Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

দেওয়াল চাপা ও বাজ পড়ে মৃত ৫

এ দিন, দেওয়াল চাপা পড়ে দু’জন ও বজ্রাঘাতে আরও তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। জখম দশ জনকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

লন্ডভন্ড: ভেঙে পড়েছে ঘর। হোগলবেড়িয়ায়। ছবি: কল্লোল প্রামাণিক

লন্ডভন্ড: ভেঙে পড়েছে ঘর। হোগলবেড়িয়ায়। ছবি: কল্লোল প্রামাণিক

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

ঝড়ে রক্ষা নেই, দোসর বজ্রপাত!

বৃহস্পতিবার সকালের ঝড় ও বজ্রপাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নদিয়া ও মুর্শিদাবাদের বহু এলাকা।

এ দিন, দেওয়াল চাপা পড়ে দু’জন ও বজ্রাঘাতে আরও তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। জখম দশ জনকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

নওদার সর্বাঙ্গপুরে দেওয়াল চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে কালীপদ বিশ্বাসের (৬০)। ঝড়ের সময় তিনি বাড়িতেই ছিলেন। দেওয়াল ভেঙে পড়ে তাঁর উপর। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান তিনি। নওদার ত্রিমোহিনী মাঠপাড়ার সিদ্দিক মণ্ডল (৭২) দেওয়াল চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। জখম হন সিদ্দিকের স্ত্রী মোমিনা বিবি-সহ ওই পরিবারেরই চার জন। তাঁরা মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন।

নওদার দমদমা কামাদপুরে বাজ পড়ে মৃত্যু হয়েছে হাসিবুর হালসানার (৪৫)। সালারের কেচুনিয়া গ্রামে খেতে কাজ করার সময় বাজ পড়ে মৃত্যু হয় কালীকিঙ্কর ঘোষের (৫৭)। নবগ্রামের অনন্তপুরে কাঠ কুড়োতে গিয়ে বাজ পড়ে মারা গিয়েছেন মুর্শিদা বিবি (২৬)।

নওদার ঘোড়ামারার বৃদ্ধ শ্রীনন্দন মণ্ডল খেতে গিয়েছিলেন। ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলে তিনি গাছতলায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। ঝড়ে সেই গাছের ডাল ভেঙে তাঁর গলায় ঢুকে গুরুতর জখম হন। মুর্শিদাবাদে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের চিকিৎসক গৌতম বিশ্বাসের নেতৃত্বে দীপঙ্কর কুণ্ডু, সৌরভ নস্কর ও অ্যানাস্থেটিস্ট তপোব্রত মিত্র ও শঙ্কর রায়ের চেষ্টায় চার ঘণ্টার অস্ত্রোপচারের পরে এখন ওই বৃদ্ধ বিপন্মুক্ত। শ্রীনন্দনের ছেলে গোলোক মণ্ডল বলছেন, ‘‘সঠিক সময়ে চিকিৎসা হওয়ায় বাবা জীবন ফিরে পেলেন।’’

নওদার বিডিও লিটন সাহা বলেন, “নওদার ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েতে কমবেশি ক্ষতি হয়েছে। ঝড়-বৃষ্টির জেরে নওদায় তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। ন’টি জায়গায় বিদ্যুতের তার ছিড়েছে। কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। দেওয়া হচ্ছে ত্রাণ সামগ্রীও।’’ নওদায় ঝড়ের জেরে প্রায় এক হাজার ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে বলে দাবি জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ মোসারফ হোসেনের। কোথাও বাড়ির দেওয়াল ভেঙে পড়েছে, কোথাও উড়ে গিয়েছে ঘরের চালা। ভেঙে পড়েছে বহু গাছ। বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে বিদ্যুতহীন হয়ে পড়েছে নওদা, বেলডাঙার বহু গ্রাম।

ঝড়ে রাস্তার পাশে বহু গাছ ভেঙে পড়ায় আমতলা-পাটিকাবাড়ি ও হলদিয়া-ফরাক্কা বাদশাহি সড়কে দীর্ঘক্ষণ যান চলাচল বন্ধ ছিল। জেলা জুড়ে এক হাজারেরও বেশি বাড়িঘর ভেঙে পড়েছে। কাটোয়া-আজিমগঞ্জ শাখায় কাজিপাড়া হল্টে রেললাইনে গাছ ভেঙে পড়ে। ওই লাইনে সকাল ৮.১০ থেকে ঘণ্টা দু’য়েক ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। মালদহ-হাওড়া ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস-সহ আরও তিনটি লোকাল ট্রেন দেরিতে চলেছে।

এ দিনের ঝড়ে তেহট্ট মহকুমার বেশ কিছু জায়গায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ দিন সকালে খেতে গিয়েছিলেন হোগলবেড়িয়ার মুক্তদহের কার্তিক অধিকারী। টিনের চাল ও পাটকাঠির বেড়ার ঘরে ছিলেন তাঁর স্ত্রী ও ছোট দুই ছেলে। কার্তিকের স্ত্রী সুজাতা বলছেন, “ঝড়ে ঘরটাই তুলে পাশের উঠোনে ফেলে দিল। ঘরের সব উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে। মাথা গোঁজার জায়গাটুকু নেই।”

এ দিনের ঝড়ে গাছ ভেঙে পড়ে পলাশি-বেতাই ও করিমপুর-কৃষ্ণনগর রুটের যান চলাচল বন্ধ ছিল। বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় সন্ধ্যা পর্যন্ত লোডশেডিং ছিল। তেহট্টের মহকুমাশাসক সুধীর কোন্তম জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রিপল ও ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Thunderstorm Rain Lightning
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE