ন’বছরের বালিকাকে ধর্ষণের দায়ে এক যুবককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিলেন কৃষ্ণনগর পকসো আদালতের বিচারক জীমূতবাহন বিশ্বাস।
শুক্রবার সাজা শুনিয়ে তিনি জেলাশাসককে নির্দেশ দেন, বালিকার ভরণপোষণের জন্য এক মাসের মধ্যে ১০ লক্ষ টাকা দিতে হবে, উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থাও করতে হবে। এর মধ্যে এক লক্ষ টাকা দেবে সাজাপ্রাপ্ত, ধানতলার বাসিন্দা দিনেশ দাস। বিকেলে সাজা শুনে ওই বালিকার মা অবশ্য বলেন, ‘‘মেয়ের জীবনটাই তো ও নষ্ট করে দিয়েছে। এখন টাকা দিয়ে কী হবে!’’
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর ৯ অগস্ট বাড়ির সামনে খেলা করছিল বছর নয়েকের ওই বালিকা। প্রতিবেশী দিনেশ দাস তাকে ডেকে নিয়ে যায় সলুয়া রেলগেটের কাছে একটি গর্তে। সেখানে সে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে, মারাত্মক নির্যাতন চালায়। পরে অচৈতন্য অবস্থায় তাকে গর্তের ভিতরে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।
সন্ধ্যার পরেও মেয়ে বাড়ি না ফেরায় নানা জায়গায় খোঁজখবর শুরু করেন তার বাড়ির লোকজন। তখন দিনেশেরই আত্মীয় এক শিশু জানায় যে, দিনেশ ওই মেয়েটিকে নিয়ে রেলগেটের দিকে গিয়েছিল। শিশুটির পরিবার ও গ্রামের লোকজন গিয়ে গর্তের ভিতর থেকে মেয়েটিকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যান। রাতেই তাকে সেখান থেকে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তার পরে কল্যাণী জেএনএম ও কলকাতায় এনআরএস হাসপাতালে দীর্ঘদিন তার চিকিৎসা চলেছে। এখন সে বাড়িতেই আছে। কিন্তু হাঁটা দূরের কথা, ভাল ভাবে দাঁড়াতেই পারে না। পরিবারের লোকজনের সাহায্যে তাকে চলাফেরা করতে হয়।
ঘটনার রাতেই ধানতলা থানায় দিনেশের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেছিলেন বালিকাটির মা। পরের দিন পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। তারপর থেকে সে জেল হাজতে ছিল। ১৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণের পরে এ দিন তার সাজা ঘোষণা করেন বিচারক। সরকার পক্ষের আইনজীবী অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায় জানান, মেয়েটি এখনও পর্যন্ত শারীরিক ও মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত। তার সম্পূর্ণ ভাবে সেরে ওঠার সম্ভবনা খুবই কম। এখনও তার আতঙ্ক কাটেনি।
জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলেন, “রায়ের প্রতিলিপি এখনও হাতে পাইনি। তবে বিষয়টি শুনেছি। আমরা ইতিমধ্যেই ভরণপোষণের টাকার জন্য স্বরাষ্ট্র দফতরের সঙ্গে যোগাযাগ করেছি, যাতে আদালতের নির্দেশ দ্রুত বাস্তবায়িত করা যায়।”
এর আগেও নিম্ন আদালতে শিশু ও মহিলাদের উপরে নির্যাতনের মামলায় ফাঁসি বা যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়েছে। ২০০৮ সালে এক সন্তানসম্ভবা মহিলাকে পুড়িয়ে মারার দায়ে তাহেরপুরের কাজল সরকারকে ফাঁসির নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারক। ২০১৪ সালে গেদের অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় প্রতিবেশী যুবক বিমল সর্দারকে ফাঁসির নির্দেশ দিয়েছিলেন কৃষ্ণনগর আদালতেরই বিচারক। ২০১৫ সালে ঘুঘড়াগাছিতে জমি দখল ঠেকাতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের গুলিতে নিহত অপর্ণা বাগের খুনের ঘটনায় লঙ্কা ঘোষ-সহ ১১ জনের ফাঁসির নির্দেশ দিয়েছিল একই আদালত। গত বছর ৩০টি শিশু ধর্ষণ ও নির্যাতনের মামালায় সাজা ঘোষণা করেছে পকসো আদালত। এ বছর ইতিমধ্যেই চারটি সাজা ঘোষণা হয়েছে। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের একাধিক নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি অন্য এক শিশু নির্যাতনের ঘটনায় মাত্র ১৪ দিনের মধ্যে সাজা ঘোষণা করেছিলেন বিচারক জীমূতবাহন বিশ্বাস। নদিয়ার পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়া বলেন, “শিশুদের উপরে নির্যাতনের ঘটনার ক্ষেত্রে দ্রুত তদন্ত শেষ করার
চেষ্টা করছি আমরা, যাতে বিচারপ্রক্রিয়াও তাড়াতাড়ি শেষ হয়। তার জন্য ট্রায়াল মনিটরিং সেলও তৈরি করেছি।”