করছে। আমাদের মোবাইল উপচে পড়ছে ওদের গান, কবিতা, নাচ, আঁকায়।”
গোটা প্রক্রিয়ায় সঙ্গে যুক্ত নদিয়ার এক স্পেশাল এডুকেটর শ্যামাপ্রসাদ ভট্টাচার্য বলেন, “মাসের পর মাস ধরে এই বিশেষ শিশু-কিশোরেরা খুবই দুঃসহ জীবনযাপন করছে। তাদের অভিভাবকেরা কার্যত বুঝতে পারছিলেন না কী ভাবে সামাল দেবেন। চেনা পরিবেশ, প্রশিক্ষক, বন্ধু এবং শারীরিক-মানসিক থেরাপি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছিল ওরা। সেই অবস্থায় এমন একটি সপ্তাহব্যাপী আয়োজন ওদের কাছে মুক্তির আকাশ হয়ে উঠেছে।”
আজ, ৯ ডিসেম্বর বাড়ি বাড়ি গিয়ে পৌঁছে দেওয়া হবে পুরস্কার।