Advertisement
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আবাইকে নিয়েও সেই আমরা-ওরা

এই গ্রাম বাংলা ভাষাচর্চার পীঠস্থান হতে পারত। হয়নি। বাসিন্দারা বাবলাকে ‘আদর্শ’ গ্রাম হিসেবে গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছিলেন। সে দাবি পূরণ হয়নি। এমনকি বিক্রি হয়ে গিয়েছে বরকতের জন্মভিটেও!

অনল আবেদিন ও কৌশিক সাহা 
শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:১১
Share: Save:

এই গ্রাম ভাষাশহিদের। এই গ্রামেই জন্মেছিলেন আবাই। আবাই কে? শহিদ আবুল বরকতকে এই ডাকনামেই চিনত তামাম গ্রাম। সালারের সেই গ্রামের নাম বাবলা।

এই গ্রাম বাংলা ভাষাচর্চার পীঠস্থান হতে পারত। হয়নি। বাসিন্দারা বাবলাকে ‘আদর্শ’ গ্রাম হিসেবে গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছিলেন। সে দাবি পূরণ হয়নি। এমনকি বিক্রি হয়ে গিয়েছে বরকতের জন্মভিটেও!

শোনা যায় আবুল বরকতের মা হাসিনা বেওয়া ছেলের মৃত্যুদিনে মিলাদ দিতেন!

এখন সে সবই অতীত। ভিটে-মাটি বিক্রি করে ১৯৮০ সাল নাগাদ হাসিনা চলে যান বাংলাদেশে। অতীত বুকে বেঁচে আছে বাবলা। তবে সে বাঁচা বড় সুখের নয়। সুখকর নয় এখনকার একুশে অভিজ্ঞতাও।

গ্রামের বহু বাসিন্দার আক্ষেপ, ভাষাচর্চার বদলে এই দিনটিকে ঘিরেও চলে রাজনীতির তরজা। এ বারের একুশ উপলক্ষেও ভাষা ও সংস্কৃতিচর্চার বদলে বরকতের গ্রামে চলবে তিন দিনের ‘বিচিত্রানুষ্ঠান’।

বছর কয়েক আগেও বরকতকে নিয়ে দড়ি টানাটানিতে অভ্যস্থ কংগ্রেস ও সিপিএম তো বটেই, শাসকদল তৃণমূলেরও অনেকে এটা মন থেকে মেনে নিতে পারছেন না।

সালারের ‘রাহিলা সংস্কৃতি সঙ্ঘ’-এর কর্ণধার আব্দুর রফিক খানের হাত ধরে ভাষাশহিদের স্মরণ অনুষ্ঠান শুরু হয় ১৯৭৪ সালে। কংগ্রেস নিয়ন্ত্রিত ‘শহিদ আবুল বরকত স্মৃতি সঙ্ঘ’র সম্পাদক সৈয়দ সিয়াদত আলি বলেন, ‘‘বরকতের জন্মভিটেয় প্রথম শহিদ দিবস উদ্‌যাপন করা হয় ১৯৯৪ সালে। ২০০২ সালে সিপিএমের দখলদারি শুরু হয়।

প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে ঘণ্টা-মিনিট ভাগাভাগি করে শহিদের ভিটের দুই প্রান্তে দু’টি কমিটির উদ্যোগে অনুষ্ঠান হয়।’’ দ্বিতীয় অনুষ্ঠানের নেতৃত্ব দেন ‘শহিদ আবুল বরকত কেন্দ্র’র সম্পাদক তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তুষার দে।

রাজ্যে পালাবদলের পরে বিভেদ ভুলে ২০১৫ সালে সিপিএম ও কংগ্রেস বাবলা গ্রামে মিলিজুলি অনুষ্ঠান করে। তুষার দে বলছেন, ‘‘প্রশাসনিক মদতে ২০১৬ সালে ওই অনুষ্ঠান জবরদখল করে নেয় তৃণমূল।’’ যদিও মহিলা তৃণমূলের জেলা সভানেত্রী শাহনাজ বেগম বলেন, ‘‘ভাষা শহিদকে কোনও রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় রাখা ঠিক নয়।’’ তাঁর রাজনৈতিক সহকর্মী আজাহারউদ্দিন সিজার দলের ব্লক সভাপতি, পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ ও বাবলা গ্রামের একুশে উদ্‌যাপন কমিটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক। তিনি রাখঢাক না করেই বলছেন, ‘‘শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় তিন দিনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।’’ গড়গড় করে নাচ-গানের অনুষ্ঠানের ফিরিস্তি দিলেও কোনও আলোচকের নাম তিনি জানাতে পারেননি।

বাবলা গ্রামের আবাই তথা আবুল বরকতের জন্ম ১৯২৭ সালের ১৩ জুন। বাবলা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে তালিবপুর হাইস্কুল থেকে তিনি ১৯৪৫ সালে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ১৯৪৮ সালে বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজে থেকে আইএ পাশ করে ঢাকায় চলে যান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে তিনি স্নাতক স্তরে ভর্তি হন। বাংলাকে পাকিস্তানের মাতৃভাষার মর্যাদা দেওয়ার দাবি জানিয়ে ১৪৪ ধারা অগ্রাহ্য করে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তিনি মিছিলে যোগ দেন। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। তাঁর দেহ মেলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হস্টেলের ১২ নম্বর শেডের বারান্দায়।

বরকতের স্মৃতিতে লোকজনের দাবি ছিল গ্রামের নাম হোক— বরকতনগর। সে দাবি পূরণ হয়নি। তবে বাংলাদেশ বরকতের জন্মভিটেকে মনে রেখে ওপার বাংলার একটি গ্রামের নাম রেখেছে— বাবলাবিথি!

অন্য বিষয়গুলি:

International Mother Language Day Mother Language অমর একুশে
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy