Advertisement
E-Paper

রাস্তা তৈরিতে অনিয়ম, ভেঙে পড়ছে দু’দিনেই

মেঠো রাস্তায় পড়ছে মোরাম, ইট এমনকী পিচও। কিন্তু লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে গড়া সেই সমস্ত রাস্তা ভেঙে পড়ছে ক’দিনেই। এ ব্যাপারে ব্লক বা জেলা প্রশাসনের কাছে ভুরি-ভুরি অভিযোগ জমা পড়ছে। কিন্তু পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে না তাতে। রাজনৈতিক দলের মদতপুষ্ট সেই সব ঠিকাদার ফের বরাত পাচ্ছে পঞ্চায়েতের কাজের।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৪ ০২:৪২

মেঠো রাস্তায় পড়ছে মোরাম, ইট এমনকী পিচও। কিন্তু লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে গড়া সেই সমস্ত রাস্তা ভেঙে পড়ছে ক’দিনেই। এ ব্যাপারে ব্লক বা জেলা প্রশাসনের কাছে ভুরি-ভুরি অভিযোগ জমা পড়ছে। কিন্তু পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে না তাতে। রাজনৈতিক দলের মদতপুষ্ট সেই সব ঠিকাদার ফের বরাত পাচ্ছে পঞ্চায়েতের কাজের।

মাস খানেক আগেই নদিয়ার নাকাশিপাড়ার বিক্রমপুর পঞ্চায়েত নিয়ম অগ্রাহ্য করে একাধিক টেন্ডার ডেকেছে বলে নাগাদির বাসিন্দা নুর মহম্মদ শেখ জেলাশাসক, সদর মহকুমাশাসক ও জেলা পরিষদের সভাধিপতির কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘‘বিক্রমপুর পঞ্চায়েত আইজিপি-র অর্থের অপব্যবহার করে চাপা টেন্ডারের মাধ্যমে নিম্ন মানের রাস্তা তৈরি করেছে।’’ অভিযোগের পর নুর মহম্মদ এখনও অবধি কোনও সুরাহা পাননি। তবে বিক্রমপুরের প্রধান ও উপপ্রধান পেশায় ঠিকাদার নুর মহম্মদকে কালো তালিকাভুক্ত করেছেন। উপপ্রধান সিপিএমের নিরন আলি শেখের অবশ্য যুক্তি , “ওই ঠিকাদারের কাজের মান খারাপ বলেই ‘ব্ল্যাকলিস্ট’ করা হয়েছে।”

গেল মার্চে বিক্রমপুর পঞ্চায়েত তৈরি হওয়া একাধিক রাস্তার গুণমান নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয় লোকজনও ওই পঞ্চায়েতের কুটিরবাগান মিলন সঙ্ঘের মাঠ থেকে থেকে আজাদ শেখের বাড়ি অবধি কংক্রিটের রাস্তা তৈরি হয়েছে। অভিযোগ, সেই রাস্তার মান অত্যন্ত খারাপ। এই নিয়ে স্থানীয় জনা ষাটেক বাসিন্দা বিডিও-র শরণাপন্ন হন। অভিযোগকারী আনিসুর শেখ বলেন, ‘‘শুরু ও শেষের জাগয়া বাদে কোনও জায়গাতেই রাস্তার উচ্চতা পাঁচ ইঞ্চি হয়নি।’’ দিন কয়েক আগে এলাকায় গিয়ে খালি চোখেই দেখা গেল, রাস্তার উচ্চতা ইঞ্চি তিনেক হবে। আনিসুর শেখের বক্তব্য, ‘‘২ লক্ষ ১০ হাজার ১৯৬ টাকা বরাদ্দ হয় ওই রাস্তা তৈরিতে। কিন্তু ঠিকাদার সংস্থা ঠিকমতো কাজ করল না।’’ অভিযোগের ভিত্তিতে ওই ঠিকাদার সংস্থার পাওনা-গণ্ডা মাস দু’য়েক আটকেও যায়। পরে অবশ্য টাকা পায় ওই সংস্থা। ওই গ্রাম পঞ্চায়েতেরই নাগাদি রেলগেট থেকে নতুনপাড়া অবধি ঝামা ইটের রাস্তা তৈরি হয়েছে সাকুল্যে মাস পাঁচেক আগে। কিন্তু ইতিমধ্যেই রাস্তা ভরে গিয়েছে খানাখন্দে। এলাকার মাঝবয়সী এক মহিলা বললেন, “ধর তক্তা মার পেরেক ঢঙে রাস্তাটা তৈরি হল। দিন কয়েকের মধ্যেই রাস্তার পাশ থেকে ইট খসে পড়েছে।” শুধু বিক্রমপুর পঞ্চায়েতই নয়, নাকশিপাড়া-১ ও ২ নম্বর পঞ্চায়েত, পলাশিপাড়া বিধানসভা ক্ষেত্রের বার্নিয়া, কালীগঞ্জ ব্লকের বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকার রাস্তাও তৈরির কয়েক মাসের মধ্যেই ভেঙেচুরে যাচ্ছে।

আর সব ক্ষেত্রেই কারণ হিসেবে উঠে আসছে চাপা টেন্ডার ব্যবস্থা। অর্থাৎ নোটিস না দিয়ে বা দেওয়ার একদিন পরেই ডাকা হচ্ছে টেন্ডার। ফলে পঞ্চায়েতের মাতব্বরদের ঘনিষ্ঠ ঠিকাদার সংস্থাগুলি ছাড়া কেউ টেন্ডারের ব্যাপারে কিছু জানতে পারছে না। অনেক ক্ষেত্রে নোটিস টাঙিয়ে খানিকক্ষণের মধ্যেই তা ছিড়ে ফেলে মোটা টাকা আত্মসাৎ করে পঞ্চায়েতগুলি পছন্দমতো সংস্থাকে কাজ দিচ্ছে। মোটা টাকা কমিশন দেওয়ার পর ঠিকাদার সংস্থাগুলিও নিয়ম মেনে কাজ করছে না। এই অসৎ পন্থার বিরুদ্ধে বেশিরভাগ ঠিকাদারই মুখ বুজে রয়েছেন। পাছে পঞ্চায়েত তাঁদের কালো তালিকাভুক্ত করে দেয়। তবে আড়ালে-আবডালে জেলার বহু ঠিকাদার সংস্থাই তাদের ক্ষোভের কথা জানাচ্ছেন। নাকাশিপাড়ার এক ঠিকাদার বলেন, ‘‘নাকাশিপাড়া-১ ও ২ নম্বর পঞ্চায়েত অনেকক্ষেত্রে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর নোটিস প্রকাশ্যে আনছে।” বার্ণিয়া পঞ্চায়েতেরও এক ঠিকাদারেরও একই অভিজ্ঞতা, “পঞ্চায়েতের নেতারা তাদের ধামাধরা ঠিকাদারদের কাছ থেকে মোটা টাকা কমিশন নিয়ে স্বচ্ছ ভাবে টেন্ডার ডাকছে না।”

টেন্ডার অনিয়মের চক্র যে গোটা জেলা জুড়ে জাকিয়ে বসেছে তা কার্যত স্বীকার করছেন নদিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি তৃণমূলের বাণীকুমার রায়। তাঁর স্বীকারোক্তি, “নাকাশিপাড়া, করিমপুর, পলাশিপাড়া ব্লকের অনেক পঞ্চায়েত গোপনে টেন্ডার করছে বলে বেশ কিছু অভিযোগ এসেছে। সেগুলির তদন্ত চলছে। প্রাথমিক ভাবে কিছু কিছু অভিযোগের সত্যতাও ধরা পড়েছে।’’

irregularities in builing roads breaking within 2 days dhubulia nadia nakashipara construction road state news online state news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy