কোথাও রাত জেগেই চলছে মণ্ডপ তৈরির কাজ। কোথাও মণ্ডপ তৈরি শেষে অপেক্ষা বোধনের। কোথাও বায়নার অপেক্ষায় বসেছে ঢাকিদের আসর। কোথাও আবার ফুচকা খাওয়ার প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছেন পুজোকর্তারা। সোমবার সন্ধ্যায় কৃষ্ণনগরের আনাচেকানাচে ধরা পড়ল এমনই সব টুকরো টুকরো ছবি।
কৃষ্ণনগরের রাজবাড়ির রাজরাজেশ্বরীর পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে এলাকার মানুষের আবেগ। প্রতিপদ থেকেই শুরু হয়েছে হোমের কাজ। ষষ্ঠী অর্থাৎ আজ, দেবী বেদীতে উঠবেন। আলো দিয়ে সাজানো হয়েছে নাটমন্দির। রাজবাড়ির সদস্য সৌমীশচন্দ্র রায় বলেন, “মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের আমলে একটি সিংহাসনের কিছু অংশ আমরা হাতে পেয়েছিলাম। সেই সময়ের একটি ছবির সঙ্গে মিলিয়ে সেটিকে একটি পুর্ণাঙ্গ সিংহাসনের রূপ দেওয়া হয়েছে। দর্শকদের জন্য তা নাটমন্দিরে রাখা হয়েছে। এছাড়াও মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের আমলে দুটি সিন্ধুক ও রাজবাড়ির অন্দরমহলের ব্যবহৃত একটি পালকি প্রদর্শনীর জন্য রাখা হয়েছে।”
তাঁতিপাড়ার বসু বাড়ি পুজো যা পুরন্দর খাঁয়ের পুজো নামে বিখ্যাত। ওই বাড়ির সদস্য সলিলকুমার বসু বলেন, “ এই পুজো পাঁচশো বছরেরও প্রাচীন।” এছাড়াও রায় বাড়ি, নীল দুর্গা বাড়ির পুজো প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। ১৬৪ বছরে পড়ল মৈত্র বাড়ির পুজো। প্রত্যেক দিনই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকবে বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
বাড়ির পুজো ছাড়াও বারোয়ারি বা ক্লাব পুজোগুলো কৃষ্ণনগরের বাড়তি আকর্ষণ। পাত্র বাজার বারোয়ারি এ বার ৭৫ বছরে পড়ল। পুজোর সম্পাদক তরুণ ভট্টাচার্য বলেন, “পঞ্চমীতেই পুজোর উদ্বোধন হয়ে গিয়েছে।” ঘূর্ণির তরুণ সঙ্ঘের পুজো এ বছর ৬৪ বছরে পড়ল। মণ্ডপ কলকাতার বিড়লা মন্দিরের আদলে। গুজরাত ঘরানায় তৈরি ঘূর্ণির নবকিশোর সঙ্ঘের মণ্ডপ ও প্রতিমা সকলকে চমক দেবে বলে দাবি পুজো কর্তাদের। উকিলপাড়া বারোয়ারি অলোক পালের তৈরি এক চালের প্রতিমার নজর কাড়ে। শম্ভু মিত্রের জন্ম শতবর্ষে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে মণ্ডপসজ্জা সকলের নজর কেড়েছে।
কৃষ্ণনগর স্টেশনের কাছে ভাতজাংলা নতুন কালীপুরের পুজো এ বার ৩৪ বছরে পড়ল। বন্ধু ক্লাবের সদস্য সৈকত কুণ্ডু বলেন, “কলেজিয়েট স্কুলের কয়েক জন মিলে আমরা এই পুজো শুরু করেছিলাম।”
মাতৃ আরাধনায় পিছিয়ে নেই মহিলারাও। চাঁদ সড়ক পাড়ায় বারোয়ারির পুজো পরিচালনা করেন মহিলারা। তাই পুজোর সদস্যা সোমা মুখোপাধ্যায়, অপর্ণা সাহাদের যেন নাওয়া খাওয়ার সময় নেই। পুজোর বাজার, মণ্ডপসজ্জা, প্রতিমা আনার কাজ দশ হাতে ওঁরাই তো সব সামলাচ্ছেন।
কুর্চিপোতা বারোয়ারি পুজোয় যোগ দিয়েছেন নানা সম্প্রদায়ের মানুষ। পঞ্চমীতেই ওই পুজোর উদ্বোধন হয়ে গিয়েছে। সন্ধ্যায় ছিল ছোটদের যেমন খুশি সাজো প্রতিযোগিতা। এছাড়াও পুজোর অন্যান্য দিন থাকছে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও।
নতুন শম্ভু নগরে এ বছর প্রথম পুজো হচ্ছে। পুজো কমিটির সহ-সভাপতি কাশেম শেখ বলছেন, “উৎসবের আবার কোনও রং হয় নাকি? দুর্গা পুজো শেষ হলেই আমরা সবাই আবার মেতে উঠব ঈদ উৎসবে।” উৎসবের রঙিন আলোয় আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে উৎসবের মুহূর্তগুলো।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy