সিপিএমের দেওয়ালে কংগ্রেসের প্রচার। আজিমগঞ্জে গৌতম প্রামাণিকের তোলা ছবি।
সিপিএম তুমি কার?
জোটপ্রার্থীর, না কি শরিকের?
হাত হাতে দাঁড়ানো শাওনী সিংহ রায়ের, না কি সিংহে সওয়ার বিভাস চক্রবর্তীর, কার?
প্রশ্নটা উঠছেই, কেননা প্রথম দফায় না হলেও বামফ্রন্টের তরফেই ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক বিভাসের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। অথচ ‘জোটধর্ম’ চোখে পড়ছে দিব্যি।
প্রশ্নটা উঠছেই, কেননা শাওনী মনোনয়ন দিতে গিয়েছেন সিপিএমের লোকেদের সঙ্গেই। আর বিভাসের সঙ্গী শুধু গুটিকয় অনুগত।
প্রশ্নটা উঠছেই, কেননা ‘সিপিএম’ লিখে চুনকাম করা দেওয়ালে জ্বলজ্বল করছে শাওনীর় নাম। নিচুতলার সিপিএম কর্মীরা তাঁর হয়ে দেওয়াল লিখন থেকে শুরু করে বাড়ি-বাড়ি প্রচার সবই শুরু করে দিয়েছেন।
আসলে শরিকি চাপেই ঢেঁকি গিলতে হয়েছে সিপিএমকে। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের প্রার্থী হিসাবে কিছু দিন আগে ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক বিভাস চক্রবর্তীর নাম ঘোষণা করেন। কিন্তু তার আগেই কংগ্রেস ওই কেন্দ্রের কথা ঘোষণা করে দিয়েছিল। বিদায়ী বিধায়ক শাওনীই যে সেখানে ফের দাঁড়াবেন, তা-ও প্রায় প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু হঠাৎ ফরওয়ার্ড ব্লকের আব্দার মেটাতে বিমানবাবুরা বিভাস চক্রবর্তীর নাম ঘোষণা করে বসায় জলঘোলা শুরু হয়ে যায়।
নিচুতলা তো বটেই, সিপিএমের জেলা নেতৃত্বও যে কংগ্রেস প্রার্থীকে ‘জোটপ্রার্থী’ বলে মনে করছেন, সেই ইঙ্গিত কার্যত স্পষ্ট। দলের লালবাগ জোনাল সম্পাদক দীপঙ্কর চক্রবর্তীও স্বীকার করেন, ‘‘আগামী ৫ এপ্রিল জোটপ্রার্থী শাওনী সিংহ রায়ের সমর্থনে জিয়াগঞ্জে যৌথ কর্মিসভা হবে। ৭ এপ্রিল যৌথ মিছিল হবে।’’ বিভাসও সিপিএমের মনোভাব ভালই বুঝে গিয়েছেন। শনিবার খেদের সঙ্গে বিভাস বলেন, ‘‘মনোনয়পত্র জমা দেওয়ার সময় সিপিএম আমার সঙ্গে এল না। সিপিএম কর্মীরা কংগ্রেসের হয়ে খাটছে। অথচ রাজ্য বামফ্রন্ট আমাকে প্রার্থী করেছে। বাম ঐক্য ভাঙার দায় সিপিএমকে নিতে হবে।’’
সিপিএম তাঁর বদলে কংগ্রেসকে সমর্থন করলেও তিনিই জিতবেন বলে দাবি বিভাসের। তিনি গোঁ, ‘‘কোনও অবস্থাতেই নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরব না। সে সিপিএম পাশে থাকুক, আর না-ই থাকুক। আমি জিতবার জন্যই লড়ব।’’
সিপিএম ছাড়া জেতার সম্ভাবনা কি আছে ফরওয়ার্ড ব্লকের?
২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে শাওনী সিংহ রায়ের কাছেই ৬৩৫২ ভোটে হেরেছিলেন বিভাস। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বামফ্রন্ট প্রার্থী ২৩০ ভোটে এগিয়ে যান। কিন্তু সেই ফল তো একা ফরওয়ার্ড ব্লকের নয়, সম্মিলিত ভাবে বামফ্রন্টের, যার মূল চালিকা শক্তি সিপিএম।
বাকি রইল পঞ্চায়েত ও পুরভোট। এই বিধানসভা এলাকায় পড়ে মুর্শিদাবাদ-জিয়াগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতি অর্থাৎ আটটি গ্রাম পঞ্চায়েত ও দু’টি পুরসভা— মুর্শিদাবাদ ও জিয়াগঞ্চ-আজিমগঞ্জ। এর মধ্যে মুর্শিদাবাদ পুরসভা কংগ্রেসের দখলে, জিয়াগঞ্চ-আজিমগঞ্জ বামফ্রন্টের। আটটির মধ্যে চারটি পঞ্চায়েত জিতেছিল কংগ্রেস, চারটি বামফ্রন্ট। পরে দলবদলের ফলে বামেদের একটি ও কংগ্রেসের তিনটি তৃণমূলে চলে গিয়েছে। দুই পুরসভার মোট ৩৩ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ফরওয়ার্ড ব্লকের তিন জন। বামেদের দখলে থাকা মুর্শিদাবাদ-জিয়াগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির ২৪টি আসনের মধ্যেও ফরওয়ার্ড ব্লকের দখলে রয়েছে মাত্র চারটি। ফলে, সিপিএম ছাড়া ফরওয়ার্ড ব্লকের গতি নেই, তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু সিপিএম কি একশো আনা জোটে আছে, না কি শরিকেও আছে দুয়েক আনা?
সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কার পক্ষে আমরা তা জানতে আর দু’-এক দিন অপেক্ষা করতে হবে। তবে কোনও অবস্থাতেই তৃণমূলের সুবিধা করতে দেব না।’’
বিভাস কি তবে নিজের নাক কেটে তৃণমূলের সুবিধা করে দিতে চাইছেন?
বিভাসের মোদ্দা কথা— ‘‘তৃণমূল বিরোধিতা বুঝলাম। তা বলে তো দলটা উঠিয়ে দিতে পারি না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy